সারাদেশ

মুন্সীগঞ্জে মজুদ আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: হিমাগারে মজুদের সময়সীমা শেষ হয়ে আসলেও এখন মজুদ রয়েছে মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে অর্ধেকের বেশি সংরক্ষিত আলু। এদিকে দিন দিন কমছে আলুর দাম। লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও বর্তমান বাজার দরে মিলছে না কৃষকের। এতে চরম হতাশায় রয়েছে হিমাগারের মজুদ আলু নিয়ে কৃষক ও হিমাগার মালিক কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: লঙ্কানদের উড়িয়ে দিল কিউইরা

সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গীবাড়ি ও সিরাজদীখান উপজেলার বিভিন্ন হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০০/৭৫০টাকা। যা কোলেস্টেরেজ ভাড়া বাদ দিয়ে প্রতি কেজি পরে ১৪/১৫ টাকা। অথচ জমিতে আলু উৎপাদন, হিমাগার ভাড়া, আলুর খালি বস্তা ক্রয়, হিমাগারে নিতে যাতায়াত ভাড়া নিয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ ১৮/২০ টাকা। তাই কমপক্ষে উৎপাদন খরচ পাওয়ার আশায় দির্ঘদিন যাবৎ হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে রেখেছে কৃষক। কিন্তু দিন দিন কমছে আলুর দাম। এতে হতাশা বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এতে আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন। জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য ৬৪ টি সচল হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। সাথে বেপারীদের উত্তরবঙ্গ থেকে আনা আলুও রয়েছে।

আরও পড়ুন: এমন জীবনসঙ্গী পেয়ে আমি ভাগ্যবান

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের কৃষক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, গত বছর ১৪ শত বস্তা আলু হিমাগারে রেখে ৯ লাখ টাকা লোকসান হইছিল। এবার ৮ শত বস্তা রাখছি। আলু উৎপাদন এবং হিমাগারে রাখতে খরচ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ৯৫০ টাকা। এখন আলুর বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০/৭৫০ টাকা। আমরা মনে হয় এদেশে আর আলু খেতি করতে পারমু না। আমরা আর আলু লাগাইমুনা।

সদর উপজেলার মহেষপুর গ্রামের কৃষক হাজী বাচ্চু মিয়া বলেন, সব জিনিষের দাম বাড়ছে। ৫ টাকার চা এখন ১০ টাকা হইছে। চিনি ১২০ টাকা কেজি, অথচ আলুর দাম দিন দিন কমছে। এদিকে, সারের দামও এবছর বারাইছে। আমরা আর আলু খেতি করমু না, কানে ধরলাম।

আরও পড়ুন: বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করার আবাস!

টঙ্গীবাড়ী কম্বাইড ফুড এন্ড কোল্ডস্টোরের আলু ব্যাবসায়ী মাসুদ সেখ বলেন, আলুর দাম দিন দিনই কমছে । গত ১৫ দিন আগেও আলু ৮০০/৮৫০ টাকা বস্তা ছিল। এখন আলু ৭০০টাকা বস্তা। আমি ঢাকার কারওয়ান বাজার ও নোয়াখালী জেলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আলু বিক্রি করে থাকি।

কম্বাইড ফুড এন্ড কোল্ড স্টোরের সহকারী ম্যানেজার হৃদয় ইসলাম বলেন, আমাদের স্টোরের ধারণ ক্ষমতা এক লাখ বিশ হাজার বস্তা। ৫৫ হাজার বস্তার মত বিক্রি হয়েছে বাকি আলু এখন হিমাগার আছে। তবে এর মধ্যে কিছু বীজ আলুও রয়েছে। আমরা প্রতিবস্তা ভাড়া ২২০ টাকা নিচ্ছি। বর্তমানে আলুর দাম কমছে। তাই আলু বিক্রি করতে কৃষক হিমাগারে আসছে না।

আরও পড়ুন: রাস্তা থেকে গৃহিনীর লাশ উদ্ধার

ইউনুস কোল্ডষ্টোরের ম্যানেজার শফিউল আলম বলেন, ৩০ নভেম্বর আলু হিমাগারে মজুদের শেষ সময়। কিন্তু এখনো অর্ধেক আলু হিমাগারে রয়ে গেছে। এ বছর মনে হয় না, সব আলু বিক্রি হবে। বর্তমানে ৭০০ টাকা বস্তা হিসাবে আলু বিক্রি হচ্ছে।

টঙ্গীবাড়ির মদিনা কোল্ডস্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ষ্টোরের ধারণ ক্ষমতা সাড়ে চার লাখ বস্তা। আমরা এ বছর রাখছিলাম সাড়ে ৩ লাখ বস্তা। এ পর্যন্ত ২ লাখ ১৫ হাজার বস্তা বিক্রি হয়েছে বাকিটা রয়ে গেছে। ৩০ শে নভেম্বর আলু মজুদের শেষ সময়। মনে হয়না এই সময়ের মধ্যে বাকি আলু বিক্রি হইবে।

আরও পড়ুন: ভোট চুরি-জালিয়াতির বিরুদ্ধে খেলা হবে

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে আমাদের অনেক বিপাকে পরতে হচ্ছে। আগামী বছর যদি আমরা ঠিক মতো বিদুৎ না পাই তাহলে হিমাগার ব্যাবসা বিপর্যয়ে পরবে। এতে কৃষক, হিমাগার কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

সিরাজদীখান উপজেলার সম্রাট কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কোল্ডস্টোরেজে ধারণ ক্ষমতা ১ লাক ৯০ হাজার বস্তা। এ পর্যন্ত মাত্র ৬১ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। এখনো ১ লাক ৩৫ হাজার বস্তা আলু রয়েগেছে। আমাদের হিমাগার বন্ধ হতে আর মাত্র এক মাস সময় বাকি আছে। এই অল্প সময়ে এতো আলু কিছুতেই বিক্রি হবে না।

আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের দুর্বলতা রয়েছে, পরিপক্বতা দরকার

সদর উপজেলার পঞ্চসার কোল্ডস্টোরেজের স্টোর কিপার আবু কাশেম বলেন, আমাদের হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ২ লাখ ৮০ হাজার বস্তা। আলু রাখছিলাম ১ লাখ ৮০ হাজার বস্তা। ১ লাখ বস্তা বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার বস্তা রয়ে গেছে স্টোরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, দেশে আলুর ভবিষ্যৎ ভালো নয়। বাংলাদেশে আলুর চাহিদা ৮০ লাক মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ১০ লাক মেট্রিক টন। বিদেশে আলু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় আলু বেশি হওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের অন্য ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু জেলার কৃষক পরিশ্রমী না, তারা বার বার আলু চাষ করেছে আর লোকসান দিচ্ছে।

সান নিউজ/কেএমএল

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

৬ অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ৬ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কি.মি বেগে ঝড়ে...

আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান। দল বা প্রার...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ শুক্রবার (৩ মে) বেশ কিছু খ...

২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য...

ভারতকে টপকে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতকে সরিয়ে টেস্টে শীর্ষস্থান দখল করেছে অস...

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল ফিলিপাইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিপাইনে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। শুক্র...

মুন্সীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুন্সীগঞ্জের গজ...

আ’লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আওয়ামী...

বায়ুদূষণে ঢাকা আজ ১১তম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বায়ুদূষণের তালিকায় আজ রাজধানী ঢাকার অবস্থা...

২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা