জাতীয়

জীবন নয় জীবিকার সন্ধানে, সামাজিক মাধ্যমে ঝড়!

নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎ করেই রোববার (১ আগস্ট) গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানা খোলার সংবাদে কর্মস্থানমুখি হচ্ছেন শ্রমিকরা। এতে করে স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। যদিও প্রথমে বলা হয়েছিলো ৫ আগস্টের আগে শিল্প-কারখানা খুলছে না তবে শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় আগামী ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে।

এমন ঘোষণার পর শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জীবিকার সন্ধানে জীবনকে বাজি রেখে কর্মস্থলের দিকে ছুটতে। ঢাকামুখি শ্রমিকরা পড়ছেন বিপাকে। অনেকেই বাড়িতে গিয়ে ছিলেন কিন্তু যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় আসতে পারেননি। এখনও যানবাহন চলাচল বন্ধ তার মধ্যেই তাদেরকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় বইছে। নানাজন নানান মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ ছবিসহ বিভিন্ন কিছু লেখে বিষয়টির সুরাহা চাচ্ছেন। এমন কিছু ছবি ও মন্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

সাংবাদিক মাসুদ কামাল লেখেন, প্রথমে বললেন- ৫ আগস্ট পর্যন্ত কলকারখানা সব বন্ধ থাকবে। ফলে গার্মেন্টসসহ সকল ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি চলে গেলেন। ঈদের পর আর ফেরার প্রয়োজন মনে করলেন না।
এখন মালিকদের আবদারে ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো! সিদ্ধান্ত তো দিলেন, কিন্তু গ্রামে চলে যাওয়া ওই শ্রমিকদের আনার কি ব্যবস্থা করলেন? এতটুকু তো অন্তত বলতে পারতেন, এই শ্রমিকদের কারখানাগুলো নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসবে।
না, তা বলার হেডম আপনার নেই। আপনি কেবল পারেন গরীব মানুষের জন্য উদ্ভট সব নির্দেশনা জারী করতে। সে আদেশ বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, সাধারণ মানুষের কী ভোগান্তি হবে- তা নিয়ে আপনার কোনই মাথাব্যথা নেই।
অগত্যা, চাকরি রক্ষা করতে মানুষ ছুটলো ঢাকার দিকে। ঢাকামুখী মানুষের ঢলে ভেসে গেল করোনা প্রতিরোধের সকল স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম।
বুঝি না, দেশটা চালায় কে? সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা যার হাতে, তার মধ্যে কি ন্যূনতম জবাবদিহিতাও থাকতে নেই?

সাইফুজ্জামান সুমন লেখেন, ‘সরকার হামাক কি মনে করে? হামরা শ্রমিক, মানুষ নোয়ায়? ঈদের আগোত কত কষ্ট করি বাড়ি আসনো। কালই ফির হঠাৎ করি অফিস, কারখানা খুলি দেবার ঘোষণা। এটা কেমন কথা বাহে। অফিস না করলে হামার চাকরি থাইকপার নায়। বাস বন্ধ থাকলেও হামার চাকরি থাকপে? সরকারোক কন গাড়ি খুলি দেউক।’

‘রংপুর থাকি যে ঢাকা যামো, গাড়ি কোন্টে? হুট করি লকডাউন দেয়। ফির ইচ্ছা হইলে লকডাউন তুলি নেয়। এটা কেমন কথা, হামার বউ-ছাওয়া তো লকডাউন বুজে না। তামারগুল্যার খাওন দেয়া নাগবে। ওই তকনে ঢাকা হামাক যাওয়ায় নাগবে।’

রংপুর নগরের মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সোলেয়ান মিয়া। তিনি ঢাকার সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার মতো হাজারো মানুষ ঢাকায় যেতে ওই মহাসড়কে জড়ো হয়েছেন। সবার অপেক্ষা যেভাবেই হোক ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করার। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

রাজিব হোসাইন রাজু লেখেন, লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট ফেরির চিত্র এটি। আগামীকাল কল কারখানা গার্মেন্টস খোলা। তাই মানুষ ছুটছে গন্তব্যে।

আপন তারিক লেখেন, একদিকে গণপরিবহন বন্ধ অন্যদিকে খুলছে শিল্প-কারখানা!
করোনায় যখন রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর খবর তখন গণপরিবহন খুলে দিয়ে সবাইকে বাড়ি যেতে সুযোগ করে দিলেন। ঈদ করতে জীবন বাজি রেখে ফিরল সবাই। এরপর কর্মস্থলে ফেরার জন্য দিলেন একটা মাত্র দিন। অনেকে সংগতভাবেই ফিরলেন না, কারণ সবই তো বন্ধ... ঢাকায় ফিরে লাভ কী! ঘোষণা তো দিয়েই রেখেছিলেন-৫ আগষ্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি সেবা ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
এবার হঠাৎ করেই খবর- ১ আগষ্ট থেকে খুলে যাবে সব শিল্প-কারখানা। তাহলে যারা মানুষ গ্রামে ফিরলো, তারা সেই লাখো মানুষ ঢাকা কিংবা গাজীপুরে আসবেন কিভাবে- সেটা কি একবারও ভেবেছেন? -ভাবেননি, আইসোলেশনের দুনিয়ায় থেকে সেসব ভাবার প্রয়োজনও পড়ে না!


করোনার উর্ধগতির সময়ে ফের স্বস্তা শ্রমিকদের এভাবে অমানবিকভাবে শহরে ফিরে আসতে বাধ্য করলেন! শ্রমিকদের এই কষ্ট দেওয়ার অর্থ কী?
মহাসড়কে গণপরিবহন নেই। কর্মস্থলে না গেলে চাকরি থাকবে না-এই ভয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, রিকশায় আর হেঁটে মাইলের পর মাইল তবেই ফিরছেন অনেকে। উপচে পড়া ভিড়, শহরের প্রবেশ মুখে। স্বাস্থ্যবিধি বলে আসলে কিছু নাই।
এভাবে নিম্ম আয়ের মানুষদের নিয়ে তামাশা দেখে এখন আর অবাক হই না। কারণ এটা যে সব সম্ভবের এই দেশ!

রহমান মাসুদ নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘কি বুঝলেন! একটা ভালো উদ্যোগ, জাতির ত্যাগ এভাবেই জলে ভেসে যায় গুটিকয় মানুষের স্বার্থের কাছে। বুঝলেন তো, রাষ্ট্র, সমাজ, প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা আজ কারা...’।

রাজু আহমেদ, হুটহাট অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ। শুক্রবার বিকেলে রোজিনার (ছদ্ম নাম) মোবাইলে হঠাৎ কল আসে। ওপার থেকে রোজিনাকে উগ্র কন্ঠে আদেশ দেয়া হলো, যত দ্রুত পারো কারখানায় পৌঁছাও। এই ফোনে রোজিনা কিছুটা আনন্দিত হলেও, পরক্ষনেই তার কপালে দেখা গেলো দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
এদিক-ওদিক ফোন করে গাজীপুরে পৌঁছানোর জন্য কি ব্যবস্থা আছে তা জানতে চায় রোজিনা। রোজিনাকে জানানো হয় যাওয়া যাবে তবে চোরাই পদ্ধতিতে, খরচ পরবে ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা।
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে রোজিনার কর্ম ক্ষেত্রে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ খরচ লাগতো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
আজ সকালে চুপিসারে ১৭ জন মিলে একটি ট্রাকে করে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে রোজিনা; এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি আক্ষেপের সুরে জানান, 'পরিবহন সেক্টর বন্ধ রেখে শ্রমিকদের যাওয়ার ব্যবস্থা না করেই খুলে দেয়া হয়েছে কল-কারখানা।
এতে করে শ্রমিকদের একদিকে যেমন ঝুঁকি নিয়ে এবং অতিরিক্ত ভাড়ায় রওনা দিতে হয়েছে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে। তেমনি গাদাগাদি করে যাওয়ার ফলে তাদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে।'

রিফাত রাজ লিখেন, এতো দিনের নিচের ডাউন, উপরের ডাউন জলে মিশে গেলো।

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিল্প-কারখানা। তবে ঈদের পর থেকেই কারখানা খোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিল্প-কারখানার মালিকরা।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা উধাও, গ্রেফতার ৩

জেলা প্রতিনিধি: পাবনার সাঁথিয়ায় কাশিনাথপুর অগ্রণী ব্যাংক শ...

ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বা...

হুমায়ুন আজাদ'র জন্ম

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

টিভিতে আজকের খেলা 

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বেশ ক...

শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর ব...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা