নিজস্ব প্রতিবেদক: গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তাসাদ্দেক আহমেদের ইন্ধনে আইন বিভাগের শিক্ষক লিমন ও তার বাহিনী কর্তৃক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ‘আগুনমুখা’র নেতৃত্বে ফাহাদ-সামদানী
মঙ্গলবার (১৪ মে) সকাল ১০ টার দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করতে গেলে এ হামলার শিকার হন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। আহত শিক্ষার্থী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পিএইচডি সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকে অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্র ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এর আগে রোববার (১২ মে) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নগর হাসপাতালের সামনে ট্রাস্টি বোর্ডের সভা চলাকালে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
আরও পড়ুন: হরিপুরে একদিনে ২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
এ দিন বেলা ১১টায় ঢাকার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নগর হাসপাতালে পূর্ব নির্ধারিত গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারের দূর্নীতিসহ বেশ কিছু অভিযোগ লিখিত আকারে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের নিকট হস্তান্তর করেন। পরে ট্রাস্টি বোর্ড সভায় রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এতে রেজিস্ট্রার ক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে ডেকে নিয়ে নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দেন। তার সহযোগী শিক্ষকদের রেজিস্ট্রার নির্দেশ দেন, দরকার হলে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেবে। ফলশ্রুতিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তাসাদ্দেক আহমেদ আগে নিজেকে ডক্টরেট বলে পরিচয় দিতেন। পরে জানা যায় আসলে তার পিএইচডি ডিগ্রি ছিল না।
আরও পড়ুন: ইবির প্রথম বাসকে ভাস্কর্যে রূপ দেয়ার দাবি
এছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিল। এ অবস্থায় ট্রাস্টিরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এতেই রেজিস্ট্রার ও তার চক্র আন্দোলন দমন করাতে তার অনুগত বিভিন্ন শিক্ষক এবং ছাত্রদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে।
আহত শিক্ষার্থী ও রেজিস্ট্রার অপসারণ আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবিদ হোসেন বলেন, চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা কয়েকজন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের অবগত করার একপর্যায়ে আইন বিভাগে গিয়ে কথা বলি। এ সময় আইনের শিক্ষক লিমন হোসেন আমাকে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন।
আন্দোলনের কথা জানানো মাত্রই তিনি আমার ওপর উগ্র আচরণ শুরু করেন। প্রথমে গালিগালাজ, পরে সরাসরি আক্রমণ করেন। তিনি মুখে ও বুকে চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন। ঘটনাস্থলে আইন বিভাগের শিক্ষক ও অন্যান্য বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তারা লিমন হোসেনকে মারতে বাধা দিতে থাকেন।
এরপর সেখান থেকে ফিরে ট্রান্সপোর্ট চত্বরে আসার পরেই অন্তু দেওয়ানসহ আইনের কিছু শিক্ষার্থী ও অন্য বিভাগের কয়েকজন এসে অতর্কিত হামলা করে। মারের প্রকোপে মাটিতে পড়ে গেলেও তাদের মারধর চলতেই থাকে। পরবর্তীকালে আমার সহযোগীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাতাহাতির বিষয়ে অভিযুক্ত আইন বিভাগের প্রভাষক লিমন হোসেন বলেন, রাজনীতি ও রসায়ন বিভাগের কয়েকজন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমাকে অপমানজনক কথা বলে।
আরও পড়ুন: ২য় ধাপের শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল
একপর্যায়ে তারা গায়ে হাত তোলার জন্য তেড়ে আসে। তখন আমাদের বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা এর সমাধান করে।
আমাকে কিছু শিক্ষার্থী এসে জানায় ক্লাসের টাইমে রসায়ন ও রাজনীতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রারের বিপক্ষে মানববন্ধন করার জন্য আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এবং জোর-জবরদস্তি শুরু করে।
এটা শোনার পর আমি তাদের সাথে কথা বলার জন্য বের হই ও বোঝানোর চেষ্টা করি। তখনই তারা ক্ষিপ্ত হয় এবং ঘটনাটি ঘটে। পরে সামাজিক মাধ্যমের বরাতে জানতে পারি নিচে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, মানববন্ধনে হাতাহাতির ঘটনা শুনেছি। আন্দোলনে ৫ শিক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে একজন সাবেক শিক্ষার্থী, অন্যজন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
আরও পড়ুন: ইবিতে শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের সংঘর্ষ, আহত ৭
সেখানে আইন অনুষদের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করছি। গত ১২ মে ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় এসব অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। পরে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে ট্রাস্টি বোর্ড।
এতেই তিনি (রেজিস্ট্রার) ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করতে গেলে আমরা হামলার শিকার হই। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার তাসাদ্দেক আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম না।
সান নিউজ/এনজে