ছবি: সংগৃহীত
শিল্প ও সাহিত্য

২৭ এপ্রিল: শরচ্চন্দ্র পণ্ডিত এর জন্মদিন

সাননিউজ ডেস্ক

শরচ্চন্দ্র পণ্ডিত এর জন্ম ১৮৮১ সালের ২৭ এপ্রিল। শরচ্চন্দ্র পণ্ডিত, বাংলা সাহিত্যের পাঠক সমাজে দাদাঠাকুর নামেই পরিচিত, ছিলেন একজন বাঙালি কথাশিল্পী ও সাংবাদিক। যিনি মুখে মুখে ছড়া, হেঁয়ালী ও হাস্যকৌতুক রচনা করতেন। তাঁর রচিত নানান হাসির গল্প বাঙলা সাহিত্যের অমর কীর্তি। তাঁর প্রকাশিত বিখ্যাত গ্রন্থ বোতল পুরাণ।

শরচ্চন্দ্রের বংশের আদি নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমার নলহাটি থানার অন্তর্গত ধর্মপুরে। সেরা মানুষ শরচ্চন্দ্র গ্রন্থে শরচ্চন্দ্র পণ্ডিতের বংশের পূর্ব-পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে-

“জেলা বীরভূম রামপুরহাট মহকুমার নলহাটি থানার এলাকায় ধর্মপুর নামে একটি পল্লীগ্রাম আছে৷ ধর্মপুর কাশিমবাজারের দানশীলা রাণী আন্নাকালী দেবীর মহালের অন্তর্গত৷ রাণীমা উক্ত ধর্মপুরের "পণ্ডিত" উপাধিধারী রাঢ়ীশ্রেণী ব্রাহ্মণ বংশের এক গৃহস্থকে গ্রামখানি পত্তনী বন্দোবস্ত দেন৷..”

পারিবারিক বিবাদের ফলে শরচ্চন্দ্রের পিতামহ ঈশানচন্দ্র পণ্ডিত তাঁর সাতপুরুষের ভিটেমাটি ত্যাগ করে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমার দফরপুরে এসে বসবাস শুরু করেন৷ এই দফরপুরই শরচ্চন্দ্রের পৈতৃক বাসস্থান৷

শরচ্চন্দ্র মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমার দফরপুর গ্রামে বাস করতেন। তাঁর জন্ম মাতুলালয়ে বীরভূম জেলার নলহাটি থানার অন্তর্গত সিমলাদ্দি গ্রামে। পিতা দরিদ্র ব্রাহ্মণ হরিলাল পণ্ডিত। শৈশবেই তিনি পিতা-মাতাকে হারান। কিন্তু তাঁর পিতৃব্য রসিকলাল তাঁকে কোনদিনই তাঁদের অভাব বুঝতে দেন নি। তার স্নেহ-ভালবাসা বেড়ে ওঠা দরিদ্র পরিবারের সন্তান শরৎচ্ন্দ্র জঙ্গিপুর হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে বর্ধমান রাজ কলেজে এফ.এ. ক্লাসে ভর্তি হন কিন্তু আর্থিক কারণে পড়া শেষ করতে পারেননি।

জঙ্গীপুরে তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করতেন কিন্তু অত্যন্ত তেজস্বী মানুষ ছিলেন। চারিত্রিক দৃঢ়তায় ছিলেন আধুনিক কালের বিদ্যাসাগর। মাত্র ২১ বৎসর বয়সে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে 'পণ্ডিত প্রেস' নামে একটি হস্তচালিত ছাপাখানা রঘুনাথগঞ্জে স্থাপন করেন তিনি। তাঁর একক প্রচেষ্টায় 'জঙ্গীপুর সংবাদ' নামে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করতে থাকেন। এই পত্রিকা বাংলার বলিষ্ঠ মফস্বল সাংবাদিকতার প্রথম উদাহরণ। পণ্ডিত প্রেসে তিনিই ছিলেন কম্পোজিটর,প্রুফ রিডার, মেশিনম্যান। সমস্ত কিছুই একা হাতে করতেন। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর ছাপাখানার বিবরণ দিতে গিয়ে বলতেন -

"আমার ছাপাখানার আমিই প্রোপাইটর, আমি কম্পোজিটর, আমি প্রুফ রিডার, আর আমিই ইঙ্ক-ম্যান। কেবল প্রেস-ম্যান আমি নই। সেটি ম্যান নয় - উওম্যান অর্থাৎ আমার অর্ধাঙ্গিনী। ছাপাখানার কাজে ব্রাহ্মণী আমাকে সাহায্য করেন, স্বামী-স্ত্রীতে আমরা ছাপাখানা চালাই।"

এছাড়া তাঁর প্রকাশিত 'বিদুষক'পত্রিকায় বেরতো তাঁর নিজের রচিত নানা হাসির গল্প ও হাস্য কৌতুক। বিদূষক পত্রিকা রসিকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দাদাঠাকুর নিজে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে বিক্রি করতেন এই পত্রিকা। প্রাক স্বাধীনতার সময় কলকাতার রাস্তায় গান গেয়ে 'বোতল পুরান' পুস্তিকাটি ফেরি করতে গেলে ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে আসে, তাদের জন্য তৎক্ষণাৎ বানিয়ে ইংরেজিতে গান ধরলেন তিনি।

"আই অ্যাম কামিং ফ্রম মুর্শিদাবাদ/ বাট নট ফ্রম বারহাম্ পোর,/হ্যাড আই কাম ফ্রম দ্যাট ভেরি প্লেস/অল মাইট হ্যাভ শাট্ আপ দ্য ডোর,/দে মাইট হ্যাড থট্ দ্যাট্ হ্যাভ কাম/ ফ্রম দ্য ফেমাস অ্যাসাইলাম,/আই অ্যাবোড ইন সাচ এ প্লেস/হুইচ ইজ নাউ ইন ফুল ডিসট্রেস্। .... দ্য ম্যজিস্ট্রেট হ্যাজ ইন্ডেন্টেড মি/টু এন্টারটেন্ ইওর এক্সেলেন্সি।_"

শ্বেতাঙ্গ পুলিশ খালি গা ও খালি পায়ের এমন এক হকারকে ইংরেজিতে গান গাইতে দেখে হতবাক হয়ে যায় এবং শুধু উৎসাহ জোগাতেই আট কপি কিনে নেন। তার কাব্যপ্রতিভা, রসবোধ ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ছিল সহজাত। ইংরেজি ভাষাতে যে প্যালিনড্রোম বা উভমুখী শব্দ আছে সেরকম বাংলায় শব্দ সৃষ্টি করেছেন। হিন্দি ও ইংরেজিতেও কাব্য লিখেছেন তিনি। তার ব্যাঙ্গাত্বক কবিতাগুলি ছিল সমাজের অত্যাচারী কুপ্রথার বিরুদ্ধে জলন্ত প্রতিবাদ স্বরূপ। স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাকে শ্রদ্ধা করতেন।

তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে বিখ্যাত ‘বোতল পুরাণ’। তাঁর লেখা হাস্যরসাত্মক গানগুলিও খুবই চিত্তাকর্ষক। বিভিন্ন প্রচলিত গানের প্যারোডি নির্মাণ করে নিজের রঙ্গরসের পরিচয় দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবি অতুলপ্রসাদ সেন -এর লেখা ‘আ-মরি বাংলা ভাষা’-র প্যারোডি। সেখানে উনি লেখেন–

“আ-মরি বাংলা ভাষা, তোমার বাঁচার নাইকো আশা।”

মদ্যপান উনি পছন্দ করতেন না, কলকাতার মাতাল এবং গঞ্জিকা সেবকদের খোঁচা মেরে তিনি লেখেন, ‘বোতলে বোতলে যা আছে আরাম’, ‘মজা করে খাও রে গাঁজা’ প্রভৃতি ব্যাঙ্গাত্মক গান।

তার জীবন নিয়ে ৬০ এর দশকে একটি ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের জীবিতকালে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস। এছাড়া অন্যান্য শিল্পীরা হলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জী, সুলতা চৌধুরী ও তরুণ কুমার। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যে ছবি বিশ্বাস জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।

দাদাঠাকুর শরচ্চন্দ্র পণ্ডিত ১৯৬৮ সালের ২৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

সাননিউজ/ইউকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দুর্বল শাসন কাঠামোই বাংলাদেশে সরকার পতনের কারণ: দোভাল

দুর্বল শাসন কাঠামোই বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের মূল...

আজ থেকে শুরু জাটকা ইলিশ ধরায় আট মাসের সারাদেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা

দেশের প্রধান মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই সংরক...

আজ থেকে বন্ধ অর্ধকোটি মোবাইল সিম, বিটিআরসির কড়াকড়ি শুরু

সাইবার নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনের আগে সিম ব্যবহারের অপব্যবহ...

ঢাকার পাতাল মেট্রো প্রকল্পে স্থবিরতা, বাস্তবায়নে লাগবে আরও এক যুগ

দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০২...

শেখ হাসিনার সাবেক পিয়ন থেকে ‘কোটিপতি জাহাঙ্গীর’, ১০০ কোটি টাকার পাচার মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবে...

দুই বছরের দায়িত্বে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক শান্ত

ফের বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ২০২৭ সাল পর্...

জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধ হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে: ড. রেজাউল করিম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের...

শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহ্বান

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেখ হাসিনাকে আইনের মুখোমুখি করতে হবে...

মোরেলগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দুর্ভোগে ইউনিয়নবাসী

তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা...

কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাফনের কাপড় পড়ে বিক্ষোভ মিছিল

ময়মনসিংহের ভালুকায় ভরাডোবা ইউনিয়নের এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিলের কেমিক্যাল ম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা