ছবি: সংগৃহীত
ফিচার

১৫ মে: বিপ্লবী চারু মজুমদারের জন্মদিন

সাননিউজ ডেস্ক

চারু মজুমদার (১৫ মে ১৯১৯ – ২৮ জুলাই ১৯৭২) ভারতের প্রখ্যাত কম্যুনিস্ট বিপ্লবী ও নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও দলটির প্রথম সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত ছিলেন।

জন্ম রাজশাহী জেলার হাগুরিয়া গ্রামে। পৈতৃক নিবাস শিলিগুড়ি। সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম। পিতার নাম বীরেশ্বর মজুমদার। চারু মজুমদার ১৯৫২ সালে পার্টির সহকর্মী লীলা সেনগুপ্তকে বিবাহ করেন। তাদের দুই কন্যা ও এক পুত্র হয়। পুত্রের নাম অভিজিৎ মজুমদার। অভিজিৎ মজুমদার বর্তমানে সিপিআইএম‌এল লিবারেশন পার্টির অন্যতম নেতা ও সিপিআইএম‌এল লিবারেশন পলিটব্যুরো সদস্য।

শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুল থেকে ১৯৩৩ সালে মেট্রিক পাস করেন। অতঃপর পাবনা এডোয়ার্ড কলেজে আইএ ক্লাসে ভর্তি হন। তারপরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পূর্বে সাম্যবাদী ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে লেখাপড়া ত্যাগ করে জলপাইগুড়ি জেলায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলেন। ১৯৩৬ সালে তার কর্মক্ষেত্র ছিলো জলপাইগুড়ি জেলা। ১৯৩৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ব্রিটিশ শাসনকালে ছয় বছর আত্মগোপন অবস্থায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। এ সময়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪২ সালে জলপাইগুড়িতে গ্রেফতার হয়ে দুই বছর নিরাপত্তা বন্দিরূপে কারাভোগের পর ১৯৪৪-এ মুক্তিলাভ করেন। অতপর উত্তরবঙ্গে চা-বাগান শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ।

১৯৪৬–৪৭ সালে পঞ্চগড়, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় তেভাগা আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৪৮ সালের ২৬ মার্চ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে তিনি নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন এবং ১৯৫২-তে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৭-তে নকশালবাড়ির কেষ্টপুরে চা-বাগিচার মালিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার অভিযোগে গ্রেফতার হন। প্রায় চার মাস কারা নির্যাতন ভোগ করেন। ১৯৬২-তে চীন-ভারত যুদ্ধের সময়ে ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার হন। ১৯৬৩-তে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে শিলিগুড়ি কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস প্রার্থির কাছে পরাজয় বরণ করেন। চীন ও রাশিয়ার আদর্শগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পিকিংপন্থি নেতৃবৃন্দ সিপিআই (এম) গঠন করলে (১৯৬৪) তার সংগে একাত্মতা ঘোষণা করেন। ১৯৬৫-তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় গ্রেফতার হন। একই বছর মুক্তিলাভের পর সিপিআই (এম)-এর নামে একটি বিশেষ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। সিপিআই (এম) নেতৃবৃন্দ কর্তৃক একে দলীয় কর্মসূচির পরিপন্থী আখ্যায়িত করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের নির্বাচনে (১৯৬৭) কংগ্রেসকে পরাজিত করে বামফ্রন্ট জয়ী হলে সিপিআই (এম)-এর বামফ্রন্ট সরকারে যোগদানের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সিপিআই (এম)-এর সংঙ্গে তার বিরোধ বাধলে সিপিআই (এম) শোধনবাদী বলে ত্যাগ করেন। বামফ্রন্ট সরকারের অভিষেক অনুষ্ঠান (জুন ১৯৬৭) শেষ হওয়ার পরপরই তার ও কানু স্যান্যালের নেতৃত্বে দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি এলাকায় সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ সংগঠিত করেন। কৃষকদের জমির মালিকানার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরাঞ্চল, কেরালা ও পূর্ব উড়িষ্যায় এই সশস্ত্র আন্দোলন ব্যাপকভাবে বিস্তারলাভ করে।

১৯৬৮-তে কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল, সুশীতল রায়চৌধুরী প্রমুখের সহযোগিতায় চারু মজুমদার কমিউনিস্ট কনসোলিডেশন গঠন করেন। ১৯৬৯-এর ১ মে কলকাতা ময়দানে এক জনসভায় কানু সান্যাল কর্তৃক সিপিআই (এমএল) গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। চারু মজুমদার এদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। সিপিআই (এম-এল) গঠনের ফলে একজন সাধারণ কৃষক কর্মী থেকে সর্বাধিক উচ্চারিত বিপ্লবী নেতারূপে পরিচিতি লাভ করেন। তার পরিচালিত আন্দোলন নকশালপন্থী আন্দোলন নামে খ্যাতি লাভ করে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের নকশালবাড়ির সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত কৃষকদের জমির মালিকানা লাভ যা থেকে এই আন্দোলনের উৎপত্তি। ১৯৬৯-৭১ খ্রিস্টাব্দের ২ বছর এই নবগঠিত দল পশ্চিম বাংলার সবচেয়ে পরাক্রান্ত, সুগঠিত এবং মারমুখী বিপ্লবী দলরূপে বর্তমান ছিল। নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রধান মুখ ছিলেন চারু। এই দলের প্রভাব বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের আশায় অনেক প্রতিভাবান যুবক ও যুবতী তার এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। মাও সে তুং এর লাল বই অবলম্বনে বেশ কিছু স্লোগান চারু মজুমদার বাংলায় জনপ্রিয় করেন। যথা- ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’, ‘বন্দুকের নলই শক্তির উৎস’, ‘শ্রেণি শত্রুকে হত্যাই একমাত্র সশস্ত্র বিপ্লবের পথ’ ইত্যাদি।

ভারত সরকার কর্তৃক নকশালদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করা হয়। ১৯৭০-এর মাঝামাঝি সময়ে সিপিআই (এমএল) এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়। চারু মজুমদারের নেতৃত্বকে অস্বীকার করে অসীম চট্টোপাধ্যায় ও সন্তোষ রাণা দলত্যাগ করেন। ভারত সরকার কর্তৃক তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা ও সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ আনয়ন করা হয়।

চারু মজুমদারের উপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তিনি কয়েক বছর পলাতক জীবন যাপন করেন। ১৯৭২-এর ১৬ জুলাই কলকাতার এন্টালী রোডের এক বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২৮ জুলাই পুলিশ লক আপে হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ভারত সরকার কর্তৃক ঘোষণা প্রচার করা হয়। নকশালপন্থী ধারার রাজনীতিবিদেরা অনেকে মনে করেন, তাঁকে জেলে হত্যা করা হয়েছিল। সশস্ত্র পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর ঘেরা টোপে চারু মজুমদারের মরদেহ কেওড়াতলা মহাশ্মশানে দাহ করা হয়।

সাননিউজ/ইউকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের এক মাস পর তাসনিয়ার মৃত্যু

রাজধানী উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের...

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকায় এলেন, সফরের কর্মসূচী 

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে আজ শন...

ফুটবল বিশ্বকাপের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প 

ছেলেদের ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ ডিসেম্বর য...

ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে সব বলে দেব : ঢাবি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে...

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্...

সীমানা নির্ধারণে পেশাদারির সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি : সিইসি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে পেশ...

৭১’র অমীমাংসিত ইস্যু দুইবার সমাধান হয়েছে: ইসহাক দার

ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন,...

৫ আগস্ট ‘ঘটিয়েছে জামায়াত’, মন্তব্যের জেরে ফজলুর রহমানকে শোকজ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করার কা...

যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে বন্ধু হয়ে উঠতে পারবে চীন-ভারত

বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনের আবহে ভারতের পাশে থাকার &l...

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা