নিজস্ব প্রতিবেদক: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় দেড় বছর ধরে সংশোধন কেন্দ্রে আটক কলেজছাত্রী দীপ্তি রানী দাস জামিন পেয়েছেন। দিনাজপুরের পার্বতীপুর সরকারি কলেজের মানবিক শাখার ছাত্রী দীপ্তি।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এ রায় দেন বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চ্যুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
হাই কোর্টে দীপ্তির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও মো. আসাদুজ্জামান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনিসুল হাসান ও মো. শাহিনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
এর আগে বিচারিক আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে উচ্চ আদালতে আসেন দীপ্তির আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন: নিউজরুমে আত্মহত্যা করলেন সাংবাদিক
আইনজীবী মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, আপিলকারী মাইনর গার্ল (অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে) এবং দীর্ঘদিন ধরে সংশোধন কেন্দ্রে আছে, এ বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে হাই কোর্ট জামিন মঞ্জুর করেছে।
এখন দীপ্তির মুক্তিতে আর বাধা নেই জানিয়ে জেড আই পান্না বলেন, শিশু আইন একটি প্রিন্সিপাল অ্যাক্ট। এই আইন বলছে, শিশু কোনো অপরাধ করতে পারে না। তাই তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগই আনা হোক না কেন, সে জামিন পেতে পারে।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে দেওয়া একটি ছবিতে কোরআন অবমাননা হয়েছে অভিযোগ করে ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট দিনাজপুরের পার্বতীপুরের ১৭ বছর বয়সী দীপ্তি রানীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি রাজশাহীর একটি সংশোধন কেন্দ্রে আছেন।
গ্রেপ্তারের পর নিম্ন আদালতে তিনবার তার জামিন আবেদন খারিজ করা হয়। পরে গত বছর ১১ মে হাই কোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করে রুলসহ আদেশ দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সেই আদেশ স্থগিত করে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ। সেই রুলের শুনানি শেষে হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার দীপ্তিকে জামিন দিয়েছে বলে আইনজীবী শাহিনুজ্জামান।
আরও পড়ুন: ভারতীয় নাগরিকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন
২০২০ সালের আগস্টে দীপ্তি পার্বতীপুর সরকারি কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আটক হওয়ার পর তার পড়ালেখাও থেমে যায়।
বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইলেও পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মানবিকে ভর্তি হওয়া দীপ্তি রানী ছবি আঁকতে এবং গল্প লিখতে ভালোবাসেন। আইন ও সালিস কেন্দ্র দীপ্তিকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে।
দীপ্তির মুক্তির দাবি জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত নভেম্বরে এক বিবৃতিতে বলেছিল, কেবলমাত্র ফেসবুক পোস্টের কারণে একটি শিশুর বিকাশের সময়টিতে সাজা দিয়ে আটকে রাখায় উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত নিবর্তনমূলক আইন কাউকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে কতটা কার্যকর, এখানে সেটাই দেখা যাচ্ছে।
সাননিউজ/এমআরএস