বরিশাল জেলা জজ আদালত
অপরাধ

আদালতপাড়ায় ‘টাউট-বাটপারের’ উৎপাত

সৈয়দ মেহেদী হাসান:

বরিশাল: অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌরনদী আমলি আদালতে বিচারাধীন একটি যৌতুক মামলার বাদী-বিবাদীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে সমঝোতা হয়। ওই বাদী-বিবাদীপক্ষকে ডেকে অন্য একটি আদালতের পেশকার (সরকারি কর্মচারী) তার পছন্দের আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটি আদালতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। বিষয়টি জানতে পারেন বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা। তারা বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে জানালে পেশকারের এ অনৈতিক কাজ তারা বন্ধ করে দেন।

উজিরপুর আমলি আদালতে বিচারাধীন অন্য একটি ফৌজদারি মামলার প্রধান আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং আসামিকে গ্রেপ্তার করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাদীপক্ষের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন আইনজীবী সহকারী (মুহুরি) আমির হোসেন। কিন্ত আমির হোসেন প্রতিশ্রুত ওই কাজ করতে পারেননি। আবার টাকা ফেরত দেওয়া নিয়েও টালবাহানা শুরু করেন। বাদী এ বিষয়ে নালিশ জানান আইনজীবী সমিতিতে। আইনজীবী সমিতি উদ্যোগ নিয়ে আমির হোসেনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে দেয়।

দুটি ঘটনাই সম্প্রতি ঘটেছে বরিশালের আদালত অঙ্গনে। অর্থাৎ আদালতের কার্যক্রমের বাইরে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা মানুষকে হয়রানি করে চলেছেন নানা কৌশলে।

আদালত অঙ্গনে দালাল-টাউটদের উৎপাত ছাড়াও আইনজীবী সহকারী এবং বিভিন্ন আদালতে কর্মরত জিআরও, পেশকার, সেরেস্তাদার, জারিকারক ও অফিস সহকারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় জেলা আইনজীবী সমিতি সম্প্রতি নোটিশ জারি করেছে। ওই নোটিশে উল্লেখিতদের কেউ কোনো অনিয়ম অথবা বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কিংবা অনৈতিক দাবি করলে সে বিষয়ে আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। নোটিশে আদালত প্রাঙ্গণ ‘টাউট ও তদবিরবাজ’ মুক্ত রাখতে সকল আইনজীবীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির প্রবীণ সদস্যরা অভিযোগ করেন, আদালতের কর্মচারী ও আইনজীবী সহকারীরাই নয়, বরিশাল আদালত অঙ্গনে বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরাও।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু শিক্ষানবীশ আইনজীবী বিচারপ্রার্থীদের কাছে নিজেদের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেন। যেমন, তারা বার কাউন্সিলের বিধি উপেক্ষা করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার শুনানি করেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। সম্প্রতি এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে ২০-২৫ জন শিক্ষানবিশ আইনজীবী ধরাও পড়েছেন। শুধু ম্যাজিস্ট্রেট আদালতই নয়, সহকারী সাব জজ আদালতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাইউম খান কায়সার জানান, শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে গত ৮ সেপ্টেম্বর সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করীম ও অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সকল ম্যজিস্ট্রেট ও সহকারী সাব জজ আদালতে ঘুরেছেন। শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের আদালতগুলোর এজলাসে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা যেন এজলাসে মামলা উপস্থাপন করতে না পারেন, সেজন্য তাদের আইনজীবী সমিতির লোগো সম্বলিত লাল টাই ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। আদালত চলাকালে তারা এজলাসে প্রবেশ করতে পারবেন না।

বিচারপ্রার্থীদের প্রভাবিত বা প্রতারিত করতে আইনজীবী সহকারী বেল্লাল খান সম্প্রতি সকল আদালত অঙ্গনে তার প্রচার ব্যানার টানিয়েছিলেন। বিষয়টি অনৈতিক হওয়ায় আইনজীবী সমিতির নির্দেশে বেল্লাল খান তার ওই ব্যানার অপসারণে বাধ্য হন।

অ্যাডভোকেট কাইউম খান কায়সার জানান, আইনজীবী সমিতির নেতাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বেল্লাল ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার অঙ্গীকার করলে তাকে ক্ষমা করা হয়।

বরিশাল আদালতে হয়রানি-প্রতারণা বন্ধে জেলা আইনজীবী সমিতি সচেষ্ট রয়েছে জানিয়ে অ্যাডভোকেট কাইউম খান কায়সার বলেন, দালালি ও প্রতারণা বন্ধে লাইসেন্সধারী আইনজীবী সহকারীদের নির্দিষ্ট পোশাক পরে আদালতে আসার বিধান করা হচ্ছে। তাছাড়া আদালতের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির প্রবীণ একাধিক সদস্য অভিযোগ করেন, কিছু সরকারি কর্মচারী, আইনজীবী সহকারী এবং দালালরা বিচারপ্রার্থীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি করেন। কিন্ত তাতে বিচারপ্রার্থীর কোনো লাভ হয় না। বরং হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। এদের উৎপাতে আইনজীবীদের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

প্রবীণ ওই আইনজীবীদের মতে, নারী নির্যাতন, হত্যা, মাদক, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে হওয়া মামলায় বিচারপ্রার্থীরা বেশি প্রতারিত হচ্ছেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করীম বলেন, বরিশাল আদালত অঙ্গন কলুষমুক্ত করতে প্রতারণা- হয়রানি এবং জাল-জালিয়াতিতে জড়িতদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জিআরও-পেশকারসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যা সম্প্রতি বিচারকদের অবহিত করা হয়েছে। বিচারকরাও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

বিচার বিভাগীয় কর্মচারী সমম্বয় পরিষদ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম হেদায়েতুন নবী জাকির বলেন, ‘আদালত অঙ্গনে টাউট-দালালদের কারণে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের বদনাম হচ্ছে। তাই আমরাও চাই, আদালত অঙ্গনে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক।’

বরিশাল আইনজীবী সহকারী (মুহুরি) সমিতির সভাপতি শরীফ মো. আনিসুর রহমান বলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগের সঙ্গে তারা একমত। নির্দিষ্ট পোশাক পরে এবং পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে আইনজীবী সহকারীদের কাজ করতে হবে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যারা লাইসেন্স নবায়ন করবেন না, তারা আইনজীবী সহকারী হিসাবে আদালতে কাজ করতে পারবেন না।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এবার লাক্সের অ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন সুহানা 

বিনোদন ডেস্ক: বলিউড বাদশা শাহরুখ খান ও গৌরি খান দম্পতির কন্য...

হাইকোর্টের আদেশে সংক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমি...

নারী আম্পায়ারের সমালোচনায় সুজন

স্পোর্টস ডেস্ক: চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ড...

হরিপুরে হিট স্ট্রোকে নারী শ্রমিকের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপ...

রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের রাফাহতে ইসরায়ে...

টেম্পুচাপায় কলেজছাত্রী নিহত

জেলা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের কালুর...

এসি বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তির মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: সাভারে একটি বস্ত্র বিতানে এসি বিস্ফোরণের ঘটন...

শিশুকে পিটিয়ে মারলেন সৎ বাবা

জেলা প্রতিনিধি: শরীয়তপুরে সৎ বাবা...

কলোম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকা...

মুন্সীগঞ্জে দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা 

জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে চিপস...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা