আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুর ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট দিনা বোলোয়ার্তে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৬০ বছর বয়সী এ নারী ক্ষমতায় থাকবেন।
আরও পড়ুন : পেরুতে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট গ্রেফতার
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) পেরুর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির সদ্য সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট দিনা।
পেরুর সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাসিলো অভিশংসিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দিনা বোলোয়ার্তে দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে গদিতে বসেন।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন পেরুর প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাসিলো। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দেয় পেরুর কংগ্রেস। আইনসভা ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে দেশকে সাংবিধানিক সংকটে ফেলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হন পেদ্রো।
কংগ্রেস ভেঙে দেয়ার জন্য পেদ্রো কাসিলোর প্রচেষ্টা উপেক্ষা করে আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করেন আইনপ্রণেতারা।
এদিন প্রেসিডেন্ট কাসিলোকে অপসারণের পক্ষে ভোট দেন ১০১ জন, বিপক্ষে ৬ জন এবং ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন ১০ জন আইনপ্রণেতা। পরে উল্লাসের সঙ্গে ভোটের ফল ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন : বর্ষসেরা ব্যক্তি’ জেলেনস্কি
পেরুর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কাসিলো প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট দিনা বোলোয়ার্তে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলেন ৬০ বছর বয়সী বলুয়ার্তে।
পেরুতে একটি অপরাধী চক্রকে প্রশ্রয় দিয়ে কাসিলো প্রশাসন দেশব্যাপী দুর্নীতি কায়েম করছে বলে অভিযোগ তুলে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসে বিরোধীদের অভিশংসন প্রচেষ্টার পক্ষে ভোট দেন ৫৫ জন আইনপ্রণেতা। ফলে ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা। এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরেও একই উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয় বিরোধীপক্ষ।
দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটিতে বিগত কয়েকবছর ধরে ব্যাপক রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। এ জেরে ২০১৬ সালের পর থেকে কাসিলোসহ পেরুর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন পাঁচজন।
আরও পড়ুন : দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্পের কোম্পানি
বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটির সংসদের আইনপ্রণেতারা সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাসিলোর বিরুদ্ধে আগেই অভিসংশনের প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে বুধবার ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পেদ্রো সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালান।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ডিক্রি জারি করে দেশ শাসনের কথা বলেন তিনি। টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জানান, অস্থায়ীভাবে সংসদ ভেঙে দেবেন, ডিক্রির মাধ্যমে শাসনভার পরিচালনা এবং দেশে নতুন নির্বাচন আয়োজন করবেন।
অপর দিকে তার এ ঘোষণাকে সুস্পষ্ট অভ্যুত্থান হিসেবে উল্লেখ করেন তার নিজ দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা। এর কয়েকদিন আগে দেশটির বিচারবিভাগ ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেন পেদ্রো।
আরও পড়ুন : ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ৪
যারা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগুলো তদন্ত করছিল। তার এসব সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। তারা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন।
কিন্তু এসব করেও শেষ রক্ষা হয়নি পেদ্রোর। উল্টো ‘সংবিধান পরিপন্থি অভ্যুত্থান চেষ্টায়’ ফেঁসে গেছেন তিনি। এ কারণে ক্ষমতা হারানোর পরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পেদ্রো। এমনটি জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
এমন নাটকীয় বিদায়ের মাধ্যমে পেদ্রোর ১৭ মাসের শাসনের অবসান হয়েছে। তার সময়টায় পেরুর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত ছিল। এই ১৭ মাসের মধ্যে পাঁচবার মন্ত্রিসভা গঠন ও পরিবর্তন করেছেন তিনি। এতে করে ৮০ জন মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
এছাড়া এ সময়ের মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুইবার অভিসংশন এবং ছয়বার তদন্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন : কঙ্গোতে হামলায় নিহত ২৭২
প্রসঙ্গত, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাসিলো যখন সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়, প্রেসিডেন্টের এসব কার্যক্রমকে সমর্থন করবে না তারা।
এরপরই দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে জর্জরিত পেদ্রোর পতন অত্যাসন্ন হয়ে পড়ে বলে প্রতিবেদনে জানান বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান।
সান নিউজ/এইচএন