নিজস্ব প্রতিবেদক : অনেক আগ থেকেই বেহাল অবস্থা ছিল দেশের পুঁজিবাজারে,সূচকের পতন অব্যাহত থাকায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। তারমধ্যে বৈশ্বিক মহামারী করোনার আঘাতে লন্ডভন্ড পুঁজিবাজার। একসময় ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে গিয়ে ঠেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
তবে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সাধারণ ছুটি শেষে লেনদেন শুরু হলে প্রাণ ফিরতে শুরু করে পুঁজিবাজারে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ মাসে সূচকে ১ হাজার ৬১৪ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার।
আড়াই বছর আগেও পুঁজিবাজারের সূচক ৬ হাজারের ওপরে ছিল। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ হাজার ৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল ডিএসইএক্স। এর পর কিছু কিছু সময় উত্থান হলেও সার্বিকভাবে নিম্নমুখী ছিল সূচক। এ বছরের ১৮ মার্চ সূচক ৩ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে নেমে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। বেড়ে যায় শেয়ার বিক্রির চাপ।
এ অবস্থায় সূচকের পতন রোধ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হস্তক্ষেপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ফলে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের নিচে সূচকের পতন হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে ২৫ মার্চের পর থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ ছিল পুঁজিবাজারের লেনদেন। এ সময়ে বিএসইসির শীর্ষ নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসে। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন যোগ দেয়ার পর এ বছরের ৩১ মে পুঁজিবাজারে আবারও লেনদেন শুরু হয়।সেদিন ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে। এর পর থেকে মাঝে মধ্যে মূল্যে সংশোধন হলে সার্বিক ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যায় পুঁজিবাজারে।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) সর্বশেষ লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স ৫ হাজার ২১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। গত ছয় মাসে সূচকে যোগ হয়েছে ১ হাজার ৬১৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি এ সময়ে বাজার মূলধনও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ ছয় মাসে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১১ কোটি টাকার বাজার মূলধন বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিএসইসির নতুন কমিশন নেতৃত্বে আসার পর পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারী বান্ধব বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি অনিয়মের বিরুদ্ধেও কঠোর ভূমিকায় দেখা গেছে বিএসইসিকে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে আস্থা তৈরি হয়েছে। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, যার সুবিধা পেয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো।
বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার জন্য আর্থিক প্রণোদনার পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে সামনের দিনগুলোতেও করোনার বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল জোগান পাবে কোম্পানিগুলো। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ একগুচ্ছ কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।
এদিকে করোনার কারণে সারা বিশ্বেই অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা চলছে। কমে গেছে ব্যাংকের সুদহার। এতে স্বাভাবিকভাবেই বেশি রিটার্নের আশায় পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশ্বের প্রধান পুঁজিবাজারগুলোতে করোনাকালীন সময়েও ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে। ব্যতিক্রম ছিল না দেশের পুঁজিবাজারও।
বর্তমানে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ব্যাংক সুদেরও আরও কম রিটার্ন আসছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের। এতে তুলনামূলক বেশি রিটার্নের জন্য পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ রিটার্ন এসেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।
করোনার মধ্যেও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে কমিশন। দেশের পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখিতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম বলেন, আস্থা, নির্ভরতা, সুশাসন, পরিবেশ ও রিটার্ন এসব কারণেই পুঁজিবাজারে গতিশীলতা দেখা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা আগামীর পুঁজিবাজার বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আমাদের শক্তির মূল উৎস। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের মূলধন ৪ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এটি কমপক্ষে ১৫ লাখ কোটি টাকা হওয়ার কথা ছিল। আমাদের পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা প্রচুর।
এজন্য আমরা সবার আগে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছি। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়লে তখন আমরা বন্ড, ট্রেজারি বিল, সুকুকের মতো নতুন পণ্য চালু করতে পারব। তাছাড়া তখন বাজারের বাড়তি লেনদেনের চাপ সামলানোর সক্ষমতাও তৈরি হবে।
সান নিউজ/এসএ