বাণিজ্য

ত্রিমুখী প্রভাবে ক্রেতা শুন্য কামারপট্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর কারওরানবাজার কামারপট্টির দোকানিদের অলস সময় কাটছে। ঈদের মাত্র দুই দিন বাকি থাকলেও বেচা-কেনা না থাকায় কামারদের চোখে-মুখে হতাশা। দোকানিদের দাবি – করোনাভাইরাস, বন্যা ও বিদেশি সরঞ্জামের জনপ্রিয়তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের ব্যবসায়।

কামারদের তৈরি পণ্যের বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতাই এখন বেশি। দোকানগুলোতে ছোট-বড় ছুরি,চাপাতি,দা-বটির পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আশানুরূপ ক্রেতা না থাকায় দোকানিরা কেউ দাঁড়িয়ে,কেউবা টুলে বসে ঝিমোচ্ছেন। দোকানের সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেই ক্রেতা ভেবে হাঁকডাক দেওয়া হচ্ছে।

দোকানিরা বলছে, গত বছরের তুলনায় বিক্রি অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে এবার। সাধারণত ঈদুল আজহার ১০-১৫ দিন আগে থেকেই দোকানের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যেতো। তাদের দম ফেলার সময় থাকতো না। অথচ এখন অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।

নতুন কেনার চেয়ে পুরনো দা-বটিতে শান দেওয়ার চিত্র এবার বেশি। দোকানদাররা বলছেন, ‘মানুষের আয় কমে যাওয়ায় পুরনোগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে।’

করোনার কারণে মানুষের আয় কমেছে। বন্যার কবলে পড়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকা। করোনা ও বন্যার কারণে এবার কোরবানি দাতার সংখ্যা কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই গরু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জাম বিক্রি নেই বললেই চলে।

চায়নিজ সরঞ্জাম সস্তা হওয়ায় কামারদের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমেছে। এর সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে কামার শিল্পকে। এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজার ব্যবসায়িরা জানান, ‘কামারদের তৈরি পণ্যের বাজার ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে চায়নিজ যন্ত্র। আমাদের দেশি ছুরি ও চাপাতির চেয়ে সেগুলো দামে সস্তা। দেখতেও সুন্দর হওয়ায় মানুষ এসব কিনছে। বাধ্য হয়ে আমরাও কিছু চাইনিজ যন্ত্র বিক্রির জন্য দোকানে রেখেছি। কিন্তু আমাদের মূল ব্যবসা তো দেশি সরঞ্জামের। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো কামার পেশাই আর থাকবে না।’

জানা গেছে, কামাররা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করেন। একটি অংশ ভবন নির্মাণের হ্যান্ডেল, হামার, তারকাঁটার বড় প্লাস প্রভৃতি জিনিস বানান। কিন্তু করোনার কারণে দেশের সরকারি-বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্পগুলো পাঁচমাস ধরে বন্ধ।

কামারদের আরেকটি অংশ তৈরি করেন দা, বটি, ছুরি, চাপাতি ও কুরাল। এগুলো মূলত কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। একজন কামার এখন দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরি পান। এছাড়া চা-পান, নাশতা পেয়ে থাকে তারা।

এদিকে কামার শিল্পের মূল উপকরণ লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম প্রতি বছর বেড়েই চলছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতি বছর লোহা কেজিতে ৫-১০ টাকা বাড়ে। ইস্পাতের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। আর ৫০ কেজি ওজনের কয়লার বস্তায় ৬০০-৮০০ টাকা বেড়েছে গত দুই বছরে।

আগে খনির কয়লা পাওয়া গেলেও বর্তমানে গাছের কয়লা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এতে কয়লার অপচয় হয় বেশি। কারণ গাছের কয়লা খুব দ্রুত পুড়ে যায়। একইসঙ্গে কামারদের মজুরি বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় তৈরি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়নি। এবার তো তেমন বিক্রি নেই। এ কারণে কেউ দাম বাড়াতে পারছে না। ভালো মানের একটি ছুরি আগের মতোই ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে সুদিন ফেরার আশায় দোকানিরা ব্যবসা ও কামাররা পেশা ধরে রেখেছেন।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শিবগঞ্জে রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসীর

শিবগঞ্জের শাহাবাজপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ি হতে বিনোদপু...

সাঁওতাল কৃষক বিদ্রোহ দিবসে দিনাজপুরে শপথ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

সোমবার (৩০ জুন) দিনাজপুরের লোকভবন টাউন হল প্রাঙ্গণে ঐতিহাসিক সাঁওতাল কৃষক বিদ...

পদ্মা-যমুনায় ইলিশের আকাল, জেলেরা ফিরছে খালি হাতে

দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি থাকলেও গোয়ালন্দের যমুনা ও পদ্মা নদীর মোহনায় জেলের জালে দে...

বগুড়ায় পেটে লাথি মেরে বাচ্চা মেরে ফেলার অভিযোগ

বগুড়ায় যৌতুকের দাবিতে এক গর্ভবতী গৃহবধুকে নির্যাতন সহ পেটে লাথি মেরে বাচ্চা...

মুরাদনগরকাণ্ড, মামলা তুলে নিতে চান ভুক্তভোগী

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে চাঞ্চল্যকর কোন কিছু ভাইরাল হতে সময় লাগে না।...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা