জাতীয়

হেফাজত‌কে প্রশাস‌নিকভা‌বেই মোকা‌বেলা করবে আ’লীগ

মোহাম্মদ রু‌বেল: রাজনীতি‌র মা‌ঠে কমন শব্দ শত্রু যখন বন্ধু, বন্ধু তখন শক্র। তারই চিত্র এখন আওয়ামী লীগ-হেফাজত। দেশের রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এখন তা‌দের এ সম্পর্ক। যে হেফাজতকে একসময় নিয়ন্ত্রণে রাখ‌তে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি এবং তাদের সমন্বিত শিক্ষাবোর্ড করে দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকার। এর জবা‌বে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা সমাবেশ করে নির্বাচন পূর্ব আওয়ামী লীগ‌কে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয় হেফাজত। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কওমীজননী উপাদিও দেয় হেফাজত। সেই ইতিবাচক অতীত ছাপিয়ে এখন সে সম্পর্ক তিক্ততায় ষোল আনায় প‌রিপূর্ণ। সাস্প্রতিক সম‌য়ে হেফাজ‌তের সন্ত্রা‌সি তান্ড‌বই এর মূল কারণ।

এ অবস্থায় আওয়ামী লী‌গের অবস্থান কি? এ বিষ‌য়ে আওয়ামী লী‌গের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাতের স‌ঙ্গে সান‌নিউজ অনলাইন পোর্টালের আলোচনায় উঠে এসে‌ছে, হেফাজতকে এখন আর আস্থায় রাখ‌তে পারছে না ক্ষমতাসীন সরকার। সাফকথা আর কোন ছাড় নয় এ সংগঠন‌কে। তাই অতীতের সমঝোতার কৌশল থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগ ও তার সরকার হেফাজ‌তকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে প্রশাস‌নিকভা‌বেই মোকা‌বেলা করার কৌশল নিয়েছে। ভ‌বিষ‌্যতেও তাই করা হ‌বে। এ প্রেক্ষি‌তেই হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার চলমান গ্রেফতার অভিযান ও নজরদা‌রি অব্যাহত থাকবে।

একইস‌ঙ্গে হেফাজতে ইসলামের বিষয়ে সরকার ও দলের চূড়ান্ত অবস্থান কী হবে সেই সিদ্ধান্তের জন্য সবার দৃ‌ষ্টি এখন প্রধানমন্ত্রীর দি‌কে, বল‌ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা আরও বল‌ছেন, সংগঠনটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না বানিয়ে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের হেফাজতের উগ্রতা থেকে রক্ষা করার কথাও ভাব‌ছে সরকার।
এ ছাড়া প্রশাসনিকভাবে হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে কয়েকজন মন্ত্রী গণমাধ‌্যম‌কেও জা‌নি‌য়ে‌ছেন। সহিংসতায় একাধিক শক্তি পেছন থেকে ইন্ধন জু‌গি‌য়ে‌ছে। এর সঙ্গে বিদেশি শক্তিও যুক্ত থাকতে পারে বলে সরকারের বিশ্বাস।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও ৩০০ বিধিতে দেয়া বিবৃতিতে তাণ্ডবে জড়িতদের চিহ্নিত ক‌রে আইনানুগভা‌বে শা‌স্তি নি‌শ্চিত করার কথা জানিয়েছেন।
সরকার. প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ যখন হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলছে, তখন প্রশ্ন উঠেছে সরকারের সঙ্গে হেফাজ‌তের সমঝোতায় দৌড়ঝাঁপে। দু'পক্ষের সম্পর্কের অতীত স‌ন্ধি নি‌য়েও নতুন করে আলোচনা আসছে। আঁতাত নাকি অন্য কিছু? অপর‌দি‌কে কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টি বিলু‌প্তি ঘোষণা ক‌রে রা‌তের আধা‌রে ৫ সদ‌স্যের নতুন ক‌মি‌টিও ঘোষণা ক‌রে‌ছে। এনি‌য়েও প্রশ্ন উঠে‌ছে সবই কি হেফাজ‌তের আত্মরক্ষার কৌশল? এরইম‌ধ্যে গতকাল সোমবার হেফাজতের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরু‌দ্ধে দু‌টি মামলাও হ‌য়ে‌ছে। এর আগে মামুনুলহকসহ অনেক শীর্ষনেতা‌কে গ্রেফতারও করা হ‌য়। এছাড়া বাবুনগরীসহ ২৪ শীর্ষ নেতা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জের ৩০টি মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কঠোর অবস্থানের বার্তাই দি‌য়ে‌ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ অনলাইন নিউজ পোর্টাল‌ সান‌নিউজকে বলেন, হেফাজতের দা‌বি অনুযা‌য়ি তারা কোন রাজনৈ‌তিক সংগঠন নয়। আমরাও বল‌ছি সম্প্রতি হেফাজত যে তান্ডব চা‌লি‌য়েছে তা কোন রাজ‌নৈ‌তিক কর্মকান্ড ছিলনা। তাদের কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক হলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার প্রশ্ন আসতো। তাদের তো কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। তারা যেটা করছে পুরোটাই ছি‌লো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। তারা সন্ত্রাসী ব‌লেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ক‌রে‌ছে। তাই সন্ত্রাসী‌দের রাজ‌নৈ‌তিকভা‌বে মোকা‌বেলা করা চ‌লেনা। সন্ত্রসী‌দের প্রশাসনিকভা‌বেই মোকা‌বেলা কর‌তে হয়। তাই মামলা একটা নয় ধর্মের না‌মে অধর্ম ক‌রে যারা নাশকতা ও জ্বালাও পোড়াও ক‌রে‌ছে এবং এস‌বের স‌ঙ্গে জড়িত‌দেরসহ নির্দেশ দাতা‌দের বিরুদ্ধে মামলা হবে৷ প্রত্যেক‌কে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে৷ মামলাই শেষ নয়, আইনের আওতায় এনে এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে৷

আওয়ামী লী‌গের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা হেফাজতের নতুন ক‌মি‌টিকে পাত্তা না দিয়ে বলছেন, যে লাউ সেই কদু। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে ভোররাতে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণাকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার' চেষ্টা বল‌ছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তি‌নি ব‌লেন, যখনই মামুনুল হক রিমান্ডে মুখ খুলতে শুরু করেছেন, তখনই হেফাজত ক‌মি‌টি ভে‌ঙ্গে দেয়াটা নি‌জেদের রক্ষায়েএকটি অপ‌রিক্ক চেষ্টা। ধর্মের নামে নাশকতা চালানো এ সংগঠনকে আর সুযোগ দেয়া যাবে না।

বিএনপি, জামায়াত আর হেফাজত একেক সময় একেক রূপ’ নেয়। হেফাজত নেতা জুনাইদ বাবুনগরী এবং মামুনুল হকদের নতুন লেবাসেই তা প্রকাশ পেয়েছে ব‌লেন তি‌নি।

দল‌টির কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টির সদস‌্য মা‌রুফা আক্তার প‌পি ব‌লেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর স‌ঙ্গে হেফাজত নেতা‌দের স‌ঙ্গে বৈঠক, তারপর কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টি বিলু‌প্তির মধ‌্যদি‌য়ে নতুন ক‌মি‌টি ঘোষণা এসবই সবই হেফাজ‌তের আত্মরক্ষার কৌশল।

আওয়ামী লী‌গের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও হেফাজ‌তের দি‌কে স‌ন্দে‌হের তীর ছু‌ড়ে বল‌ছেন ক‌মি‌টি বিলুপ্ত হ‌লেই কি স‌হিংসতার তান্ডব ক‌মে যা‌বে?

অপর‌দি‌কে রাজ‌নৈ‌তিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব ক্ষেত্রেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়েছে। সে কারণে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতও বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে মাঠে নামার সাহস পাচ্ছে। যদিও হেফাজত নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দাবি করে থাকে। কিন্তু ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতে রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউ‌দ্দিন না‌ছিম সাননিউজকে ব‌লেন,পু‌লি‌শের তদ‌ন্তে বের হ‌য়ে এসে‌ছে হেফাজতের বর্তমান নেতাদের মধ্যে ৩০ ভাগ জামায়াত সংশ্লিষ্ট। আর ৩০ ভাগ আফগান মুজাহিদ এবং ৪০ ভাগ সত্যিকারের ধর্মীয় রাজনীতি করেন। এদের সং‌মিশ্রণে হেফাজত যে ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে। শিশুদের তারা ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করছে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ।
তাদের এত সহজে এদের ছাড় দেবো, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আইন আমরা নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাই না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের কাজ করবে। এদেরকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আমরা মানুষকে সজাগ রাখার কাজ করছি।

তি‌নি ব‌লেন,সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় বাকিরাও গ্রেফতারের মুখোমুখি হবেন।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সান‌নিউজ‌কে বলেন, হেফাজত আমা‌দের কোন রাজ‌নৈ‌তিক প্রতিপক্ষ নয়। তাই সাম্প্রতিক সম‌য়ে তা‌দের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রশাসনই দেখ‌ছে। আমরা চাই তা‌দের আইনানুগভা‌বে মোকা‌বেলা কর‌তে। তাদের কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিল না। এ জনগোষ্ঠীকে সম্মানিত করা, চাকরির সুবিধা ও রাষ্ট্রের মূলধারায় কাজ করার সুযোগ ক‌রে দেয়াই মূল লক্ষ ছিল আওয়ামী লী‌গের।
তিনি বলেন, সাস্প্রতিক ঘটনায় বিএন‌পি ও জামায়াতের যোগ সূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ‌্য, বাংলা‌দে‌শে মোদির সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রতিবাদের জের ধরে ঢাকায় ব্যাপকভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরবর্ততী‌তে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভের সময় চারজন নিহতের ঘটনাও ঘটে। এর প‌রের দুদিন সহিংসতা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও একাধিক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। হামলা ও ভাঙচুর করা হয় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এরই মধ্যে অন্তত ১৬ জন হেফাজত নেতাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে তাণ্ডবের ঘটনায়ও অনেক হেফাজতে ইসলামের নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সেসব মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির নেতাদের।
সাননিউজ/এমআর/টিএস/

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জায়েদের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (১লা মে) বেশ কিছু খ...

বিরক্ত হয়েই শাকিবের পরিবার এই সিদ্ধান্ত 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে নতুন করে...

বজ্রপাতে প্রাণ গেল ২ জনের

জেলা প্রতিনিধি : রাঙামাটিতে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃ...

ঢাকায় ফিরল ৮ বাংলাদেশির লাশ  

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউ...

শনিবার খুলছে স্কুল-কলেজ, রোববার প্রাথমিক 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র রমজান, ঈ...

মিল্টনের সব অপকর্ম বের করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার&rsquo...

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল গ্রাম পুলিশের

জেলা প্রতিনিধি : শরীয়তপুরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবুল হোস...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা