সারাদেশ

পদ্মা নদীকে নাল দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা

শফিক স্বপন, মাদারীপুর: খোদ পদ্মা নদীকেই নাল দেখিয়ে দালাল চক্রের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বড় ধরনের অপচেষ্টা ভন্ডুল হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কর্মসংস্থান করবেন

প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দর সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে যে বড় ধরনের দুর্নীতিও রোধ সম্ভব তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতুর নদী শাসন প্রকল্পের ৪শ ৬০ কোটি টাকা সাশ্রয় বা রক্ষা পাওয়ার ঘটনা। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি থেকে নির্ধারন করার মাধ্যমে দেখা যায় একটি মৌজায় মাত্র ৩১ একর জমি নাল থাকলেও জালিয়াতির মাধ্যমে আরো ১৯৫ একর জমি নদীকে নাল দেখিয়ে বিল উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়। আর এসবই সম্ভব হয়েছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুনসহ প্রশাসনের উদ্যোগে আর চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর কঠোর অবস্থানের কারণে এমনটাই দাবী প্রশাসনের।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প থেকে নদী শাসন প্রকল্পের সুবিধার্থে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পদ্মা নদী তীরের শিবচরের ৬ টি মৌজায় ২২৬.২৭ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাব করা হয়। এরমধ্যে ৫ নং মাদবরচর মৌজায় ২৬দশমিক ১৪ একর নাল, ৯৭ নং দক্ষিন চরজানাজাত মৌজায় ৪২দশমিক৪৮ একর নাল, ৯৫ নং বড় কেশবপুর মৌজায় ২০ দশমিক ৫০ একর নাল, ৯৬ নং কাঠালবাড়ি মৌজায় ১০৮ দশমিক ৭৪ একর নাল, ৯৪ নং বাঘিয়া মৌজায় ২৫দশমিক ৫০ একর নাল, ১০০ নং ভাষালদি মৌজায় ২দশমিক ৯১ একর জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব করা হয়।

আরও পড়ুন: আমাকে খুন করা হতে পারে

পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষর চিঠির প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে সংশ্লিষ্ট যাচাই কমিটি জেলা প্রশাসনের কাছে অধিগ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দাখিল করে। উক্ত প্রতিবেদনে খাস জমি ও নদী শ্রেনীর বিষয়টি উঠে আসায় যৌথ তদন্তকালে নাল ও নদী শ্রেনী চিহিৃত করে বাস্তব শ্রেণীভিত্তিক ফিল্ড বই প্রস্তুত করার জন্য সুপারিশ করা হয়।

ইতিপূর্বে কিছু জমি অধিগ্রহণ হওয়ায় ০.১৪ একর জমি বাদ দিয়ে ২২৬.১৩ একর জমি অধিগ্রহনের ও ৪ (১) ধারায় নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫শ ৫৩ কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুড়ান্ত করা হয়। উক্ত টাকা প্রত্যাশী সংস্থা কর্তৃক জেলা প্রশাসকের অনুকূলে জমা করা হলে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অন্যান্য এলএ কেসে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ২২ হাজার ৭ শ ৭৩ টাকা সমন্বয় করে ৫ শ ৪৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ২ শ ২৭ টাকা অবশিষ্ট থাকে।

ভূমি মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনের জন্য পত্র স্বাক্ষরিত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরপরই বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প হওয়ায় জেলা প্রশাসক সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী করেন সমগ্র প্রকল্প এলাকা বাস্তবে নদী শ্রেণী হলেও ড্রেজিং এর ফলে নাল জমি নদী শ্রেণীতে পরিনত হয়েছে।

স্থানীয়রা দালাল শ্রেণীর সহায়তায় প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে তোড়জোর ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার করেও ব্যর্থ হয়। নদী দৃশ্যমান হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ও সন্দেহ দেখা দিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) কেপ্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জেলা প্রশাসককে এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী পূর্ন সমর্থন দেন। সংসদ সদস্য দূর্নিতীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান কর্মকর্তাদের।

আরও পড়ুন: শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

তদন্ত কমিটি ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে প্রস্তাবিত জমির নাল ও নদী শ্রেণী স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষনপূর্বক চিহিৃত করে মৌজাভিত্তিক নকশা ও স্ক্র্যাচম্যাপ প্রত্যাশী সংস্থার কাছে চায়। কয়েক মাস পর প্রত্যাশী সংস্থা সেন্টার ফর ইনভাইরনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস এর সাথে সমঝোতা চুক্তি করে জিওরেফারেনসিং এর মাধ্যমে ডিজিটাল জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত করে সেই মোতাবেক স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষন করে অধিগ্রহণের এলাইনমেন্ট যুক্ত দাগসমূহের শ্রেনী সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

সেন্টার ফর ইনভাইরনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস এর প্রতিবেদনে অধিগ্রহনের প্রস্তাবকৃত ৬ টি মৌজার মধ্যে শুধুমাত্র কাঁঠালবাড়ি মৌজায় ৩০.৮০ একর নাল ও ০.২৫ একর জমি ডোবাসহ মোট ৩১.০৫ একর নাল জমির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। অপর ৫ টি মৌজার ১৯৫.০৮ একর নদী শ্রেনী হিসেবে পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটি কর্তৃক পুন: যৌথ তদন্ত ও ফিল্ডবুক সম্পন্ন করে চূড়ান্ত দাগসূচী প্রস্তুত করা হয়।

পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ঠ জমির মালিককে ৭ ধারার নোটিশ দেয়া হয়। কোন আপত্তি না থাকায় ক্ষতিপূরন বাবদ ৫ শ ৫৩ কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৯৩ কোটি ১০ লাখ ২৭ হাজার ৬ শ ৯৩ টাকা চূড়ান্ত করা হয়। এতে করে জমির ক্ষতিপূরন বাবদ সরকারের ৪ শ ৬০ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ৩ শ ৭ টাকা সাশ্রয় হয়।

স্থানীয়দের বক্তব্যেও উঠে আসে নদীকে নাল দেখানোর অভিযোগ। নদী সংলগ্ন জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল দাবী করেন প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের একসাথে কাজ করার।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বিপুল পরিমান রাষ্ট্রীয় অর্থ রক্ষায় স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ জানান।

আরও পড়ুন: দিনাজপুরে ২ বাইক আরোহী নিহত

চীফ হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী দূর্নিতীর বিরুদ্ধে এ উদ্যোগে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ লোপাট থেকে রক্ষা পাওয়ায় জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

এ প্রকল্পে অধিগ্রহণ কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে তদারকির সাথে সাথে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমান অর্থ সাশ্রয় হতে পারে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অধিগ্রহণে অনিয়মের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দৃষ্টান্ত।

সান নিউজ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

গজারিয়ায় পুলিশ-সাংবাদিককে মারধর

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: উপজে...

ধানের বাম্পার ফলনেও শঙ্কায় কৃষক

রংপুর ব্যুরো: নানা প্রতিকূলতার মধ...

এবার গ্লোবাল রাউন্ডে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: আঞ্চলিক রাউন্ডে...

ডাস্ট অ্যালার্জির লক্ষণ 

লাইফস্টাইল ডেস্ক: ডাস্ট অ্যালার্জি অতি পরিচিত একটি সমস্যা। প...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (৮ মে) বেশ কিছু খেল...

ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি : পাবনার মুলাডুলি স্টেশন এলাকায় বুড়িমারী এক্স...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) বেশ কিছ...

বজ্রপাতে ৮ গরুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি : রাজশাহীর পবা উপজেলায় বজ্রপাতে আটটি গরুর মৃত...

ইসলামী ব্যাংকের হজ বুথ উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি হজযাত্রীদের...

উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা