নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনায় সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হলেও দেশে এক বছরে ১১ হাজার ৬৪৭ জন কোটিপতি লোকের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছে ৩৮২ জন। যেখানে মানুষের স্বাভাবিক জীবন চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে এতো কোটিপতি বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার মহামারি চলাকালে গত এক বছরে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজারেরও অধিক, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি।
গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২, যার মধ্যে ৭২ হাজার ৭৮০ জন বা ৭৭ শতাংশই বেড়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরে। কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি সমাজে আয়বৈষম্য বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
করোনায় কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এগুলো হলো- করোনায় বিভিন্ন ছাড়ের কারণে অনেক খাতের ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করেছেন এবং লাভের টাকা আমানত হিসেবে ব্যাংকে রেখেছেন। আবার এই সময়ে ধনী ও সচ্ছল পরিবারের দেশে-বিদেশে ভ্রমণসহ ভোগবিলাস প্রায় বন্ধ রয়েছে। মধ্যবিত্তরা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা ভেবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ে মনোযোগী হয়েছেন। এ ছাড়া করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ঋণের একটি অংশ সুবিধাভোগীরা ব্যবসায় না খাটিয়ে আমানত হিসেবে ব্যাংকে রাখতে পারেন বলেও আশঙ্কা তাঁদের। সব মিলে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনার সময় এত বেশি কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যাঁরা নতুন করে কোটিপতি হয়েছেন তাঁরা হয়তো আগে থেকেই স্বাবলম্বী ও ব্যবসায়ী দিক থেকেও প্রতিষ্ঠিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২ জন। ফলে করোনার গত এক বছরে দেশে নতুন কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছে ৩৮২ জন।
আর স্বাভাবিক সময়ে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছিল মাত্র ছয় হাজার ৩৪৯ জন। আর ২০২০ সালের পুরো সময়ে বেড়েছিল এক হাজার ৫১ জন। এর মানে করোনাকালেই কোটিপতি আমানতকারীর হিসাবের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ২০০৯ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ হাজার ৪৯২ জন। এ হিসাবে গত ১২ বছরে দেশে নতুন কোটিপতি বেড়েছে ৭২ হাজার ৭৮০ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, গত মার্চ শেষে দেশে মোট আমানত হিসাব দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৭টি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
সান নিউজ/এফএআর
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            