সারাদেশ

পুরাতন ইটের খোয়া ও রড দিয়ে তৈরি হচ্ছে সরকারি পাকা ঘর

রেজাউল করিম, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়টি পদ্মা নদী কেন্দ্রিক দরিদ্র অসহায় মানুষের বসবাস সবচেয়ে বেশি।

এ ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের দেয়া মুজিববর্ষে কেউ থাকবে না গৃহহীন, জমি আছে ঘর নেই এবং জমি ও ঘর নেই প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনের ইটের খোয়া ও মরিচাপরা রড দিয়ে।

অনেক দরিদ্র পরিবার তাদের পরিবহন খরচ যোগাতে না পেরে সরকারি ঘর তুলতে পারছেন না তাদের জমিতে। অথচ এ ঘরগুলো তৈরিতে পুরাতন মালামাল ব্যবহার করা যাবে না এবং গ্রাহক ঘর তৈরিতে তাদের কোন ধরনের খরচ হওয়ার কথা ছিল না। সরকারি ঘর তৈরিতে পুরাতন মালামাল ব্যবহার, নিজ বাড়িতে সরকারি ঘর তৈরি ও দরিদ্র গ্রাহক পরিবহন খরচ দিয়ে তাদের ঘরের সরঞ্জাম আনতে বাধ্য হচ্ছেন।

এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন সরকারি ঘর পাওয়া গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হেসেনের বিরুদ্ধে।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শত বছরের পরিত্যক্ত ভবনের ইট, ইটের খোয়া ও পুরাতন মরিচা পরা রড দিয়ে সরকারি নতুন ঘর তৈরির লিংটন বানিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্তুপ করে রাখা হয়েছে নষ্ট ইটের খোয়া ও মরিচা পরা পেঁচানো রড।

ইউনিয়নের চরাঞ্চল মহিদাপুর গ্রামে যেখানে ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে- এগুলো পুরাতন ইটের খোয়া, পুরাতন মরিচা পরা রড, বালিতে সিমেন্টর পরিমান কম দেওয়া ও নম্বরবিহীন ইটের ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোদমে। আবার রাস্তা ঘাট না থাকায় সেখানে ঘর বরাদ্দ পাওয়া অসহায় মানুষগুলো ঘর তৈরির সরঞ্জাম আনতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে। যারা দিতে না পারছেন তারা বাড়িতে ঘর তৈরি করতে পারছেন না। কিন্তু ঘর তুলতে কোন ধরনের ব্যক্তিগত খরচ হওয়ার কথা ছিল না গ্রাহকদের। প্রকল্প বাস্তবায়নের যাবতীয় খরচসহ ঘর প্রতি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকার পুরো অর্থ বরাদ্দটাই দিয়েছেন সরকার।

গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের দরিদ্র ৪শ ৪০ জন মানুষ সরকারি ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়েছে। শহর থেকে ঘর তৈরির সরঞ্জাম রড, সিমেন্ট, বালু ও ইটসহ অন্যান্য যাবতীয় মালামাল আনতে নিজ পরিবহন খরচ বহন করতে হয়েছে। অনেক দরিদ্র পরিবার তাদের নগদ অর্থ না থাকায় ঘর তৈরি করতে পারছেন না। অথচ আগামী ১৫ জানুয়ারি তারিখের মধ্যে এসব ঘর পরিপূর্ণভাবে তৈরি করে দরিদ্র গ্রাহকদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়ার সময় নির্ধারিত করা হয়েছে।

এমন দুর্নীতির কারণে সরকারের এই মানবিক প্রকল্প মুখ থুবড়ে পরার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ইউনিয়নে জমি আছে ঘর নাই মুজিব বর্ষে কেউ থাকবে না গৃহহীন এই প্রকল্পের ৬৫ জন দরিদ্র পরিবারকে ঘর দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ইউনিয়নের প্রায় ৬০ জন দরিদ্র পরিবার সরকারি ঘর পেলেও বাড়তি খরচ যোগাতে না পেরে ঘর তৈরি এখন তাদের স্বপ্নেই থেকে যাচ্ছে। পুরাতন মালামাল ব্যবহার ও যেন তেনভাবে ঘর তৈরি কারণে নতুন এ ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন দরিদ্র পরিবারগুলো।

এমন অভিযোগ উজানচড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। তারা বলেন, এরই মধ্যে ঘরের দেওয়ালের অনেক স্থানে তৈরি হওয়ার আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল। ঘর তৈরির সরঞ্জাম পরিবহন খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে আনতে হচ্ছে মালামাল। অনেকে পরিবহন খরচ দিতে না পারায় ঘরের মালামাল দেওয়া হচ্ছে না।

গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন জানান, পরিত্যক্ত ভবনের ইট, ইটের খোয়া, মরিচা পরা রড, নিজ বাড়িতে সরকারি ঘর তোলা, সরকারি টাকায় পুকুর পাড় বাঁধা ইত্যাদি দুর্নীতি অভিযোগ করা হলে তার কাছ থেকে কোন ধরনের সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ সময় তিনি নানা ধরনের গোজামিল দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে পুরাতন পরিত্যক্ত স্কুলের ভবন ক্রয় করেছেন বলে স্বীকার করেন।

গোয়ালন্দ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ বলেন, সরকারি ঘরে কোন ধরনের পুরাতন মালামাল ব্যবহার করা যাবে না, এ ধরনের অনিয়ম করা হলে অনিয়মের সাথে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ও প্রকল্প সভাপতি আমিনুল ইসলাম ঘর তৈরিতে গ্রাহককে পরিবহন খরচ বহন করা ও ঘরে নিমার্ণের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অনিয়ম প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা উপকারভোগী রয়েছেন ঘর তৈরিতে কারো কাছ থেকে কোন ধরনের পরিবহন খরচ নেওয়া যাবে না। তবে গ্রাহক মালামাল বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। তবে ঘর তৈরিতে পুরাতন কোন ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, সরকারি ঘর তৈরিতে কোন ধরনের পুরাতন মালামাল ব্যবহার করা যাবে না। সরকারি ঘরে অনিয়ম দুর্নীতি করা হলে এটা কঠোর হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত করে যদি এর সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

সান নিউজ/কেটি/এস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা একমাস দাবদ...

মিল্টন সমাদ্দার রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৃত্যুর জাল সনদ তৈরির অভিযোগে প্রতারণা ও জ...

আমিরাতে প্রবল বৃষ্টিপাত, সতর্কতা জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রবল বৃষ্টিপা...

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

ভরিতে ১৮৭৮ টাকা কমলো স্বর্ণের দাম 

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা অষ্টমবারের...

ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনজন বরখাস্ত

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা...

ভারতকে টপকে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতকে সরিয়ে টেস্টে শীর্ষস্থান দখল করেছে অস...

ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

জেলা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার মিরপুরে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেন...

যারা চাপে রাখতে চেয়েছিল তারাই চাপে

নিজস্ব প্রতিবেদক : যারা আমাদেরকে চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই...

২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা