সারাদেশ

এক দিনে ৫৮ চা শ্রমিককে হত্যা করে পাকিস্তানিরা

স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এক দিনে একসাথে ৫৮ চা শ্রমিককে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী।

১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া চা বাগানে গণহত্যা চালায় হানাদার বাহিনী। এদিন চা শ্রমিক পরিবারের ৭০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে ১২ জন বেঁচে যান ভাগ্যক্রমে। আর হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ওই বাগানের চা শ্রমিক পরিবারের ৫৮জন।

জানা গেছে, এই বাগানের ম্যানেজার ছিল একজন বিহারী। ২৫ মার্চের কিছু আগে ম্যানেজার বাগান ছেড়ে চলে যায়। ২৫ মার্চের পর অনেক কর্মচারীও বাগান ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। বাগানে শুধু রয়ে যান অনাহারে অর্ধাহারে নির্জীব দেহের চা শ্রমিকেরা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট না দেয়ার কারণে মৌলভীবাজারের তখনকার মুসলিম লীগ নেতা এসে তখন শ্রমিকদের নিয়মিত ভয় দেখাতো।

১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল বর্তমান রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া চা বাগানে প্রবেশ করে পাক হানাদার বাহিনী। এরপর ৭০ জন চা শ্রমিককে ধরে ভাইয়ের সামনে ভাই, ছেলের সামনে বাবা, বাবার সামনে ছেলেকে বিবস্ত্র করে। এরপর তাদের পরনের কাপড় দিয়ে প্রত্যেকের হাত বেঁধে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এদের মধ্যে কোনোমতে ১২ জন চা শ্রমিক মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে যান। গণহত্যার ওই জায়গায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিজস্ব অর্থায়নে একটি বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের উদ্যোগে সংরক্ষণ করা বধ্যভূমিটি এখন ইতিহাসের বর্বরতম ঘটনার স্বাক্ষী।

তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, বাগানে ঢুকেই হানাদার বাহিনী অসহায় গরিব শ্রমিকদেরকে রেশন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একত্রে জমায়েত করে। সাথে নিয়ে আসা একটি বেসামরিক বাসে শ্রমিকদের উঠতে নির্দেশ দেয়া হয়। প্রায় ৭০ জন শ্রমিককে বাসে ভর্তি করে বাস রওয়ানা দেয় মৌলভীবাজার শহরের দিকে। তবে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরই বাসটি খাদে পড়ে যায়। শ্রমিকদের বাধ্য করা হয় বাসটি টেনে তুলতে। ঘটনাস্থলে আরেক পাকিস্তানি মেজর আসে।

এরপর সবাইকে একটি নালার পাশে নিয়ে বিবস্ত্র করে তাদের পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলা হয়। তারপর শুরু করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। মোহিনী গোয়ালা, রবি গোয়ালা, মহেশ কানু, নারাইল কুর্মীসহ ১২ জন সৌভাগ্যক্রমে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান। আহত অবস্থায় ভারতে গিয়ে এই ১২ জন চিকিৎসা নেন। তাদের মাধ্যমেই জানা যায় এই নির্মম হত্যকাণ্ডের খবর।

সেদিন শহীদের খাতায় নাম লিখিয়ে যাওয়া অনেকের নাম এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে এদের মধ্যে উমেশ সবর, হেমলাল কর্মকার, লক্ষনমূড়া, বিজয় ভূমিক, আকুল রায় ঘাটুয়ার, মাহীলাল রায় ঘাটুয়ার, বিনোদ নায়েক, সুনারাম গোয়ালা, প্রহ্লাদ নায়েক, মংরু বড়াইক, বিশ্বনাথ ভুঁইয়া, শাহজাহান ভুইয়া, ভাদো ভুইয়া, আগুন ভুইয়া, জহন গোয়ালাসহ আরো অনেকেই ছিলেন।

স্থানীয় দালালরা জড়িত ছিল এ হত্যাকাণ্ডে। তারাই পরে শ্রমিক ঝুপড়িগুলোতে চালায় লুটপাট। নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে এই বাগানে।

ইতিহাসের বর্বরতম ঘটনার সাক্ষী এই স্থানটি সরকার কিংবা চা বাগান কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দীর্ঘদিনেও গ্রহণ না করায় স্থানটি অরক্ষিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হওয়ার পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ১নম্বর রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুলের হস্তক্ষেপে ও দেওড়াছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দেওড়াছড়া চা বাগানের বধ্যভূমির স্থান চিহ্নিত করে চা শ্রমিকদের গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগে নেয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়নের নিজস্ব অর্থায়নে এখানে একটি বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিটি জাতীয় দিবসে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

আলাপকালে রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল জানান, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল দেওড়াছড়া চা বাগানে এসাথে ৫৮ জন চা শ্রমিককে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। এই স্থানটি আমরা সংরক্ষণের উদ্যোগে নিয়েছি এবং একটি বধ্যভূমি নির্মাণ করেছি। এছাড়া দেওড়াছড়া চা বাগানে গণহত্যার স্থানকে যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদের সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।

সান নিউজ/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুশফিক-শান্তর সেঞ্চুরি; গলে বাংলাদেশের দিন

গলে অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি হতাশার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। গল টেস্টের প্রথম...

এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা; দেশব্যাপী পালনের নির্দেশ

দেশব্যাপী পালনের জন্য এনসিপির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার,...

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই

রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯৩) আর বেঁচে নাই। মঙ্গলবার(১৭ জুন) ভোর...

বাংলাদেশের আলিফ এশিয়ান আরচ্যারির ফাইনালে

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ আরচ্যারি স্টেজ-২ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের আলিফ...

গিলক্রিস্টকে টপকে মুশফিকের বিশ্বরেকর্ড

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে টপকে বিশ্বরে...

৪৮৪ রানে ২য় দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিম আউটের পরপরই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকলো টাইগাররা। শেষ বিকেলে...

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫- এর উদ্বোধন

জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহ উৎসব ২০২৫ এর উদ্বোধন ও আম চাষীদের সাথে মতবিনিম...

সামরিক হস্তক্ষেপ করলে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হবে যুক্তরাষ্ট্রের: খামেনি

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে যদি যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে তবে তাদের ‘অপূরণীয় ক্...

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আর কতদিন চলতে পারে

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আর কতদিন চলতে পারে। তেল আবিবের আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠ...

মেটার নতুন সিদ্ধান্ত; ফেসবুকে থাকছে না ভিডিও!

মেটার নতুন সিদ্ধান্ত; ফেসবুকে থাকছে না ভিডিও! ভিডিও কনটেন্টে পরিবর্তন আনছে সা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা