নিজস্ব প্রতিবেদক: তেল পরিবহনে সময় এবং অর্থ বাঁচাতে ভারত থেকে ডিজেল আমদানীতে শুরু হয়েছে পাইপ লাইন নির্মানের কাজ। দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও সহজ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথভাবে পাইপলাইন নির্মাণের চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আনা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি চালু হলে সাশ্রয় হবে সরকারের কোটি কোটি টাকা। সেই সঙ্গে তেলের অপচয়ও কমবে।
চুক্তি অনুযায়ি, বাংলাদেশ শুধু মাত্র ভূমি অধিগ্রহণ কাজ করবে। বাকি পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করবে ভারত। ভারতীয় অনুদানে নির্মিত হবে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন। ভারতের মুরালিগড় থেকে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে আগে থেকেই। নির্মান করা হবে শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে ভারতের অংশে কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ অংশে কোনো কাজ শুরু হয়নি এখনও।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেডের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে ইন্দোবাংলা ফ্রেন্ডশীপ পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানির বিষয়ে গত ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল তারিখে বিপিসি ও এনআরএল-এর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পাইপ লাইন স্থাপন/নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত প্রিমিয়ামে (মার্কিন ডলার ৫ দশমিক ৫০/ব্যারেল) রেল ওয়াগনের মাধ্যমে পার্বতীপুর ডিপোতে ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে।
বর্তমানে আমদানি করা তেল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম ডিপোতে সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে কোস্টাল ট্যাংকে করে খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে আনা হয়। সেখানে আনলোড করে আবার রেলের ওয়াগনে আপলোড করে নিয়ে যাওয়া হয় পার্বর্তীপুরে। এই প্রক্রিয়ায়, পরিবহন জনিত সমস্যা, অতিরিক্ত সময় এবং অর্থের অপচয় হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়াগন স্বল্পতার কারণে প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রাম/দৌলতপুর ডিপো থেকে পার্বতীপুর ডিপো অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আনলে এই তিন প্রক্রিয়ার সাশ্রয় হবে। ফলে এনআরএল থেকে আমদনিকৃত ডিজেল দিয়ে পার্বতীপুর ডিপো অঞ্চলের চাহিদাপূরণসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করা সহজ হবে। পাইপের ব্যাস হবে ১০ ইঞ্চি।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবর্তীপুর উপজেলা অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপ লাইন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনটি জেলার ৯টি উপজেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ১২৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্দা, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা, দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর উপজেলা এবং নীলফামারী জেলার নীলফামারী ও সৈয়দপুর হয়ে পার্বতীপুর রেলওয়ে ডিপোতে নিয়ে আসা হবে।
প্রকল্প পরিচালক টিপু সুলতান বলেন, পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ১৮৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং ১২৬ একর জমি হুকুম দখল করা হয় ২ বছরের জন্য। পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য এই ১২৬ একর জমি ব্যবহার করা হবে এবং পাইপ স্থাপনের ২ বছর পর তা মালিকদের নিকট ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু হবে এবং ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ সমাপ্ত হবে। আশা করা যায় আগামী ২২ সালের জুলাই মাস থেকে পাইপ লাইনে তেল আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’