কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের উলিপুরে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে দুই যুগেরও বেশি সময় থেকে পড়ে থাকা গরীব কৃষকদের সাতভিটা বিলটি কৃষকদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছে। কৃষি প্রণোদনায় সরিষার চাষে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। নতুন করে স্বপ্ন দেখা গরীব ক্ষুদ্র কৃষকেরা এবার ওই বিলে বোরো চাষ ও বর্ষার মৌসুমে মাছ চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের দিয়েই সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি শুকিয়ে সরিষা চাষের ব্যবস্থা করে কৃষকদের বীজ, সার নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। সরিষার ফলন দেখে খুশি পরিত্যাক্ত জমির মালিকরা। সরিষা ফুলের গন্ধে ভরে গেছে বিল এলাকার আশে-পাশে। ওই এলাকার মানুষের মুখে একই শব্দ উচ্চারণ হচ্ছে এবার ভাগ্য খুলে গেলো সাতভিটার কৃষকদের।
সাতভিটার বিলটি ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে জলাবদ্ধতার কারণে কোন ধরনের চাষাবাদ করা সম্ভব ছিলো না। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকত বছরের পর বছর। ওই বিলের ৫০ জন মালিক ক্ষুদ্র ও গরীব কৃষক হওয়ায় তাদের পক্ষে বিলটি সংস্কার করা সম্ভব ছিলো দুঃসাধ্যের। চলতি অর্থ বছর ওই বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিক্তা পারভিন বিলের কৃষক মালিকদের সাথে বৈঠক করে সমবায় ভিত্তিক জোট গঠন করেন।
তাদের দিয়েই পরিত্যাক্ত বিলটি পরিস্কার ও পাম্প দিয়ে পানি শুকিয়ে প্রণোদনার মাধ্যমে সার, বীজ, নগদ অর্থ দিয়ে সরিষা চাষ করা হয়। পরিকল্পনা ভিত্তিক বিলটিতে বর্ষাকালে মাছ চাষ ও শুকনো মৌসুমে দুটি আবাদ করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ৮০ একর জমির এই বিলটি এখন সরিষা ফুলের বিলে পরিনত হয়েছে।
প্রান্তিক গরীব কৃষকেরা সরিষার বাম্পার আবাদ দেখে খুবই খুশি। উৎসাহী কৃষকেরা সরিষা তুলে আসন্ন বোরো চাষ এরপর বোরো আবাদ ঘরে নেবার পর মাছ চাষের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। সমবায় ভিত্তিক সমিতির মাধ্যমে পরিত্যাক্ত বিলটিকে আবাদযোগ্য করার উদ্যোগকে এলাকার মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে।
বিলের মালিক ক্ষুদ্র কৃষক মোখলেছুরের ৬০ শতক জমি ওই বিলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ছিলো। সে কারণে সারা বছর চাউল কিনে খেতে হত। মোখলেছুর জানালেন, ‘হামরা কোন দিনো ভাবি নাই এই বিলোত চাষ-বাসের সুযোগ পামো এলা আর ভাতের অভাব হবার নয়’।
তার মতই আরো কৃষক মাসুদ মিয়া, আব্দুল জব্বার, বাবলু মিয়ারা জানালেন, ‘কৃষি বিভাগ হামার পাশে থাকি চোখ খুলি দেইল আল্লাহ ওমার ভালো কইরবে’। ওই ওলাকার ধনাঢ্য কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, বিলে যাদের জমি যাদের জমি আছে তারা সবাই গরীব, তাই এতদিন পরিত্যাক্ত ছিলো, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিলটি সোনার খনিতে পরিনত হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিক্তা পারভিন জানান, বিলের মালিকদের সংগঠিত করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে এবং কৃষকেরা আগ্রহী হওয়ায় বিলটি আবাদযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে তাদের উৎসাহিত করে বিলটি আবাদযোগ্য করে তোলা হয়েছে।
সান নিউজ/এমকেএইচ