এডিস মশা (ছবি: প্রতীকী)
মতামত

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগত ত্রুটি সারাতে হবে আগে

ড. জি এম সাইফুর রহমান: কিউলেক্স মশার দাপট কমে এলেও নিয়মিত বিরতিতে আগাম বৃষ্টিপাত এডিস মশার প্রজননের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে, যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মৌসুমপূর্ব অগ্রিম কীটতাত্ত্বিক জরিপেও জানা গেছে। জরিপে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো কোনো মহলে প্রশ্ন থাকলেও ৪ শতাংশের ওপর বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার বিষয়টি খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ১ শতাংশকে মানদণ্ড ধরা হয়। সিঙ্গাপুরে তো ০.৫ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশা পেলেই মহামারি মোকাবিলা করতে হয়। আবার কোনো দেশে ব্রুটো ইনডেক্স ০.৫কেই মহাগুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে মশক নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ পরিচালনা করা হয়।

কিউবায় প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী পাওয়া যায় ১.৩-৪ ব্রুটো ইনডেক্সে। শ্রীলংকায় ডেঙ্গি রোগীর সঙ্গে ওইসব ইনডেক্সের তেমন কোনো সম্পর্কই তারা পায়নি।

আমরা ঢালাওভাবে ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই) ২০কে সতর্ক সংকেত বলে ধরে নিই। এ মানের নিচে এডিস মশার পরিমাণ থাকলে তেমন গুরুত্ব দিতে চাই না। কোনো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হাতে নিতে চাই না। অনেকে এটাকে আন্তর্জাতিক মান হিসাবে গণ্য করি। কিন্তু আসল বিষয়টি তা নয়, ওই মানটা এডিস মশাবাহিত ইয়োলো ফিভার নির্ধারণে পৌনে একশ বছর আগে ব্যবহৃত হয়েছিল।

এখন আর এর তেমন কার্যকারিতা নেই। কারণ ১০০ বাড়ির মধ্যে একটি বাড়িতে যদি ২০টি পানির পাত্রে মশার লার্ভা থাকে, তাহলে তার বিআই ২০।

আবার ১০০ বাড়ির মধ্যে ২০টি বাড়িতে যদি একটি করে পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তারও মান একই। তবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয় দুটির মধ্যে অনেক বড় তফাত রয়েছে। এক্ষেত্রে আরও একটি বড় দুর্বলতা হলো, পাত্রে একটি লার্ভা থাকলে তার যে গুরুত্ব, এক লাখ লার্ভা থাকলে একই গুরুত্ব। এক্ষেত্রে ইনডেক্সের কোনো নড়চড় হয় না বিধায় বিষয়টি বেশ ত্রুটিপূর্ণ।

তাই ইদানীং আরও অনেক ধরনের ইনডেক্সের ব্যবহার করা হয়, যদিও এর কোনোটিই এককভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তবে একাধিক ইনডেক্সের সমন্বয়ে সমস্যা নির্ধারণের অনেক কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে।

বাস্তবিক অর্থে এডিস মশাবাহিত রোগ বিস্তারের সঙ্গে জনসংখ্যার ঘনত্ব, নগরায়ণের প্রকৃতি, ভাইরাসের বর্তমান প্রবাহ, ভাইরাস প্রবাহের বিগত ইতিহাস, সাসেপ্টিবল মানুষের ঘনত্ব বা মানুষের দৈনন্দিন জীবনপ্রকৃতি, সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছেদের ধরন, বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা, ভূমি প্রকৃতি, আন্তঃনগর ও বৈদেশিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ধরন, গতি ও প্রকৃতি, জলবায়ুর প্রকৃতিসহ অনেক বিষয় জড়িত। তাই এসব বিষয় বিবেচনা করে কেবল মশক পপুলেশনের বাহ্যিক ইনডেক্সের দিকে নজর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া সাজালে সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তবে এটুকু বলা যায়, ইনডেক্স বেশি অর্থ মশা বেশি। কিন্তু আমাদের নগরগুলোতে নিজস্ব মশক জরিপ ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান না থাকায় কেবল এ ইনডেক্সের ওপর ভিত্তি করে কর্মসূচি পরিচালনা করায় মশক নিয়ন্ত্রণে তা উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় না। ফলে বছর বছর আমাদের ভেক্টরবাহিত রোগের মাশুল দিয়ে যেতে হচ্ছে। আর আগামী দিনে আরও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষমাণ। তবে সেটা কেবল ঢাকা শহরকেন্দ্রিক নয়, তা হবে দেশব্যাপী।

মালয়েশিয়া, শ্রীলংকাসহ অনেক দেশে ডেঙ্গি রোগী ও ভাইরাসবাহিত মশার মাইগ্রেশন বা স্থানান্তর ডেঙ্গি রোগী বৃদ্ধির জন্য অধিক দায়ী বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ডেঙ্গি মৌসুমের আগে থেকে করোনার কারণে ২০২০ সালে আমাদের দেশে সর্বাত্মক লকডাউনে মানুষের চলাচল বন্ধ বা সীমিত থাকায় আমরাও সারা দেশে হাজার দেড়েকের চেয়ে কম রোগী পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০২১ সালে সে পরিস্থিতি না থাকায় আমাদের প্রায় ২৬ হাজার মানুষ ডেঙ্গি রোগে আক্রান্ত হয়। সমতল ভূমির দেশ হওয়ায়, কোনো প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা (আন্তঃবিভাগীয় অঞ্চলে বিশাল এলাকাজুড়ে পাহাড়, বন বা সমুদ্র) না থাকায় এবং আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গি অধ্যুষিত দেশগুলোয় কর্মরত থাকায় তাদের নিয়মিত যাতায়াতের মাধ্যমে সারা দেশে এ ভাইরাস বিস্তারের খুবই উপযোগী পরিবেশ বিদ্যমান। সেজন্য বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ অপরিহার্য, যদি তা সংখ্যায় অল্পও থাকে। এমনকি ডেঙ্গি মৌসুমে রুটিনভিত্তিক সব যানবাহনেও এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।

মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশের প্রাথমিক সীমাবদ্ধতা হলো, কিউলেক্স মশার লার্ভা নিধনের জন্য নগরকর্তাদের হাতে কোনো না কোনো কীটনাশক থাকলেও এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে আপাতত উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো সমাধান নেই। নোভালিউরন নামে মশার অপরিণত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার যে দাওয়া দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অশেষ প্রচেষ্টায় রেজিস্ট্রেশন করা আছে, তার সরবরাহ খুবই অপ্রতুল এবং তার প্রয়োগও আমাদের পরিবেশে প্রচলিত নেই বললেই চলে। অতএব বিশেষজ্ঞ পরামর্শ হলো, জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ করে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করুন। নগরকর্তারাও বিরামহীন আহ্বান জানান জনগণকে এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য। জনগণেরও আগ্রহ আছে, কিন্তু তাদের হাতে কোনোরকম উপায়-উপকরণ না দিয়ে জনসম্পৃক্ততার কথা বলে মাঠ দাপিয়ে জনগণের ঘাড়ে দোষ চাপালে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনো উন্নতি হবে না। অধিকাংশ দেশে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক প্রয়োগ ও জনসম্পৃক্ততার সমন্বয় ঘটিয়ে বিষয়টির সমাধান করার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

সেজন্য তারা বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পৃক্ত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং তাদের হাতে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক উঠিয়ে দেয়। কীটতত্ত্ববিদদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিভিন্নমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে মশক নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। সে অনুযায়ী কিছু ফলাফলও তারা পায়। কিন্তু আমাদের না আছে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কর্মসূচি, না আছে যুবসমাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, আর না আছে বাসাবাড়ির দারোয়ান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক ও কমিউনিটিভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে জনগণকে সম্পৃক্তও করা যাচ্ছে না; আর যতটুকু হচ্ছে, তাতে লাভও হচ্ছে না। অন্যদিকে কার্যকর ও যুগোপযোগী কীটনাশকের কথা বিশেষজ্ঞ মহল দ্বারা বারবার উচ্চারিত হলেও তা কেউ আমলেও নিচ্ছে না বা তেমন উদ্যোগী হচ্ছে বলে মনে হয় না।

পরিবেশবান্ধব কীটনাশক সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালানো এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে ব্যবহার্য কীটনাশকের শুল্কহার ৯০ শতাংশ থেকে শূন্যের কোঠায় নামানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এসব কীটনাশক পরিবেশে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে না, ফলে সব মহল নিজ উদ্যোগে এগুলো সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে পারে, সেই সঙ্গে নগরকর্তাদের ওপর চাপও কমে।

এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশে সবচেয়ে বড় যে ত্রুটি দেখা যাচ্ছে, তা হচ্ছে পদ্ধতিগত ত্রুটি। এ মশা ও তাদের বাহিত রোগ ক্লাস্টার বা কলোনিকেন্দ্রিক। যেহেতু এ মশার উড়ার গতি কম, তারা ৫০-১৫০ মিটার পরিধিব্যাপী এলাকার মধ্যেই বিচরণ করে থাকে, সেহেতু মশক পপুলেশনের ঘনত্ব সেখানেই বাড়তে থাকে এবং এ কলোনি বা ক্লাস্টারে ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটলে ১০-১৪ দিনের ব্যবধানে সেখান থেকেই ক্রমান্বয়ে রোগী আসতে থাকে। এ অবস্থানকে অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার বলে। এ অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার যত দ্রুত কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, তত দ্রুত ডেঙ্গির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

আর সেজন্য এ কাজে যারা দায়িত্ববান, তাদের হালনাগাদ ডেটা থাকতে হবে যে, শহরে কতগুলো এডিস মশার ক্লাস্টার আছে, তার মধ্যে কতগুলো অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার বা রোগী উৎপাদনকারী জায়গা। এসব জায়গার প্রতি শ্যেনদৃষ্টি থাকতে হবে, তাহলেই অতিদ্রুত সামগ্রিক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। গত দু’বছর ধরে আমাদের কেউ কেউ এ কথাটি বলে যাচ্ছেন; কিন্তু যারা অপারেশনে আছেন, তাদের মাথায় কোনোভাবেই এ ক্লাস্টার পদ্ধতির আইডিয়াটা ঢোকানো যাচ্ছে না। এ পদ্ধতিতে সব জায়গায় কীটনাশক ছিটানোর প্রয়োজন পড়ে না। সমস্যাকেন্দ্রিক ছোট ছোট অপারেশনের মাধ্যমে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। এতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে এবং পরিবেশ ভালো থাকে। তবে নিজেদের সারভিলেন্স টিম ছাড়া এর যথাযথ প্রয়োগ, সফলতা নিশ্চয়ন ও নিরূপণ কষ্টসাধ্য।

ডেঙ্গি বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হলো ভাইরাস স্ট্রেনের ধরন। কারণ কোনো ব্যক্তি ভাইরাসের চারটি স্ট্রেনের কোনো এক স্ট্রেন দিয়ে একবার আক্রান্ত হলে তার জীবদ্দশায় ওই স্ট্রেন দিয়ে আর আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু নতুন স্ট্রেনের অনুপ্রবেশ ঘটলে আবারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেজন্য অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার এলাকার মশা ধরে এবং সম্ভাব্য রোগীদের স্যাম্পল নিয়ে মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। নতুন স্ট্রেন শনাক্ত হলে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সেই এলাকার অধিবাসীদের সতর্ক করার সঙ্গে সঙ্গে মশক নিধন কর্মসূচিও জোরদার করতে হবে। অথচ এ অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটিতে আমরা একেবারেই গুরুত্ব দিই না।

আমরা সাধারণত বিচ্ছিন্ন কিছু জরিপ চালিয়ে কিছু মশক প্রজননস্থল চিহ্নিত করি এবং সেগুলো কেন্দ্রিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করি। কিন্তু এটি বছরব্যাপী কাজ। একটি বাড়িতে মশা পেলে তার আশপাশের বাড়িগুলোতে ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে ক্লাস্টারের বিস্তার বা পরিধি নির্ণয় করে মশক নির্মূল অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আর একটি মশক ক্লাস্টার একদিনের অভিযানে নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ এডিস মশার এক ব্যাচ ডিম ১৫-২০ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে অবস্থা বুঝে অল্প অল্প করে লার্ভায় পরিণত হয়। তাই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি একটু ভিন্ন হওয়া প্রয়োজন, যা এখানে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করছি।

১. বর্ষা মৌসুমের আগেই মশক ক্লাস্টার এলাকা চিহ্নিত করা। ২. প্রতিনিয়ত দৃষ্টি রাখা কখন ডেঙ্গি বা চিকনগুনিয়া রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। ৩. কোনো এলাকায় সন্দেহযুক্ত বা নিশ্চিত ডেঙ্গি রোগী ক্লাস্টার পাওয়ামাত্র দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োগ নিশ্চিত করা; যেমন-ক. তিন থেকে চার দিনের মধ্যে উড়ন্ত মশার ঘনত্ব অন্তত ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর জন্য ফগিং বা ইউএলভি মেশিনের সাহায্যে উপর্যুপরি এডাল্টিসাইডের প্রয়োগ করা, খ. এক সপ্তাহের মধ্যে ৯৫ শতাংশ এলাকায় ঘরে ঘরে পরিদর্শনের মাধ্যমে উড়ন্ত মশা ও তাদের অপূর্ণাঙ্গ মশা নিধন নিশ্চিত করা, গ. অধিক মশা উৎপাদনকারী পাত্র (কনটেইনার, যেমন-ড্রাম, মটকা, সিমেন্টেড ট্যাঙ্ক ইত্যাদি) চিহ্নিত করে ঘষেমেজে পরিষ্কার করে পানি পরিবর্তন করা। পাত্রগুলো ঢাকনা, মশারির নেট বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করা। আর অপ্রয়োজনীয় কনটেইনার সংগ্রহ করে অপসারণ বা রিসাইকেলের ব্যবস্থা করা। এভাবে সপ্তাহে ন্যূনতম একবার হিসাবে দুই মাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা। ৪. এ ছাড়া অন্যান্য এলাকায় এখন থেকে ক. এলাকাভিত্তিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে পাবলিক এরিয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় সব ডিসপোজেবল বা পরিত্যক্ত পাত্র সংগ্রহ করে যথাস্থানে জড় করে ধ্বংস করা বা স্থায়ী কীটনাশক প্রয়োগের ব্যবস্থা করা; খ. সচরাচর মানুষের চোখে পড়ে না এমন জায়গা বা ক্রিপ্টিক প্রজননস্থল যেমন-ঘরের ছাদের পানিজমা অংশে, পানির মিটার সংরক্ষণের জায়গায়, লিফটের নিচের অবস্থানে, বাসাবাড়ির আশপাশে, ছাদে, গ্যারেজে বা ফ্লোরের গর্তে পানি জমে থাকা স্থানে জৈব বা দীর্ঘমেয়াদি কীটনাশক প্রয়োগ করা, এক্ষেত্রে বিটিআই ট্যাবলেটজাতীয় উপকরণ খুবই উপযোগী। আর তা থাকলে সেখানকার পানি নিষ্কাশন করে কেরোসিনজাতীয় পদার্থ প্রয়োগ করে মশার প্রজনন অনুপযোগী করে দেওয়া। ৫. মাঝেমধ্যে মশক ধরে ভাইরাসের উপস্থিতি ও তাদের স্ট্রেইন চেক করে তাদের বিস্তার পর্যবেক্ষণ করা। ৬. ডেঙ্গি রোগীকে যথাযথ নিরাপদ পরিবেশে রাখা, যেন সেখান থেকে ভাইরাস না ছড়াতে পারে।

সবশেষে সিঙ্গাপুরে সর্বসাধারণের জন্য এডিস মশার অপরিণত দশা বা লার্ভা নিয়ন্ত্রণে যে পরামর্শ দেওয়া হয় তাহলো-১. ফুলের টব বা অন্যান্য মাটিপূর্ণ পাত্রে যেখানে পানি জমে থাকে, সেসব মাটির উপরিস্তর নিয়মিতভাবে খুঁড়ে দেওয়া, যাতে উপরিভাগ শক্ত হয়ে মশার ডিমপাড়ার উপযোগী না হয় এবং উপরিস্তরে পানিও জমে না থাকে; ২. ফুলদানির নিচের প্লেটে পানি জমে থাকলে তা ফেলে দেওয়া; ৩. বালতিজাতীয় পাত্র যার কানায় পানি জমতে পারে, সেগুলো উপুড় করে ভেতরের জমা পানি ফেলে দেওয়া আর উপুড় করে রাখা বালতির কানায় জমে থাকা পানি নেকড়া দিয়ে মুছে দেওয়া; ৪. সপ্তাহে একবার পাত্রের জমা পানি ফেলে দেওয়া এবং ৫. পানি জমার স্থানগুলোতে বিটিআই ট্যাবলেট দেওয়া।

আরও পড়ুন: রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভোগান্তির অবসান হোক

যদিও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা নেই, তবে অল্প চেষ্টাতে এ সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব। অতএব দ্রুত প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন করে কীটতাত্ত্বিক সমস্যা কীটতত্ত্ববিদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সঠিক নিয়ম মেনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাধান করে জনসাধারণকে আতঙ্কমুক্ত স্বাস্থ্যসেবা উপহার দেওয়া উচিত।

ড. জি এম সাইফুর রহমান : কীটতত্ত্ববিদ ও ফ্যাকাল্টি মেম্বার, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

সাননিউজ/এমএসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ব্রাজিলে মাদকচক্রবিরোধী অভিযানে ৪ পুলিশসহ ১১৯ জন নিহত

ব্রাজিলে মাদকচক্রের বিরুদ্ধে এক বড় পুলিশি অভিযানে...

২০৩৪ সালের ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য অর্জনে নারীই চালিকাশক্তি: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়

আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য...

‘হ্যাঁ’ ভোটে বিএনপির জন্ম, ‘না’ ভোটে মৃত্যু

জামায়াত ও বিএনপি কুতর্ক বাদ দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জা...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

বোয়ালমারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার মালামাল লুট

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নারায়ণ চন্দ্র নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির...

জনগণের সিদ্ধান্ত নাকি রাজনীতির সাজানো সম্মতি?

গণভোট হলো জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের একটি পদ্ধতি, যে...

এবার ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’ 

নির্বাচন বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন করে সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকায় নির্বাচন কমিশন যু...

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বনদস্যু, তিন শতাধিক জেলে অপহরণ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও মৎস্যভান্ডার নামে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা