ফিচার

বিলুপ্ত প্রজাতির গাছপালা রক্ষায় ত্রিপুরায় ‘পবিত্র বন’

ত্রিপুরা প্রতিনিধি:

মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণের অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যে। এর ফলে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে একইভাবে বহু হারিয়ে যেতে বসা গাছপালা সংরক্ষিত থাকবে এবং ধীরে ধীরে এগুলির পরিমাণ বাড়বে। এমনকি এই বীজ ভান্ডার থেকে বিরল প্রজাতির গাছপালা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়ে গাছের প্রজাতিকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এমনটাই অভিমত এই অভিনব বনের উদ্যোক্তাদের।

প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মধ্যে প্রকৃতি ও গাছপালা রক্ষার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছেন। মানুষ যখন পুরোপুরি ভাবে কথা বলতে শেখেনি, তখন পাহাড়ের গায়ে গুহার ভিতরে ছবি এঁকে একে রাখত প্রকৃতিকে রক্ষা করার জন্য। গবেষকদের মতে, তারা এই কাজ করতো তাদের উত্তর পুরুষদের মধ্যে বার্তা ছড়িয়ে দিতে, যাতে করে তারা যেন প্রকৃতিকে রক্ষা করে। গবেষকরা আরো জানান, পরবর্তী সময় মানুষ যখন সভ্যতার দিকে আরো একধাপ এগিয়ে এলো তখন তারা গাছপালাসহ প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য পূজা শুরু করলো। এখন আধুনিক নগরায়নের ফলে ব্যাপকভাবে প্রকৃতি এবং বন ধ্বংস হচ্ছে যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনে। মানুষ তাদের প্রয়োজনে পরিবেশের কথা চিন্তা না করে নির্বিচারে বন ধ্বংস করে চলছে। এই অবস্থায় বনকে রক্ষা করার জন্য আবারও মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

ত্রিপুরা রাজ্যে নতুন করে সংরক্ষিত ও মিশ্র বনায়ন করতে যৌথভাবে এই অভিনব উদ্যোগ গ্রহন করেছে ভারত সরকারের ফরেষ্ট রিচার্জ ফর লাইভলিহোড এক্সটেনশনের ত্রিপুরা শাখা, ডেভলাপমেন্ট ইনিসেটিভ ফর সাস্টেনেভল এডভান্সমেন্ট (দিশা) এবং খুম্পই বুরিবদল এনজিও। এই তিন সংস্থার কর্মকর্তা ও পরিচালক মন্ডলী মিলে রাজ্যের পশ্চিম জেলার কামালঘাট এলাকার শিপাহীপাড়া গ্রামে গড়ে তুলছে একটি সেক্রেট ফরেষ্ট। যাকে আবার পবিত্র জঙ্গল বলা হয়।

ফরেষ্ট রিচার্জ ফর লাইভলিহোড এক্সটেনশনের ত্রিপুরা শাখা ডিরেক্টর পবন কে কৌশিক বলেন, ভারতে বহু এলাকায় সেক্রেট ফরেস্ট রয়েছে, এরমধ্যে সবচেয়ে বড় এবং উল্লেখযোগ্য সেক্রেট ফরেস্ট রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। মেঘালয়ের এই গহীন বনটি আশাপাশের এলাকায় বসবাসকারীরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে ধরে রেখেছে বহু যুগ আগে থেকে। এই বনের আশে পাশে কোন জঙ্গল না থাকলেও সেক্রেট ফরেস্টে বিভিন্ন ধরনের গাছপালাসহ জীব বৈচিত্র সংরক্ষিত রয়েছে। এই বন থেকে কোন মানুষ গাছ কাটা তো দূরের কথা, পরিত্যক্ত পাতা বা জঙ্গলের ক্ষুদ্র কোন কিছুই নিয়ে আসতে পারেন না।

পবন কে কৌশিক আরো জানান, রাজ্যের প্রায় সকল জনজাতিদের বিশ্বাস অনুসারে কের পূজার সময় যে কেউ যখন তখন সেক্রেট বনে প্রবেশ করতে পারে না এবং কের পূজার এলাকা থেকে থেকে কোন কিছু নিতে নেই। এই ধর্মীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে পবিত্র জঙ্গল গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে পুরোহিত জনজাতিদের নিজস্ব ভাষা ককবরকে চন্তাই বলা হয়। এই চন্তাই কেরপূজা করে প্রথমে জঙ্গলের সীমানা একে দিয়েছেন। এর পর এই জায়গায় আগর, মেহগিনি, দেবদারু, সেগুনসহ বিভিন্ন ফল ও বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। এই গাছ গুলোতে যখন বড় হয়ে ফল ও বীজ ধরবে তখন এক গুলি পাখী, বাতাস ও বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যে আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। এক দিকে এই জঙ্গল নানা প্রজাতির গাছের ও লতাগুল্মের সংরক্ষক হবে এবং তা পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে। তিনি আরো জানান, গত বছর জুলাই মাসে তারা এই কর্মসূচি প্রথমবারের মতো হাতে নিয়েছেন। এই কর্মসূচিতে তিনটি সংস্থা ছাড়াও সাধারণ মানুষের যোগদান এবং বন সংরক্ষণের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ দেখে খুশি। আগামী দিনে জমি পেলে ত্রিপুরা রাজ্যে এমন আরও জঙ্গল গড়ে তুলতে চান বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ, এই বন শুধু জীব বৈচিত্রকেই রক্ষা করবে না। একটা সময় আসবে যখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসবেন এই বনকে দেখার জন্য। একটা সময় রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থল হয়ে উঠবে এই বন।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

পেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদী

কিছুদিন আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বহু সৈন্য প্রাণ হার...

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (...

"আমি এখন আমেরিকা চালাই, পৃথিবীও চালাই" : ট্রাম্পের দাবির তাৎপর্য

সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বিতর্কিত মন্তব্য নতুন...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা