জন স্টুয়ার্ট মিল (জন্ম: ২০ মে, ১৮০৬ - মৃত্যু: ৮ মে, ১৮৭৩) ছিলেন একজন ইংরেজ দার্শনিক, রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ এবং সরকারী চাকরিজীবী। উদারনীতিবাদের ইতিহাসের ক্ষেত্রে অন্যতম মহা-প্রভাবশালী চিন্তাবিদ, তিনি সামাজিক তত্ত্ব, রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ্যাতে বড় অবদান রেখেছেন। তাকে ঊনবিংশ শতকের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী ইংরেজিভাষী দার্শনিকরূপে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। মিলের স্বাধীনতাবিষয়ক মতবাদটিতে অসীম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে ব্যক্তির স্বাধীনসত্ত্বাকে প্রাগ্রাধিকারের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
মিল ছিলেন উপযোগবাদের প্রবক্তা, একটি নৈতিক তত্ত্ব যেটি তার পূর্বসুরী দার্শনিক জেরেমি বেন্থাম উন্নত করেন, তিনি জেরেমি বেন্থাম এর নীতিগত তত্ত্ব উপযোগবাদের উন্নয়নে অগ্রসর হয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন 'লিবারেল পার্টি' নামক রাজনৈতিক দলের একজন সংসদ-সদস্য এবং তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি যে নারীদের জন্য ভোটাধিকার চান। হেনরি হান্ট ছিলেন প্রথম ব্যক্তি। মিল একজন অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন।
লন্ডনের পেনটোনভিলে এলাকার রডনী স্ট্রীটে জন স্টুয়ার্ট মিল জন্মগ্রহণ করেন। স্কটিশ দার্শনিক, ইতিহাসবিদ এবং অর্থনীতিবিদ জেমস মিল এবং হ্যারিয়েট বুরো দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। পিতার তত্ত্বাবধানে তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন। পিতার কঠোর শাসনের মধ্য দিয়ে তার বাল্য ও কৈশোর কাটে। মাত্র তিন বৎসর বয়সে তিনি গ্রিক ভাষা শিখতে শুরু করেন, তিন থেকে আট বৎসর বয়সে গ্রিক ও লাতিন ভাষা আয়ত্ত করা ছাড়াও উভয় ভাষায় লিখিত একাধিক গ্রন্থ পাঠ করেন। যে বয়সে অন্যান্য শিশুদের বিদ্যালয়ে পদচারণ শুরু হয় তিনি সে বয়সে এরূপ অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। বারো বৎসর বয়সে তিনি গণিতের অন্তরকলন শিক্ষা ছাড়াও গবেষণামূলক বিজ্ঞান, সভ্যতার ইতিহাস, অর্থনীতি ও ইংরেজি সাহিত্যের ওপর অনেক গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। এছাড়া, জেরেমি বেন্থাম এবং ফ্রান্সিস প্ল্যাসের পরামর্শ ও সহযোগিতা তাঁর শিক্ষাজীবনে প্রভাব বিস্তার করে।
পিতা তার অসাধারণ প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার স্ফূরণ দেখতে পান শৈশবকালেই। উপযোগবাদে তার ও বেন্থামের ভূমিকা উভয়ের মৃত্যু পরবর্তীকালে ব্যাপক প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়। শৈশবেই অকালপক্ক চিন্তা-চেতনার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। আত্মজীবনীতে তার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। তিন বছর বয়সে প্রাচীন গ্রীক ভাষা শিখেন। ৮ বছরের মধ্যেই এশপের উপকথা, জিনোফোনের আনাব্যাসিস, হিরোডোটাস সমগ্র সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি ইংরেজির ইতিহাস এবং অঙ্কশাস্ত্র শিখেন। তাকে ল্যাটিন ভাষা, ইউক্লিড এবং বীজগণিত শেখার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়।
১৮৬৫ থেকে ১৮৬৮ সালের মধ্যে স্টুয়ার্ট মিল সেন্ট এন্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লর্ড রেক্টররূপে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে অর্থাৎ ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৮ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের সিটি এন্ড ওয়েস্টমিনিস্টার এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাকে লিবারেল পার্টির সাথে প্রায়শঃই সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। এমপি থাকাকালীন মিল আয়ারল্যান্ড প্রসঙ্গে যথেষ্ট সোচ্চার ছিলেন।
১৮৬৬ সালে মিল যুক্তরাজ্যের সংসদের ইতিহাসে প্রথম সদস্যরূপে নারীর ভোটাধিকারের স্বপক্ষে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রস্তাবনায় ব্যাপক ও ধারাবাহিকভাবে বিতর্ক চলতে থাকে। এছাড়াও মিল শ্রমিক সংগঠন এবং খামার সমবায় সমিতির সামাজিক পুণর্গঠনের পক্ষে জোড়ালো ভূমিকা গ্রহণ করেন।
তিনি বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের গডফাদার ছিলেন।
মিল দেখতে পান যে, নারীসংক্রান্ত বিষয়াবলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি নারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লিখতে শুরু করেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি প্রারম্ভিক নারীবাদী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। ১৮৬১ সালে লিখিত ও ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত দ্য সাবজেকশন অব উইমেন শীর্ষক নিবন্ধে নারীদের বৈধভাবে বশীভূতকরণ বিষয়ে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করেন। এর ফলে তা সঠিকভাবে সমতাবিধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে।
বিবাহে নারীর ভূমিকা সম্বন্ধে কথা বলেন এবং এ সম্পর্কে সম্যক অবগত হয়ে তিনি এর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেখানে নারীর জীবনধারণে তিনি তিনটি প্রধান দিকের কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- সমাজ ব্যবস্থা ও লিঙ্গভেদ, শিক্ষা এবং বিবাহ। নারীদের অধিকার আদায়ে তার ভূমিকা ও সমর্থন ছিল প্রচণ্ড যা তাকে নারীবাদের শুরুর দিকে বিখ্যাত করে তোলে। দ্য সাবজেকশন অব উইমেন বইটি ছিল শুরুর দিকে লেখা কোন পুরুষ লেখকের বই।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সাননিউজ/ইউকে