জাহিদ রাকিব: নগরীতে চলাচলকারী ঊনিশ সালের আগের বাস তুলে দেয়া হবে-এই সংবাদে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাস মালিকরা। রাজধানীতে প্রতিদিন চলে পাঁচ থেকে সাতহাজার বাস। এরমধ্যে পঁচানব্বই ভাগ গাড়িই উল্লিখিত সময়ের আগের। তাই হঠাৎ গাড়িগুলো নগরীতে চলতে না দিলে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বেন মালিকরা।
গাড়িগুলো তারা কি করবেন, এই চিন্তায় এখন তাদের ঘুম হারাম। তাদের রুটিরুজির পথও বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং তারা কি ক্ষতিপূরণ পাবেন, এ নিয়ে সরকারের কোনো দিকনির্দেশনাও নেই। এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও নীরব। তাদের ভাবখানা এমন-এ নিয়ে কথা বললে হর্তাকর্তাদের গদি উল্টে যাবে। তাই তারা বোবা হয়ে গেছেন। তাদের এই আচরণে সাধারণ মালিকরা চরম ক্ষুব্ধ।
সরকারের নতুন এই উদ্যোগ সম্পর্কে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, সরকার এই রুটের গাড়িগুলোকে ভিন্ন রুটে দিয়ে দেবে। বাদ দেয়া গাড়িগুলোর জন্য টাকাও পাবেন মালিকরা। প্রতি গাড়িতে কত টাকা মালিকরা পাবেন, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
এদিকে সাধারণ মালিকরা বলেছেন, খন্দকার এনায়েত উল্যাহর কথা ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই নয়। তিনি মালিকদের স্বার্থের কথা একটুও চিন্তু করেন নি। তাই মালিকদের ক্ষতির বিষয়ে রোড রেশনালাইজেশন কমিটির কাছে তিনি কোনো দাবি করেন নি।
পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা আনার কথা বলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন ১২০ বাস দিয়ে 'ঢাকা নগর পরিবহন' নামে শুরু হচ্ছে বাস রুট রেশনাইজেশনের নতুন যাত্রা। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে এই সার্ভিস। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রুটটিতে চলাচলকারী আগের বাসগুলো তুলে দেয়া হবে। ধাপে ধাপে নগরীর পুরো পরিবহনব্যবস্থা এই প্রকল্পের আওতায় যাবে। পাঁচ থেকে সাতটি কোম্পানির আওতায় চলবে রাজধানীর সব বাস।
এই উদ্যোগে আতঙ্ক বিরাজ করছে পরিবহনখাতে। মালিকরা বলছেন, তাদের সাথে আলোচনা ছাড়াই সরকারের এমন সিদ্ধান্ত এই খাতকে অশান্ত করে তুলবে।
রুটটিতে এখন চলছে তিন কোম্পানির বাস। কোম্পানিগুলোতে কারও একটি, কারও দুইটি এবং কারও চার-পাঁচটি করে বাস আছে। মালিকের সংখ্যা ৭০/৮০ জন। তারা বলছেন, সরকার যে প্রকল্প নিয়েছে, একে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত তারা মানবেন না। তারা বলেন, আমাদের বাসগুলোর বয়স ২ থেকে ৩ বছর। এই বাসগুলো পুরাতন বলে যদি সরকার বন্ধ করে দেয় তাহলে তো আমরা বাস মালিকরা রাস্তায় বসে যাবো।
রাজধানীর ঘাটারচর থেকে আবদুল্লাহপুর রুটের পরিস্থান পরিবহনের এক মালিক বলেন, আমার দুটি গাড়ি আছে। গত দুই বছর আগে গ্রামের সব সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংক লোন নিয়ে রাস্তায় গাড়ি দুটি নামিয়েছি। গাড়ি কেনার পর থেকে শুরু হয় করোনা। ফলে আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন শেষে যখন একটু স্বাভাবিক জীবনে ফেরা শুরু হয়েছে। ঠিক সেই মূহুর্তে সকারের এমন সিদ্ধান্ত এলো। এখন আমি চারদিকে অন্ধকার দেখছি। ঋণের টাকা আমরা শোধ করবো কিভাবে? সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমার মতো অনেক মালিক নিঃস্ব হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের গাড়ি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় বসে যাবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রজাপতি পরিবহনের এক মালিক বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর প্রবাস জীবন শেষ করে জমানো টাকায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে দুটি গাড়ি কিনি। করোনায় দীর্ঘ লকডাউনে এমনই গাড়ি ব্যবসায় আমরা এখন ঋণগ্রস্ত। লকডাউন শেষে আমরা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করছি, তখন সরকারের এমন হটকারী সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। করোনায় এমনিতে আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তার ওপর যদি সরকার গাড়ি বন্ধ করে দেয়. তাহলে আমরা এটা মানবো না।
তিনি আরও বলেন, গাড়ি বন্ধ হওয়ার খবরে আমাদের মতো ছোট ছোট মালিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গাড়ির এই সামান্য আয়ে আমাদের পরিবার চলে, কিন্তু সরকার যদি আমাদের এই গাড়ি বন্ধ করে দেয়, আমরা কোথায় যাবো? আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে গাড়ি বন্ধ করে দিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক মালিক বলেন, প্রতিটি গাড়ির মেয়াদ থাকে ২০ বছর। সরকার কোন বিবেচনায় তিনবছর আগের ২০১৮ সালের মডেলের বাস তুলে দিচ্ছে। পরিবহনখাত নিয়ে বিরাট ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা ব্যাংক ঋণে গাড়ি কিনেছি। এখন যদি সরকার বাসগুলো বাতিল করে দেয়ে, আমরা ব্যাংকের ঋণ শোধ করবো কিভাবে? এটা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই।
রজনীগন্ধা পরিবহনের এক মালিক বলেন, এই রুটে প্রায় সাড়ে তিনশর মতো বাস চলে, তথাপি অফিস আওয়ারে রোডে দাঁড়িয়ে থাকে শত শত যাত্রী। এখন মাত্র ১২০ গাড়ি চললে কেউ অফিসে সময়মতো পৌঁছাতে পারবে না।
ঘাটারচর বাস স্ট্যান্ডে কথা হয় বেশ কয়েকজন বাস ড্রাইভার-হেলপারদের সাথে। তারা বলেন, আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বাস বন্ধ করে দিক। তারা বলেন, এই কাজ ছাড়া আমরা অন্যকিছু শিখি নি। বাস বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বেকার হয়ে যাবো। ড্রাইভার-হেলপাররপ মাদক, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে।
সাননিউজ/ জেআই
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            