হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো: দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলাজুড়ে। এতে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল এখন পুরোপুরি সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি
রংপুর নগরীসহ জেলার ৮ উপজেলা ও এ অঞ্চলের ৫ জেলার বিভিন্নস্থানে ফসলের মাঠ ফেটে যেতে শুরু করেছে। অপরিকল্পিত সেচযন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকদের বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে।
এছাড়াও ভূগর্ভের পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে। ফলে খরার ঝুঁকিতে পড়েছে রংপুর অঞ্চল- এমনটাই মনে করছেন কৃষি বিশ্লেষকরা। এমন পরিস্থিতিতে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর তামপাট, মাহিগঞ্জ, মর্ডাণ, দর্শনা, সাতমাথা, কেরানিরহাট, তপোধন, বাহার কাছনাসহ জেলার মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, কাউনিয়া, হারাগাছ, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া এবং লালমনিরহাটের আদিতমারি, ভাদাই, বড়কমলাবাড়ি, ভেলাবাড়ি, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, বিন্দ্যানন্দ, চাকিরপশার, নাজিমখান, উলিপুরের হাতিয়া, দলদলিয়াসহ রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। তবে বর্তমানে বোরো ধান চাষের মৌসুম চলছে।
আরও পড়ুন: ট্রেনে ছাড় প্রত্যাহার, বাড়ছে ভাড়া
কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, এবার আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের জমি সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে।
পানির অভাবে অনেক স্থানে ফসলের মাঠ ফেটে যেতে শুরু করেছে। বাড়তি খরচও কয়েকগুণ বেড়েছে। তারপরও তারা ফসল রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এমন পরিস্থিতিতে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
রংপুর নগরীর তামপাট এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম ও ইছার আলী মন্ডল বলেন, বোরোর চাষ আমাদের জন্য লাভজনক। কিন্তু সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। খরচও বেড়েছে। উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা, জানি না।
আরও পড়ুন: আ’লীগের শান্তি সমাবেশ শুক্রবার
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার এলাকার কৃষক ইসা মিয়া ও বিদ্যানন্দ রতিগ্রাম এলাকার কৃষক আমজাদ হেসেন বলেন, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন হয় তখন কোনো বৃষ্টি নেই। সময় মতো বোরো ধানের জমিতে পানি দিতে না পারায় এবার ফসল ভালো হবে না। বৈশাখ মাসে বৃষ্টি নেই এটা ভাবতেই পারছি না।
কৃষি বিশ্লেষকরা জানান, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বোরোসহ অন্যান্য চাষবাদ সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলায় কয়েক লাখ সেচযন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভুগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বেড়েই চলছে।
রংপুর অঞ্চলে কয়েক লাখ সেচযন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে কৃষিজ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। সামনে খরার ঝুঁকিতে পড়তে পারে রংপুর অঞ্চল। চাষাবাদে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কাও দেখছেন তারা।
আরও পড়ুন: বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
রংপুর অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অন্য সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কিছু বৃষ্টি হলেও গত সাড়ে ৫ মাসের মধ্যে শুধু মার্চে বৃষ্টি হয়েছে ৯৮ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। কবে নাগাদ বৃষ্টিপাত হবে তাও বলা যাচ্ছে না।
এদিকে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের জনজীবন। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বেশিরভাগ এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল, অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বাড়ছে। যার মধ্যে ডায়রিয়া, হাঁপানি, জ্বর-সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন রোগের মাত্রা বাড়ছে। প্রাণিকুলও অস্বস্তিতে রয়েছে।
সান নিউজ/এনজে