ফেরার প্রতীক্ষায় জেলে পরিবারে আহাজারি, নিরব মিয়ানমার
সারাদেশ

ফেরার প্রতীক্ষায় জেলে পরিবারে আহাজারি, নিরব মিয়ানমার

এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার : আজ রবিবার ( ১০ এপ্রিল ) সকালে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ায় ঢুকতেই দূর থেকে কানে ভেসে আসে বিলাপের উচ্চ শব্দ। ও আল্লাহ মর পোয়া রে, তুয়ারা আনি দ না। (আল্লাহ আমার ছেলেকে এনে দাও) বলে বিলাপ করছিলেন জেলে হেলালের মা নুর বেগম। বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে ফেরার পথে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪টি নৌকাসহ ১৮ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। তাঁদেরই একজন হেলাল।

আরও পড়ুন : সরকারি চাকুরেদের বেতন ২৫ এপ্রিল

গত মাসের (১৬ মার্চ)মঙ্গলবার বিকেলে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৫দিন পর হলেও জেলেদের ফেরত দেয়নি বিজিপি।এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে জেলে পরিবারগুলো। হেলালের মতোই প্রত্যেক জেলের ছেলেমেয়ে, মা–বাবা ও আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁদের ফেরত পেতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা।

শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ায় একই বাসিন্দা জহুরা খাতুন। তার দুই সন্তান সোলতান আহমদ ও রশিদ আহমদকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। তবে দুই সন্তান কোথায় আছে, কেমন আছে জানেন না এই মা। ২৫দিন পার হলেও দুই সন্তানের খোঁজ পাইনি। তারা কি বেঁচে আছে সেটা নিয়ে সন্দেহে আছে জুহুরা খাতুন।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে

জহুরা খাতুন বলেন, টাকা রোজগারের জন্য ছেলেরা মাছ শিকারে গেছে, কিন্তু আজও ফিরে এলোনা। ২৫দিন পরেও তাদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমার। নাফদের পাড়ে ছেলেদের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় বসে থাকি। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের দেখাশুনা করার কেউ নেই, ওরা দ্রুত না ফিরলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। অবিরাম কান্নায়, কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।

ধরে নিয়ে যাওয়া টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ১৮ জেলেকে ফেরতের বিষয়ে ১৬মার্চ থেকে ১০এপ্রিল পর্যন্ত মিয়ানমার বিজিপি কোন সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার। তিনি জানান, আমরা মিয়ানমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এর আগে জেলেদের বিষয়ে চিঠি প্রেরন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁরা কোন সাড়া দেয়নি।

আরও পড়ুন : সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরি করছে প্রেস কাউন্সিল

মিয়ানমার বিজিপি ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেরা হলো, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার মো. রমজান, মো. জামাল, মোহাম্মদ জসিম, রশিদ ইসলাম, মো. ফয়সাল, মো. আকবর, নজিম উল্লাহ, মো. রফিক, আবু তাহের, মো. হোসেন, হাসমত, মো. সাব্বির, মো. সুলতান, মো. ইসহাক, আবদুর রহমান, নুর কালাম, রেজাউল করিম ও মো. হেলাল।

বিজিপির হাতে আটক জেলে হেলাল-এর ভাই মো. আয়াছ জানান, আজ এতদিন হয়ে গেল আমার ভাইদের ফেরত দেয়নি। ফলে পরিবারের স্বজনরা খুবিই ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে। তাঁরা কেমন আছেন কেউ কিছু বলতে পারছেনা। তাছাড়া প্রায় সময় সাগর থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার বিজিপি। অনেক সময় মুক্তিপন দিয়ে ফেরে আবার অনেক সময় জেলও দেয়।

আরও পড়ুন : নজরদারিতে থাকবে থানার সার্ভিস ডেস্ক

এদিকে মিয়ানমার ধরে নিয়ে যাওয়া আঠারো জেলে পরিবারের অস্থির হয়ে পড়ছেন। তাদের স্বজনদের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে উৎকন্ঠায় সবাই। সেদিন ধরে নিয়ে যাওয়ার মধ্য ছিল ১১ বছরের শিশু আরাফাতও। তখন ১৭ জেলের সাথে শিশুটিকেও ধরে নিয়ে যায় বিজিপি। এখন ছোট বুকের ধনের জন্য কান্না থামেনা মা রেহেনা বেগমের।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, ১৬মার্চ মঙ্গলবার সকালে প্রতি দিনের ন্যায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মো. জসিম, নুর কালাম, মো. ইসলাম ও নুর কালামের মালিকাধীন চারটি নৌকায় ১৮ মাঝিমাল্লা সাগওে মাছ শিকারে যায়। মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে একই দিন মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে শাহপরীর দ্বীপের কাছাকাছি নাইক্ষ্যংদিয়ার এলাকায় কাঠবোঝাই ট্রলারটি দেখতে পায়। এসময় জেলারা ডুবে যাওয়া ট্রলারের উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। পরে তারা ফিরে আসার সময় মিয়ানমার বিজিপি স্পীড বোটে এসে তাদের ধাওয়া করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যায়। তিন দিন পরও তাদের ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোন সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।

আরও পড়ুন : পুরুষ ধর্ষণ আইন সংশোধনের পক্ষে রুল

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কায়সার খসরু জানান, আমি উপজেলায় যুক্ত হয়েছি বেশি দিন হচ্ছে না। আমি আসার আগে ১৮ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মায়ানমার এই রকম শুনেছি। আমার আগে টেকনাফে যিনি নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে ছিলেন পারভেজ চৌধুরী তিনি মিয়ানমারে আটক জেলেদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। এসময় এসব পরিবারকে আর্থিক অনুদানসহ খাদ্রসামগ্রহী দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমি তাদের দ্রুত ফেরত আনার বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, 'মিয়ানমারে আটক তার এলাকার ১৮ জেলেদের পরিবারে কান্নার আহাজারি চলছে। তাদেরকে শান্ত দেওয়া হচ্ছে। ইতি মধ্য এসব পরিবারের মাঝে সহতায় দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব

প্রসঙ্গত,গত ১৬মার্চ টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার ১৮ জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যায়। মাছ শিকার করে ফিরার পথে অস্ত্র ঠেকিয়ে ১৮ জেলেসহ বাংলাদেশি চারটি নৌকা ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। ২৫দিন পার হলেও এখনো মায়ানমার কোন রকম সাড়া দিচ্ছে না।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলা বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালিত

ভোলা প্রতিনিধি: বর্ণাঢ্য আয়োজনে ভ...

সৌদি গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছর পবিত্র হজের প্রথম ফ্লাইটের আনুষ্...

মে মাসে ৮ দিনেই বজ্রপাতে ৪৩ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি মে মাসের গত ৮ দিনে সারা দেশে বজ্রপাতে...

ওজন কমাতে ওটস

লাইফস্টাইল ডেস্ক: ওটস নির্ভয়ে কাঁ...

স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

জেলা প্রতিনিধি: মেহেরপুর জেলার সদ...

কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি: পটুয়াখালী জেলার হালিমা জান্নাত মালিহা (২৪) ন...

সবজির বাজারে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাপ্তাহিক ছুটির...

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা