আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের সেনাবাহিনী সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত মাসে ইসরাইলের সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা চালায়। গত ১২ বছরের মধ্যে চতুর্থবার এই হামলা চলাকালে দেশটির কাছে ৭৩৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৭৩ কোটি টাকা) ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন কংগ্রেসে দেশটির আইন প্রণেতারা এর বিরোধিতা করেছিলেন। একইসঙ্গে একাধিক ডেমোক্রেট সদস্য গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা বন্ধের শর্তে এসব মিসাইল বিক্রির দাবি জানান।

ফিলিস্তিনের গাজাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কারাগার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উপত্যকার ২১ লাখ বাসিন্দাকে কার্যত বন্দী করেছে ইসরাইল। দেশটির সেনাবাহিনী পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে জোরপূর্বক দখল করে অবৈধভাবে শত শত ইসরাইলি বসতি গড়ে তুলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণেই অঞ্চলটিতে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব বজায় রয়েছে। এটি মূলত দেশটির সামরিক বাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ সামরিক শিল্প গড়ে ওঠার কারণেই হয়েছে। তাই দেশটির সেনাবাহিনী ও সামরিক শিল্প সম্পর্কে জানাটা জরুরি।

সেনাবাহিনীর পেছনে কত অর্থ ব্যয় করে ইসরাইল? : ইসরাইলের সেনাবাহিনী সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বে অন্যতম। ইসরাইলে কোনো নাগরিকের ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলেই সেনাবাহিনীতে যোগদান করা তার জন্য বাধ্যতামূলক। যুদ্ধ ও সামরিক সরঞ্জাম বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসআইপিআরআই’র তথ্যমতে, ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর পেছনে ২২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে তেল আবিব। ইসরাইল তার প্রতিরক্ষা খাতে মাথাপিছু আয়ের প্রায় দুই হাজার ৫০৪ ডলার ব্যয় করেছে। যা মোট সরকারি ব্যয়ের ১২ শতাংশ।

এই চিত্র প্রমাণ করে যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী রাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় সামরিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সামরিক খাতে ব্যয়ের দিকে দিয়ে ইসরাইলের কতটা সাদৃশ্য রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উন্নত অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্য অন্যতম ইসরাইল। তেল আবিব বিভিন্ন দেশে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার প্রযুক্তিসহ অন্যান্য উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করে। এসআইপিআরআই’র ২০২০ সালের তথ্যমতে, বিশ্বের ১২তম অস্ত্র রফতানিকারক ইসরাইল। গত বছর বিশ্বের ১৬টি দেশে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি করেছে তেল আবিব।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়ের চিত্র : ইসরাইলে প্রধান সামরিক সহায়তাকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের সঙ্গে ২০১৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে ১০ বছর মেয়াদী ৩৮ বিলিয়ন ডলারের একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি হয়। সেই চুক্তি আওতায় এই সহায়তা প্রদান করা হয়। এর আগেও সামরিক সহায়তার ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল তেল আবিব। ইসরাইল ধনী রাষ্ট্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৫১ সাল থেকে চালু হওয়া অর্থনৈতিক সহায়তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। যা ২০০৭ সালে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।

ইসরাইলকে কিভাবে সহায়তা করা যায়, বিশেষ করে সামরিক ক্ষেত্রে এবং কিভাবে তার ব্যবহার হবে সে বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন কিছু শর্ত আরোপ করে দেয়। যেমন— লেহি আইন মোতাবেক মানবাধিকার লংঘন করলে সামরিক শাখাগুলোকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করে দেবে আমেরিকা। তবে এই আইনের আওতায় এখন পর্যন্ত ইসরাইলের কোনো সামরিক শাখাকে সাজা দেওয়া হয়নি। একইভাবে ইসরাইলের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র যে সহায়তা দিত, সেগুলো ১৯৬৭ সালের আগের হিসাব অনুযায়ী ইসরাইলি ভূখণ্ডের মধ্যে ব্যবহার হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।

অপরদিকে ইউএসএআইডি’র তথ্যমতে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সবমিলিয়ে ফিলিস্তিনে ১৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করেছিল। যদিও পরে ট্রাম্প প্রশাসন অধিকাংশ সহায়তা স্থগিত করে। মূলত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’কে ফিলিস্তিনের সরকার একতরফা বলে সমালোচনা করায় মার্কিন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৯৪ সালে পিএ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পাঁচ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার করে ফিলিস্তিনকে। তবে এই সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইসরাইলের বিপরীতে ফিলিস্তিনকে অনেক শর্ত জুড়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। উদাহরণস্বরূপ— যদি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এমন কোথাও ওই অর্থ ব্যবহার করে যা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে, তাহলে টেলর ফোর্স আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সেই অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেবে। তবে বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনে পুনরায় সহায়তা দেওয়া কথা জানিয়েছে। যদিও তা ইসরাইলকে দেওয়া সহায়তার তুলনায় নগণ্যই হবে।

২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আইনের কারণেও দেশটিকে সহায়তা করতে বাধ্য ওয়াশিংটন। যাকে ‘ইসরায়েলের গুণগত মানসম্পন্ন সামরিক দক্ষতা’ বৃদ্ধির সহায়তা বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা। এই আইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র পেয়ে থাকে ইসরাইল। একইসঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা ওই অঞ্চলে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে নিয়মিত ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন, যাতে করে তেল আবিব সামরিক দিক দিয়ে কোনো অসুবিধায় না পড়ে।

ইসরাইলের অস্ত্র আমদানি ও রফতানি : ইসরাইলে অস্ত্র রফতানির চেয়ে আমদানি বেড়ে গেছে। এসআইপিআরআই’র তথ্যমতে, গত দশকে ইসরাইলের রফতানির পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে অস্ত্র আমদানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নেভ গর্ডন জানান, নিজেদের তৈরি সামরিক অস্ত্রগুলোর সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়াকে ব্যবহার করছে ইসরাইল।

তিনি আলজাজিরা’র কাছে বলেন, ‘রফতানিমুখী শিল্পের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্ত্র ও নজরদারি সিস্টেম প্রস্তুতকারী কোনো প্রতিষ্ঠান দাবি করে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তাদের তৈরি অস্ত্র বা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে, এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে—তখন এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়’।

ইসরাইল মূলত পশ্চিমা দেশগুলো থেকেই তাদের অস্ত্র আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ৮৩ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করে আসছে ইসরাইল। ইসরাইল সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানি করে ভারতে—যা মোট রফতানির ২৩ শতাংশ। এছাড়াও বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারকে অস্ত্র রফতানি অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। বর্ণবাদী নীতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর আরোপ করা বৈশ্বিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার এড়াতে ১৯৭৫ সালে দুই দেশ একটি গোপন প্রতিরক্ষা চুক্তিও স্বাক্ষর করে।

এসআইপিআরআই’র তথ্য অনুসারে, ইসরাইল ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভারতে ৪৩ শতাংশ, আজারবাইজানে ১৬ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১০ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪ শতাংশ অস্ত্র রফতানি করেছে। আর ২০২০ সাল থেকে ইসরাইলের বড় অস্ত্রের ক্রেতারাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে ভারত।

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর দেশ দু’টির মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। এরপর থেকে একজন ভারতীয় কূটনৈতিক ‘ইসরাইলি মডেল’ উল্লেখ করেন। ফিলিস্তিনির পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের উদাহরণ দিয়ে তা ভারতের কাশ্মীরেও প্রয়োগ করতে বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত মাসে ১১ দিনের হামলায় গাজায় ৬৬ শিশুসহ ২৫৩ জন নিহত হয়। অপর দিকে গাজা থেকে ছোড়া হামাসের রকেট হামলায় শিশুসহ অন্তত ১২ ইসরাইলি নিহত হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল উভয়পক্ষের সম্ভব্য যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি প্যানেল গঠন করেছে। আর ইসরাইলের কাছে অস্ত্রবিক্রি বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সূত্র : আল জাজিরা।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এবার লাক্সের অ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন সুহানা 

বিনোদন ডেস্ক: বলিউড বাদশা শাহরুখ খান ও গৌরি খান দম্পতির কন্য...

হাইকোর্টের আদেশে সংক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমি...

নারী আম্পায়ারের সমালোচনায় সুজন

স্পোর্টস ডেস্ক: চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ড...

হরিপুরে হিট স্ট্রোকে নারী শ্রমিকের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপ...

রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের রাফাহতে ইসরায়ে...

মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে ধর্ষণ, গ্রেফতার ১

জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুরে মানসিক ভ...

টেম্পুচাপায় কলেজছাত্রী নিহত

জেলা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের কালুর...

এসি বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তির মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: সাভারে একটি বস্ত্র বিতানে এসি বিস্ফোরণের ঘটন...

শিশুকে পিটিয়ে মারলেন সৎ বাবা

জেলা প্রতিনিধি: শরীয়তপুরে সৎ বাবা...

কলোম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা