নিজস্ব প্রতিনিধি: বছর ঘুরে ফিরে এলো বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ভাষার মাস। এ দিন ভাষা শহীদদের স্মৃতি স্মরণে আয়োজিত মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’র পর্দা উঠছে।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের এই দিনে আবু সাঈদ চৌধুরী’র জন্ম
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩ টায় মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মেলার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমি।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মেলা আয়োজনের সার্বিক দিক তুলে ধরেন মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত বছরের চেয়ে ৩৪ টি বাড়িয়ে এবারর মেলায় মোট ৬৩৫ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে মেলার পরিধি ও পরিসর কিছুটা বেড়েছে। এবারও মেলার মূল প্রতিপাদ্য থাকছে, ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
১ ফেব্রুয়ারি একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। এ সময় উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।
একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, এবারের বইমেলায় ৬৩৫ টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭ টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০ টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩ টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫ টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪ টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাসেলস যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এবারের বইমেলার পরিসর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট এলাকা। মেলায় ৩৭ টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬ টি) প্যাভিলিয়ন থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এবারও গতবারের বিন্যাস অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে মেলার বাহির পথ এবার একটু সরিয়ে কালী মন্দির-গেটের কাছাকাছি নেয়া হয়েছে।
এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে মোট ৮ টি প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকবে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে রাখা হয়েছে। খাবারের স্টলগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে, যাতে পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত না করে।
আরও পড়ুন: ফের স্পিকার হলেন শিরীন শারমিন চৌধুরী
মেলায় নামাজের স্থান ও ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবাও থাকছে। এবারেও মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে শিশুচত্বর। যাতে শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে ও তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০ টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মেলায় নিরাপত্তা নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করবেন পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। মেলা প্রাঙ্গণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত ধূলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।
আরও পড়ুন: মোরেলগঞ্জে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা উদ্বোধন
উল্লেখ্য, ২০২৪ সাল লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ। ফলে ফেব্রুয়ারি পাবে ২৯ দিন। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত মেলায় ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। রাত সাড়ে ৮ টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রতিদিন বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।
২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮ টায়। চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে ঢাকা দ্বিতীয়
অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।
২০০৬ সালের পর থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথ উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন করে আসছেন বাংলা একাডেমি। তবে এ বছর থেকে আবারও মেলার সার্বিক বিষয় একাডেমি এককভাবেই পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা।
সান নিউজ/এনজে