রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার পর কিছু সরকারি সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতায় জনমনে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সরকারের দুই উপদেষ্টাকে দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখারও ঘটনা ঘটে।
সোমবার রাত পৌনে ৩টায় স্থগিত করা হয় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা। এতে বিভ্রান্তিতে পড়া ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পর শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে পুলিশের বেষ্টনী ভেঙে ফটক টপকে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। ভাঙচুর চালান কয়েকটি গাড়িতে। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে সচিবালয় ছাড়া করলেও পরে সংঘর্ষ হয় জিপিও এলাকায়। এতে প্রশাসনের প্রাণ সচিবালয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়। দিনাজপুর, চট্টগ্রামেও শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।
স্কুলে প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ার পর আগুনে হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ নাম-পরিচয়ের তালিকা প্রকাশ করতে না পারায়, মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আগের রাত থেকেই গুজব ছড়ায়। কথিত প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে দাবি করা হয়, শত শত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
নিহত ২৫ জনের লাশ গতকাল পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে পরিবারের কাছে। আগুনে দগ্ধ বাকি ছয়জনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় মরদেহগুলো মর্গে রয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় উদ্ধারে। এর বাইরে কারও নিখোঁজ থাকার দাবি গতকাল রাত পর্যন্ত কোনো পরিবারের ছিল না।
যদিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে শত শত শিশুর লাশ গুমের প্রচারণা চলছে। তা খণ্ডন করে সরকারের দিক থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এবং হাসপাতালগুলো হতাহতের সংখ্যা জানিয়েছে। আইএসপিআর নিহতদের নাম, বয়স, পরিবারের ফোন নম্বরসহ একটি তালিকা দিয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতদের নাম, বয়স, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ পরিচয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
রাতভর সামাজিক মাধ্যমে লাশ গুমের গুজবের পর গতকাল সকাল থেকে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা হতাহতের ‘প্রকৃত সংখ্যা’ প্রকাশসহ ছয় দাবিতে আন্দোলনে নামে। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম স্কুলটিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুবার বের হওয়ার চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের বাধায় পারেননি। প্রায় ১০ ঘণ্টা আটকা থাকার পর তারা পুলিশের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন।
গত ২২ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মাইলস্টোন স্কুলের হতাহতদের জন্য জনসাধারণের কাছে সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে পোস্ট করা হয়। তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং সমালোচনার পর এ পোস্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। সরকারের কী হতাহত ২০০ মানুষকে সহায়তার সামর্থ্য নেই– এমন প্রশ্নও তোলা হয়।
তবে বেশি বিক্ষোভ হয়েছে মধ্যরাতে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে। মাইলস্টোনের প্রাণহানিতে গত ২২ জুলাই ছিল রাষ্ট্রীয় শোক। কিন্তু গত সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, জেলা-উপজেলায় প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাওয়ায়, তা ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা স্থগিত করা হবে না। তবে রাত পৌনে ৩টার দিকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুক পোস্টে পরীক্ষা স্থগিতের সরকারি সিদ্ধান্ত জানান। শিক্ষা বোর্ডগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত পেয়েছে মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে। যখন শিক্ষার্থীদের অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে রওনা হয়ে গেছেন। পরে তারাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন।
ঢাকা সিটি কলেজের পরীক্ষার্থী নাহিয়ান নাফিজ সমকালকে বলেন, যদি সোমবার সন্ধ্যায় সরকার পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানাত, তবে এত ভোগান্তি হতো না। এত ক্ষোভ বিক্ষোভ হতো না।
শুধু হতাহতের সংখ্যা নয়, সামাজিক মাধ্যমে একটি পক্ষ কদিন ধরেই গুজব ছড়াচ্ছে– এবার এইচএসসি পরীক্ষার খাতা কঠিন করে দেখা হবে। এসএসসির মতো এইচএসসিতে তাই পাস এবং জিপিএ ৫ কমবে। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাচ্ছেন।
সাননিউজ/এসএ