ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

থামেনি মণিপুরের দাঙ্গা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের মণিপুর রাজ্যে টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা এখনো থামেনি। এ সহিংসতার জেরে এখন পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩৯০ জন।

আরও পড়ুন : তৃণমূল নেতাকে গুলি করে হত্যা

স্থানীয়রা বলছেন, মণিপুর এখন ২ টুকরো হয়ে গেছে। একটা অংশে আছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ, অন্য অংশে রয়েছেন কুকিরা। এ সহিংসতা চলছে টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে। এতে পরিবার ধ্বংস হয়েছে, বাড়িঘর জ্বলে পুড়ে গেছে, উজাড় হয়েছে গ্রামগঞ্জ।

স্বাধীনতার পর থেকে, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কুকি সম্প্রদায় তফসিলি উপজাতির মর্যাদা পেয়েছে। অন্যদিকে মেইতেইরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা কুকিদের এলাকায় জমি কিনতে পারেন না। তাই তারা উপজাতির মর্যাদা চাইছেন।

আরও পড়ুন : কুয়েতে ১২৪ প্রবাসী আটক

২৮ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই মেইতেই। তারা উপত্যকা অঞ্চলে বাস করেন। এদিকে কুকি সম্প্রদায়ের আদি বাসস্থান ছিল ৪ টি পার্বত্য জেলায়। তবে মেইতেদের মধ্যে কিছু মুসলমানও আছেন। এছাড়া রয়েছেন নাগা সম্প্রদায়ের মানুষ, যাদের ওপরে অবশ্য এই চলমান সহিংসতার আঁচ লাগেনি।

মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক প্রিয়রঞ্জন সিং বলেন, মণিপুরের মানুষের মধ্যে কখনই ধর্মীয় উগ্রতা ছিল না। তবে উনবিংশ শতকে যখন এখানে রাজার শাসন ছিল, সে সময়ে হিন্দুধর্ম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক এই সহিংসতায় ২ ধর্মাবলম্বীদেরই মৃত্যু আর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন : আ’লীগের হাত ধরেই দারিদ্র দূর হয়েছে

তিনি জানান, এখনও ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে ত্রাণ শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যেও কুকি আর মেইতেই, ২ সম্প্রদায়ের মানুষই আছেন। রাজধানী ইম্ফলের স্টেডিয়ামের পাশে একটি যুব হোস্টেল রয়েছে। এটিই এখন ত্রাণ শিবিরে রূপান্তরিত হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের রাজনীতিতে সাবেক মেইতেই হিন্দু রাজ পরিবারের সদস্যদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সাবেক রাজ পরিবারের কর্ণধার ও মহারাজা লিশেম্বা সানজাওবা বর্তমানে বিজেপির রাজ্য সভার সংসদ সদস্য।

আরও পড়ুন : টাইটানের ৫ টুকরো শনাক্ত

মাত্র একটি বিবৃতি জারি করে তিনি বলেন, সহিংসতা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং আলোচনাই প্রতিটি সমস্যার একমাত্র সমাধান।

মণিপুরের ইতিহাসে এই প্রথম ধর্মীয় স্থানগুলো জাতিগত সহিংসতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতায় পুড়েছে চার্চ, ভাঙ্গা হয়েছে মন্দিরও।

আরও পড়ুন : থাইল্যান্ডে ১৯ বাংলাদেশি আটক

ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি শারদা দেবী বলেছেন, চার্চ আর মন্দির দুই-ই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কুকি সম্প্রদায়ের প্রার্থনা করার স্থল গির্জাঘর। অন্যদিকে মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বাড়িতে যে উপাসনালয় বানায়, উভয়েরই ক্ষতি করা হয়েছে। এটা আমাদের সকলের জন্যই দুঃখের বিষয়।

বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে ২৫০ টিরও বেশি চার্চ এবং প্রায় ২ হাজার কুকি সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন : মিয়ানমারে ছয় ঘণ্টায় ৪ ভূমিকম্প

কুকি খ্রিস্টান লিডারস ফেলোশিপের প্রধান যাজক হাওকিপ থংখোস রাজ্যের গির্জাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কুকি সম্প্রদায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গির্জাঘর, মানুষ এবং তাদের সম্পত্তিতে হামলাকারী জনতাকে থামায়নি সরকার। তাই এই সরকারের ওপরে আমরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছি।

এটা জাতিগত সহিংসতা তো বটেই। একই সাথে ভারতীয় হিন্দুদের খুশি করার জন্য গির্জার ওপরে এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে।

আরও পড়ুন : উপমহাদেশের ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ

দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১০০ টি মন্দির আর ২০০০ টি মেইতেই বাড়িতে হামলা হয়েছে।

মেইতেই সম্প্রদায়ের একটি গোষ্ঠী ‘কোকোমি’-র মুখপাত্র কে ওথাবে জানান, মণিপুরের কোনও সমস্যাই ধর্মীয় রূপ নেয় না। এবারেও বিষয়টি আরও বড় হয়ে ওঠার আগেই আটকানো গেছে। ২০০ টি চার্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু আপনার জানা উচিত যে, আরও ৪০০ টি চার্চ এখনও অক্ষত রয়েছে। ধর্মীয় সহিংসতা হলে সেগুলো কি অক্ষত থাকত?

এ সহিংসতার জন্য প্রতিবেশী মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা কুকি জঙ্গিদের দায়ী করা হচ্ছে, যাদের কাছে রয়েছে প্রচুর আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র।

আরও পড়ুন : সময় ফুরাচ্ছে টাইটানের আরোহীদের

কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের হোম সেক্রেটারি মাং খনসাইয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সবাই তো কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু। আজ শুধুমাত্র মণিপুরে থাকার কারণে আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে, আপনি কি শুধু মণিপুরেই সীমাবদ্ধ থাকবেন? আরও অনেক জায়গা আছে, যেখানে তারাও আমাদের মতো একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।

সরকারকে এর অবসান ঘটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

বর্তমান পরিস্থিতি এমনই যে, রাজধানী ইম্ফল থেকে পাহাড়ী কুকি অধ্যুষিত এলাকায় যেতে প্রশাসনের নয়, কুকি রক্ষীদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দিনের বেলা নারীরা সীমান্ত পাহারা দেয় এবং রাতে পুরুষরা। এছাড়া ২ সম্প্রদায়ের গ্রামের মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণও চলছে।

আরও পড়ুন : ইরানে বিষাক্ত মদ পানে নিহত ১৫

বিবিসি বলছে, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তাদের কাছে লাইসেন্সকৃত বন্দুকও ছিল। কিন্তু এখন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী চারদিকে ঘাঁটি তৈরি করেছে। তারা গ্রামবাসীদের অস্ত্র ব্যবহার না করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে।

মণিপুর কংগ্রেস পার্টির কার্য নির্বাহী সভাপতি দেবব্রত সিং বিবিসিকে জানান, এখানে কখনো ধর্মের নামে কোনো দাঙ্গা হয়নি। আমরা এই প্রথমবার সেটা দেখলাম। কোনো মহল থেকে বোধহয় এ সহিংসতাকে ধর্মীয় দাঙ্গার রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার লড়াইকে চীন সম্মান করে

প্রসঙ্গত, মেইতেই সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরেই তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবিটাই কুকি সম্প্রদায়ের সাথে তাদের চলমান বিবাদের মূল উৎস। গত মে মাসের ৩-৬ তারিখ পর্যন্ত পুরো রাজ্যে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল এবং মেইতেই আর কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরকে টার্গেট করেছিল।

সূত্র : বিবিসি

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

কেশবপুরে নির্বাচনী কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুরঃ আগামী ০৮ ই মে ২০২৪, রোজ বুধবা...

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

আফ্রিকায় ভারী বৃষ্টি, নিহত ১৫৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফ্রিকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি হ...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

বরিশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের বাকেরগ...

সেরা সুন্দরী হলেন ৬০ বছরের আলেজান্দ্রা 

বিনোদন ডেস্ক: সম্প্রতি ৬০ বছর বয়স...

সোনার দাম ফের কমলো 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে সো...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা