সারাদেশ
গরু নিয়ে বিপাকে গরুর গ্রাম

‘বেচতি না পারলি খামু কি’

বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ থেকে:

‘আমাগো প্রধান আয় হচ্ছে গরু বেচা-কেনা । প্রতি বছর ৮/৯ মাস গরু লালন-পালন করে তা কোরবানিতে বিক্রি করি। যে লাভ হয়, তাই দিয়ে বেয়াক (সারা) বছর সংসারের খরচ চলে। প্রায় ৩০/ ৩৫ বছর হলো, এইভাবে চলছে আমাগো সংসার। অন্যবার কোরবানির এক দেড় মাস আগের থেইকা শহর বা গ্রামের ধনীরা এসে গরু পছন্দ করে বায়না দিয়ে যেতেন। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে কোনো লোক বাড়িতে আসছেন না। আর কোথায় কি হাট বসবে, তাও আমরা জানি না। যদি গরু বেচতে না পারি, তাহলে আমাগো বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। বর্ষার সময় গ্রাম-গঞ্জে কাজ-কামও নাই। কিভাবে বাঁচবো চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি।’

আক্ষেপ করে এসব কথা বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ‘গরুর গ্রাম’ খ্যাত সোনাখালী গ্রামের গরু পালনকারী বৃদ্ধ হালিম গাজী।

প্রায় তিন দশক আগে থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে এঁড়েগরু পালন করে লাভবান হচ্ছেন গ্রামটির মানুষ। কোরবানি ঈদে সেগুলো বিক্রি হয়। গ্রামটির প্রায় ৫০০ পরিবারের সবাই বাড়ির আঙিনায় গরু পালন করে থাকেন। উদ্দেশ্য কোরবানির গরুর হাটে ভালো দামে দেশি গরু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা। সেই লাভের টাকায় ৬/৭ মাসের পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে থাকে।

কিন্তু করোনার কারণে এবার গরুর চাহিদা বা দাম কমে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। অনেকে ঋণ করেও ছোট ছোট গরু কিনে মোটা-তাজা করেছেন।তাদের রয়েছে ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তাও।

উপজেলার জনবিচ্ছিন্ন এলাকা সোনাখালি গ্রাম। প্রায় তিন কিলোমিটার বিল নৌকায় পাড়ি দিয়ে যেতে হয় ওই গ্রামে। চারিদিকে থই থই পানি, ছোট বড় কচুরির ঢিবি আর তার মাঝে ছোট ছোট বাড়ি। সদ্য জেগে ওঠা এক একটি দ্বীপের মতো সব বাড়িতেই পালন করা হয় পাঁচ থেকে বিশটি পর্যন্ত গরু।

নিন্ম আয়ের কৃষক পরিবারগুলো সামান্য মাটি কেটে ভিটা তৈরি করে সেখানে বসতি গড়েছেন বেশ কয়েক দশক আগে। বছরের প্রায় নয় মাস জলমগ্ন থাকা ওই গ্রামে শীত মৌসুমে একবার ধান ফলে। বাকি সময়টা থাকে জলমগ্ন। বর্ষা মৌসুমে এলাকায় কোনো কাজ থাকে না। তাই ওই গ্রামের মানুষ বছরের পর ধরে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছেন।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার পশু প্রাকৃতিকভাবে মোটা-তাজা করা হয়েছে। বাজার থেকে ছোট গরু কিনে খড় ও ভুষির সঙ্গে জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেওয়া ঘাস খাইয়ে লালন-পালন করেন চাষি ও খামারিরা। মাত্র ৫/৬ মাসে এসব বাচ্চা বড় হয়ে ওঠে। এইসব পশুর শরীরে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো ওষুধ ব্যবহার না করায় স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকছে কম।

সোনাখালী গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবারের সবাই গরু মোটা-তাজা করে বিক্রির পেশায় যুক্ত। দেশি প্রজাতির এঁড়ে গরুর বাচ্চা অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে সেগুলোকে লালন-পালন করে থাকেন তারা। ওই গ্রামের বিল ভরা অবারিত প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘাস ও কচুরিপানা রয়েছে। কৃষকেরা গরুর খাবার হিসাবে সেগুলো ব্যবহার করেন। সঙ্গে সামান্য খইল ভুষি ও ধানের খড় ও কুড়া মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তাতেই মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মাসে গরুগুলো হৃষ্ট-পুষ্ট হয়ে ওঠে। গরুগুলো দেশি জাতের হওয়ায় এবং হরমোন ইনজেকশন বা স্টোরয়েড ব্যবহার না করায় এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। গোপালগঞ্জসহ পাশের জেলা বরিশাল ও বাগেরহাটের হাট ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন হাটেও এখানকার গরুর চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

এ কারণে গ্রামটিকে ‘গরুর গ্রাম’ বলা হয়।

সোনাখালী গ্রামের বিকাশ মণ্ডল, প্রভাষ মন্ডল, মিলন গাজী, মনিরুজ্জামান গাজী, মো. সবুর গাজীসহ বেশ কয়েকজন খামারি বলেন, ‘লাভের জন্য কোরবানির গরু পালি। এবার করোনার জন্য কি হবে না হবে তা বলতে পারছি না। গরুর খাবার ভূষি, কুড়া, চিটাগুড়ের দাম বেশি। ধার-দেনা করে অনেক কষ্ট করে গরু বড় করেছি। কিন্তু করোনার কারণে কোনো খরিদ্দার এবার বাড়ি আসছেন না। এ বছর গরুর হাট বসবে কি না তাও জানি না। গরু যদি বেচতে না পারি তাহলে বাঁচাই কষ্ট হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমরা যেন গরু বেচতে পারি, তার ব্যবস্থা করা হোক।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজিজ আল মামুন জানান, এ বছর জেলায় চার হাজার ৩৬৫ পরিবার ২৯ হাজার ৯৮৩ পশু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা-তাজা করেছে। গৃহস্থরাও গরু বা ছাগল লালন-পালন করে থাকেন। এসব পশুর শরীরে কোনো ক্ষতিকারক ওষুধ দেওয়া হয় না, ঘাসের সঙ্গে খড় ও ভূষি খাইয়ে মোটা-তাজা করেন চাষি ও খামারিরা। এসব গরু ভারতীয় বা অন্যসব গরুর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, গরু লালন-পালনের শুরু থেকে বিক্রি পর্যন্ত সব বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগ সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। গরু মোটা-তাজা করতে কোনো অপদ্রব্য ও ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তাও মনিটরিং করা হয়। তবে এ বছর করোনার প্রভাবে গরুর চাহিদা বা দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গরুর হাট বসানোর ব্যপারে সরকারি কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে ভারতীয় গরু বাজারে না এলে গোপালগঞ্জের খামারিরা লাভবান হবেন।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে ভীমরুলের কামড়ে শিশুর মৃত্যু

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ভীমরুলের কামড়ে নুসরাত জাহান সাবিহা নামে ৬ বছর বয়সী এক শ...

যশোর-৬ বিএনপির প্রার্থী তালিকায় তারুণ্যের চমক রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২৩৭টি আসনে যেসব প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে,...

মৌসুমের শুরুতেই মাছের জোয়ার, দুবলারচরে উৎসবমুখর শুঁটকি পল্লী

সুন্দরবনের উপকূলে বঙ্গোপসাগরের তীরে দুবলারচরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। মৌসুমে...

প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে ইবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শারীরিক শিক্ষা’ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের পদ বাতিল...

বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে কনকচাঁপার পরিমিত ও বিশ্বাসভরা মনোভাব

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা...

নোয়াখালীতে সরকারি ভূমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড করার অভিযোগ

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে গণপূর্ত বিভাগের লিজকৃত দোকান ভিটি ব্যক্তির নামে রে...

ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে প্রথম পদযাত্রা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ঢাকা-১৪ আসনের মনোনীত প্রার্থী সানজিদা ইসল...

ইইবিতে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী বহিষ্কার, নয়জনকে সতর্কবার্তা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তিন শিক্ষা...

বাগেরহাটে গৃহবধূর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

বাগেরহাটের রণবিজয়পুর গ্রামে সাদিয়া (৩০) নামে এক গৃহবধূর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধ...

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫

নোয়াখালীর সদর উপজেলায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা