খোয়াই নদী
ফিচার

সিলেট অঞ্চলে নদ-নদীর মানচিত্র পরিবর্তন হচ্ছে!

ফয়সল চৌধুরী, হবিগঞ্জ: সিলেটের নদ-নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন এখন প্রকট সমস্যায় রূপ নিয়েছে। নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধ্যভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নদ-নদীর তীর ভাঙনে নদীর মানচিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। নদী ভাঙনে বিলিন হচ্ছে অনেক ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে গোলাগুলিতে নিহত ৪

এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে বাপাসহ ছয়টি পরিবেশবাদী সংগঠন একটি নাগরিক শুনানি কর্মসুচির আয়োজন করে। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বেলা ১১টায় বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে এই নাগরিক শুনানি’র কার্যক্রম শুরু হয়।

সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন নদ নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও নাগরিক প্রতিনিধিরা শুনানিতে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট জুরি বোর্ড অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনেন। জুরি বোর্ডের প্রধান ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, সদস্য ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন, প্রবীণ সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, লেখক তাহমিনা বেগম গিনি ও প্রবাসী কমিউনিটি নেতা অ্যাডভোকেট রাফি চৌধুরী।

প্রতীকী এই কর্মসূচিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করেন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম, প্রশাসনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তাহমিনা খান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ উদ্দিন শুভন।

অভিযোগগুলোর পক্ষ অবলম্বন করে সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক সোয়েব চৌধুরী , অ্যাডভোকেট বিজন বিহারী দাস, লেখক ও গবেষক সিদ্দিকী হারুন প্রমুখ।

শুনানিতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী মানুষেরা। তারা জেলা প্রশাসনের কাছে এসব সমস্যার প্রতিকার ছেয়েছেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাপা হবিগঞ্জ এর সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল।

নাগরিক শুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার, সারি বাঁচাও আন্দোলন এবং বাঁচাও বসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ।

নাগরিক শুনানিতে বলা হয়, সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, মনু, যাদুকাটা, সারি, গোয়াইন, পিয়াইন, ধলা, লোভা, ধলাই, লাঘাটা, করাঙ্গি, চেঙেরখাল, কালনি, রত্না, নলজুর, চেলা, চলতি, ধোপাজান নদীসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া থেকে অবৈধ্যভাবে নির্বিচারে বালি উত্তোলন চলছে। যা বন্ধে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা রয়েছে। অবাদে বালি উত্তোলনের কারণে নদীগুলোর তীর ভেঙে সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করছে। নদী থেকে বালি উত্তোলনের জন্য সরকার নির্ধারিত বালি মহাল ইজারা প্রদান করে। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ ইজারা নেয় এক জায়গার আর বালি উত্তোলন করে অন্য জায়গায়। ইচ্ছেখুশি মতো ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করতে থাকে। যা নদীর ক্ষতিতো করেই, পাশাপাশি নদী তীরবর্তী মানুষকে সর্বশান্ত করে দেয়।

নাগরিক শুনানি শেষে আট দফা পর্যবেক্ষণসহ রায় ঘোষণা করেন জুরি বোর্ডের প্রধান শরীফ জামিল।

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০

রায়ে বলা হয়, বালু উত্তোলনের জন্য সিলেট অঞ্চলের নদ-নদী ও জলাশয়সহ সংশ্লিষ্ট গ্রাম ও কৃষি জমি এবং প্রাণ-প্রকৃতি চরম হুমকির সম্মুখীন। এতে সমাজে একটি অবৈধ সুবিধাভোগী শ্রেণীর উত্থান ঘটেছে। যা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। বালি মহাল ব্যবস্থাপণা কমিটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ ও নাগরিক প্রতিনিধির সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। জুরি বোর্ড লক্ষ্য করেন যে, বালি উত্তোলন একটি প্রয়োজনীয় বিষয় তবে তা পরিকল্পিত হওয়া বাঞ্চনীয়। এক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বালি মহালের তালিকা যথাযথভাবে প্রনয়ন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং নির্দিষ্ট বালু মহালের সীমানায় সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।

আদালতের রায় অনুযায়ী জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলা ও নদী কমিশন আইনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সাথে উপজেলা-জেলা ও বিভাগীয় কমিটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক গঠন ও কার্যকর করতে হবে। যৌথনদী কমিশনকে দেশের সীমান্তবর্তী নদী সমুহের পানি, পলি, বালু এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানের প্রবাহ ও পরিমান সংক্রান্ত তথ্যপ্রাপ্তি ও তা ব্যাবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারী ও স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ, প্রনোদনা, শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বালি উত্তোলন, নদী ব্যাবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারী সামাজিক সংগঠন সমুহকে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করতে হবে।

নাগরিক শুনানিতে পিয়াইন, ডাউকি, ধলা, লোভা ও চেঙেরখাল নদীর পক্ষে আব্দুল হাই আল হাদী, খোয়াই নদী মাসুলি এলাকা থেকে অভিযোগ করেন শেখ ওসমান গনি রুমি, খোয়াই নদী শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা ও সুতাং নদী নিয়ে সাংবাদিক মামুন চৌধুরী, সারি নদী নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন শামিম আহমেদ, খোয়াই নদীর চুনারঘাট অংশ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন মনসুর আহমেদ এবং নুর উদ্দিন সুমন, কুশিয়ারা নদী নবীগঞ্জ অংশ নিয়ে অভিযোগ করেন সাংবাদিক সনি চৌধুরী, জাদুকাটা, ধোপাজান নদী নিয়ে কথা বলেন শিমন চৌধুরী, কুশিয়ারা ও কালনী নদীর আজমিরীগঞ্জ এলাকাযর পক্ষে সাংবাদিক শরীফ চৌধুরী, রত্না, কুশিয়ারা এবং হাওর অঞ্চলের বালুচর নিয়ে কথা বলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মোমিন, সাংবাদিক আব্দুল হালিম প্রমুখ।

সান নিউজ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বোয়ালমারীতে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

বোয়ালমারীতে হত্যাচেষ্টা মামলায় সুদেব সিং গ্রেফতার

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে...

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ফটোসেশন

স্পোর্টস ডেস্ক : আগামী ২ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের...

স্বামীর হাতে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে পারিবারিক কলহের জে...

কান উৎসবে নজর কাড়লেন ভাবনা

বিনোদন ডেস্ক: কান চলচ্চিত্র উৎসবে...

শুরু হচ্ছে বার্সা একাডেমির ট্রেনিং ক্যাম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইন্টারন্যাশনাল...

বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র কাজে দেয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির দেশবিরো...

ডাল কিনছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ট্রেড...

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ৫২ নেতা বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দলীয় সিদ্ধান্ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা