ফিচার

আইনস্টাইনের মগজ চুরি কাহিনী

সান নিউজ ডেস্ক:

মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মগজ চুরির কথা হয়তো অনেকেই জানেন। কেন এবং কীভাবে এমন কাজটি ঘটেছিল তা জানতে মানুষের উৎসাহের শেষ নেই।

১৯৫৫ সালে ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন আইনস্টাইন। সেদিন ভক্তদের সমাগমে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল হাসপাতাল প্রাঙ্গন। সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যানের ভিড় ঠেলে, তাদের অগোচরে আইনস্টাইনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মর্গে। পোস্টমর্টেমের ভার পড়েছিল ড. থমাস হার্ভের ওপর। সেদিন তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো অন্য একটি বিষয়। চোখ পড়ে তার আইনস্টাইনের মগজের দিকে। তার পুরো ভাবনা জুড়ে ছিল বিস্ময়কর বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মেধা এতোটা উন্নত হল কীভাবে তা গবেষণা করে দেখার।

আর তাই তিনি শবদেহ ব্যবচ্ছেদের পর সরিয়ে রেখেছিলেন মহাবিজ্ঞানীর মগজ। কাজটা তিনি করেছিলেন গোপনে। জানাননি আইনস্টাইনের পরিবারকে। হার্ভে মস্তিষ্কটা খুলি থেকে বের করেন। তারপর সেটা চুবিয়ে রাখেন ফরমালিনের জারে। খুব বেশিদিন রাখা হয়নি প্রিন্সটন হাসপাতালে। হার্ভে বাড়ি নিয়ে যান মগজটি। সেই মগজসহ জারটি বাক্সবন্দি করে তুলে রাখেন নিজের ঘরে। এরপরই শুরু হয় হার্ভের জীবনে উল্টোযাত্রা।

প্রিন্সটন হাসপাতালের এক নার্সের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জন ওঠে। সেটা নিয়ে হইচই। চাকরি যায় হার্ভের। তারপর পাততাড়ি গুটিয়ে চষে ফেলেন গোটা যুক্তরাষ্ট্র। একের পর এক স্ত্রী ত্যাগ করেছেন, কিন্তু যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন মহামূল্য মগজটাকে। কিন্তু ব্রেন যে লুকায়িত আছে সে খোঁজ পেয়ে যান মাসিক নিউজার্সি পত্রিকার একজন রিপোর্টার স্টিভেন লেভি।

১৯৭০ সালে এই মগজের খোঁজে ড. টমাস হার্ভের সঙ্গে দেখা করতে তার নতুন কর্মস্থল ক্যানসাস যান লেভি। সেখানে গিয়ে স্টিভ লেভি দেখেন, আইনস্টাইনের ব্রেইনটি কাঠের বক্সে রাখা, যার ওপরে লেখা ছিল ‘কোস্টা সাইডার’। তার মস্তিষ্কের সেরেবেলাম (মাথার একেবারে পিছনে ঘাড়ের কাছে থাকে) আর সেরেব্রাল কর্টেক্স (ব্রেইন এর ওপরের পুরো অংশ) এর কিছু অংশ বাদে বাকি পুরো ব্রেইনটি কেটে পাতলা স্লাইস করা হয়েছিল গবেষণার জন্য।

১৯৮৫ সালে একটি গবেষণাপত্র বের হয়, যার প্রধান গবেষক ছিলেন সেই ড. টমাস হার্ভে। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্ককে মোট ৪৭ টি ভাগে চিহ্নিত করেছেন, যাকে বলে ব্রডম্যান ম্যাপ। এ ম্যাপ অনুসারে মানুষের ব্রেইনের ৯ ও ৩৯ নম্বর এরিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের প্ল্যানিং, স্মৃতি আর মনযোগ এর জন্য এরিয়া ৯ কাজ করে আর এরিয়া ৩৯ কাজ করে ভাষা আর জটিল সমস্যা নিয়ে।

ড. টমাস হার্ভের দল গবেষণা করেছিলেন, এই দুই এরিয়ার নিউরন এবং গ্লিয়াল সেল এর অনুপাত নিয়ে। তারা আইনস্টাইনের মস্তিষ্ককেও এই অনুপাত তুলনা করেছিলেন আরো ১১ জন মৃত ব্যক্তির ব্রেইন এর সঙ্গে, যাদের গড় বয়স ছিল ৬৫।

এ গবেষণাপত্রের ফলাফলটা ছিল এরকম:

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের একমাত্র বাম দিকের ৩৯ নম্বর এরিয়াতে একটি নিউরনের জন্য একাধিক গ্লিয়াল সেল ছিল, যা অন্য ১১ টি মস্তিষ্কে ছিল না। এই রেজাল্টের ব্যাখ্যা হল যেহেতু এরিয়া ৩৯ এ বেশী গ্লিয়াল সেল, তার মানে আইনস্টাইনের ব্রেইন বেশি শক্তি ব্যয় করে। যার কারণেই হয়তো তার চিন্তা শক্তি ও তাত্ত্বিক জ্ঞান সাধারণের চেয়ে বেশী ছিল। ২০০৬ সালে এরকমই আরেকটি গবেষণা প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়েছে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের গ্লিয়াল সেল এর গঠন (যেমন বড় এস্ট্রোসাইট প্রসেস) অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিল।

আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে আরেকটি পেপারও বেশ আলোচনায় এসেছিল, যা প্রকাশ পায় ১৯৯৬ সালে। এ পেপারে বলা হয়, তার ব্রেইন এর ওজন ১ হাজার ২০০ গ্রাম যা নরমাল মানুষের চেয়ে ওজনে কম (১৪০০ গ্রাম)। তার ব্রেইন এর এরিয়া ৯ অন্যদের (৫ জনের তুলনায়) চেয়ে পাতলা ছিল এবং অনেক বেশী নিউরন ছিল। তার মানে অল্প জায়গায় খুব ঘেঁষাঘেঁষি করে অনেক বেশি নিউরন ছিল।

১৯৯৯ সালে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আইনস্টাইনের মগজের প্যারাইটাল লোব (টোটাল ৪টি বড় ভাগে ব্রেইন বিভক্ত-প্যারাইটাল লোব হল মাথার ঠিক উপরের লোবটি) খাঁজগুলো অন্যদের চেয়ে আলাদা। পার্শ্বিক খাঁজগুলো ছোট/মিসিং ছিল। আর ব্রেইন এর এ লোব/ভাগটি গাণিতিক যুক্তি, স্থানিক চিন্তাশক্তি নিয়ে কাজ করে থাকে। পাশপাশি তার ব্রেইন ১৫ শতাংশ বেশী প্রশস্ত ছিল।

সব কিছু মিলে ধারণা করা হয়, তার নিউরনগুলো কাজ করার জন্য যথেষ্ঠ জায়গা পেত যা তার গাণিতিক ও স্থানিক চিন্তা শক্তিতে সাহায্য করত। সত্যি কথা বলতে, খুব নির্ভুলভাবে মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করাও অসম্ভব। আর যদি সেটা করতে হয় তা হলে এর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন।

আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে গবেষণার প্রধান অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা হল পৃথিবীতে আইনস্টাইনের মত জিনিয়াস একজনই ছিলেন বা আছেন।

তাই এ গবেষণা আরো বেশী গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য পৃথিবীর বিখ্যাত গণিতবিদদের ব্রেইন সংগ্রহ করে রাখা বলে মনে করেন অনেকে। আইনস্টাইনের মত এরকম বড়মাপের বিজ্ঞানীর মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণার ফলাফল হয়তো একসময় সঠিকভাবে বলতে সক্ষম হবে তাঁর চিন্তা শক্তির রহস্য সম্পর্কে। তেমনি মস্তিষ্কের কোন্ অংশ আসলেই বড়মাপের বিজ্ঞানী কিংবা মহাজ্ঞানী হতে সাহায্য করে, সে সম্পর্কেও আরও বেশি বেশি জানা সম্ভব হতে পারে।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, নীরব প্রশাসন; ফুঁসছে জনগন!

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জারিকারক লুৎফা আক্তার (৪৫)...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

ছাত্রলীগ সভাপতির বসতঘরে আগুন

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বাপ্পির...

রামগড়ে অবৈধ ইন্টারনেট সরঞ্জামসহ তিনজন আটক

খাগড়াছড়ির রামগড়ে খান কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলার একটি কক্ষ থেকে অবৈধ ইন্টারনেট...

মুন্সীগঞ্জে বিএনপির চার নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের চার নেতার আবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কার...

মধুখালীতে ৬৫ পিস ইয়াবাসহ আটক যুবক

ফরিদপুরের মধুখালীর কুখ্যাত ডাকাত ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি মোঃ রানা (২৬) কে...

হাতের অপারেশন করাতে গিয়ে প্রাণ গেল নারীর

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর প্রাইম হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় রাবেয়া বেগম (৪৮) নামে...

মাদারীপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য আটক

মাদারীপুর সরকারি কলেজের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সো...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

লকডাউনের আজাহার দিনে বিএনপি, রাতে আ. লীগ

মাদারীপুরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ নভেম্বরের লকডাউন স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা