অস্ত্রোপচার শেষে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে ইউএনও
জাতীয়

অস্ত্রোপচার শেষে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে অস্ত্রোপচার শেষে তাকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় তার ভাইয়ের করা মামলার প্রধান আসামিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, প্রধান আসামি আসাদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশ বলছে, আসাদুলই ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিলেন।

অন্যদিকে হামলার ঘটনায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথার জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে অস্ত্রোপচার শেষে জানান হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরোসার্জন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ইট উইল টেক টাইম। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আমরা তার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। আমরা আশাবাদী। তবে এখনই ক্লিয়ারলি আমরা বলতে পারবো না যে, রোগী ভালো হয়ে যাবেন। এটি হেড ইনজুরির বিষয়, তার মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং ব্রেনে আঘাত লেগেছে। ব্রেনের ওপরের চাপটা আমরা রিলিফ করেছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’

তিনি বলেন, ‘ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ডানপাশটা অবশ রয়েছে, প্যারালাইজড। আশা করি, সেটাও সচল হয়ে যাবে। তবে কিছুদিন সময় লাগবে।’

হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, ‘ইউএনও ওয়াহিদার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫ মিনিটের দিকে। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যই এতে অংশ নেন। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আগের চেয়ে তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলা যায়। তবে তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন। তার দেহের একপাশ অবশ হয়ে আছে। তবে আল্লাহ তাআলা তাকে সুস্থ করলে সেটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ’

বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলীর ওপর হামলা চালান দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে ইউএনও ও তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেলে ইউএনওর অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আনা হয়।

রাত ৯টার দিকে তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এর আগে তার সিটিস্ক্যান করা হয়। প্রেসার চেক করে, অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। তারা জানান, দুর্বৃত্তের হামলায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথার বামপাশের দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথার কিছু অংশ ভেঙে ব্রেনে চাপ সৃষ্টি করেছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি অপসারণ করলে অবস্থার উন্নতি হবে, এমন আশা থেকে তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অধ্যাপক ডা. বদরুল আরও বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের সময় তার মাথায় দেখা যায়, আট থেকে নয়টি আঘাতের চিহ্ন। সেগুলো পরিষ্কার করে সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল, সেগুলোও পরিষ্কার করা হয়েছে।’

নিউরোসার্জন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অস্ত্রোপচারে সোয়া দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। ওয়াহিদা খানমের মাথায় আঘাতের কারণে খুলির হাড় ভেঙে সেটা মস্তিষ্কে ঢুকে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি বের করা হয়েছে। ইউএনও ওয়াহিদাকে যারা আঘাত করেছেন, তারা মনে করেছিলেন, তার মৃত্যু হয়েছে।’

‘ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় ভাঙা হাড়ের সাত-আটটি টুকরো ছিল। সেগুলো আমরা জোড়া দিয়েছি। জোড়া দিয়ে হাড়গুলোকে জায়গামতো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে আরও ছোট ছোট কাটা ছিলো, সেগুলোও জোড়া দিয়েছি।’

ডা. বদরুলও জানান, ‘লোহা জাতীয় কোনো জিনিস দিয়ে ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়েছে। যারা আঘাত করেছে তারা মনে করেছেন তার মৃত্যু হয়েছে। ওয়াহিদাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ আঘাতগুলো করা হয়েছে।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টার দিকে হাকিমপুর থানার হিলির কালিগঞ্জ এলাকায় তার বোনের বাড়ি থেকে হামলাকারী আসাদুলকে যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ও পুলিশ। তিনি ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুরের আমজাদ হোসেনের ছেলে। আসাদুলই ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। অন্য এক অভিযানে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করেন র‍্যাব সদস্যরা। পরে তাদের র‍্যাব-১৩ এর সদর দপ্তর রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াহিদা খানমের ভাই ঘোড়াঘাট থানায় হামলার বিষয়ে মামলা করেন।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সালেহ মো. মাহফুজুল হক জানান, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন। কমিটির অন্য দুইজন সদস্য হলেন বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির একজন প্রতিনিধি ও দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আসিফ আহমেদ।

সান নিউজ/ এআর | Sun News

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শিবগঞ্জে রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসীর

শিবগঞ্জের শাহাবাজপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ি হতে বিনোদপু...

সাঁওতাল কৃষক বিদ্রোহ দিবসে দিনাজপুরে শপথ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

সোমবার (৩০ জুন) দিনাজপুরের লোকভবন টাউন হল প্রাঙ্গণে ঐতিহাসিক সাঁওতাল কৃষক বিদ...

পদ্মা-যমুনায় ইলিশের আকাল, জেলেরা ফিরছে খালি হাতে

দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি থাকলেও গোয়ালন্দের যমুনা ও পদ্মা নদীর মোহনায় জেলের জালে দে...

বগুড়ায় পেটে লাথি মেরে বাচ্চা মেরে ফেলার অভিযোগ

বগুড়ায় যৌতুকের দাবিতে এক গর্ভবতী গৃহবধুকে নির্যাতন সহ পেটে লাথি মেরে বাচ্চা...

মুরাদনগরকাণ্ড, মামলা তুলে নিতে চান ভুক্তভোগী

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে চাঞ্চল্যকর কোন কিছু ভাইরাল হতে সময় লাগে না।...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা