শুভ বাংলা নববর্ষ (ছবি: সংগৃহীত)
মতামত

জাতিসত্তার পরিচয় ও বর্ষবরণ উৎসব

আতাহার খান: পহেলা বৈশাখের দিন আমরা পুরো বাঙালি বনে যাই। ঘটা করে মঙ্গল শোভাযাত্রা করি, সকালে রমনায় সংগীতায়োজন এবং দিনব্যাপী মেলা, বিশেষ বিশেষ জায়গায় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-কত অনুষ্ঠানই না করি! এ নিয়ে রীতিমতো হইহুল্লোড় বাধে। একদিনের এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে আদৌ বাঙালি হওয়া যায় কি না, যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে-বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাঙালি বনে যাওয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন হয় জীবনযাত্রা ও মানসিকতার ভেতর দিয়ে জাতিসত্তার পরিচয়কে স্পষ্ট করে তোলা। এটা আমরা যতক্ষণ অর্জন করতে না পারছি, ততক্ষণ আমাদের পক্ষে জাতিসত্তার প্রকৃত পরিচয় মেলে ধরা সম্ভব নয়।

বাংলায় কথা বলা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা, উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার প্রচলন-এসব, সন্দেহ নেই আমাদের বড় অর্জন! কিন্তু জাতিসত্তার পরিচয়ের ভেতর দিয়ে আমরা আজও নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করতে পারিনি। তাই পহেলা বৈশাখের দিনটি পার হয়ে গেলে আমরা বেমালুম ভুলে যাই আমাদের পরিচয়, শেকড় সন্ধানের কথা। আসলে বাঙালিয়ানা হলো মানসিকতার বিষয়, জীবনযাত্রার বিষয়। সেখানে আমরা মোটেও আন্তরিক নই। দুর্ভাগ্যই বলতে হয়, ভাষাকে ঘিরে জাতিরাষ্ট্র গড়ে ওঠার ইতিহাসখ্যাত ঘটনাগুলোও আমাদের পুরো বাঙালি করে গড়ে তুলতে পারেনি।

১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন যেখানে আমাদের আত্মপরিচয়কে সামনে নিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক সড়কের ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং পর্যায়ক্রমে শুরুও হয়েছিল সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞানের সন্ধান, সেই অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার কারণে আমাদের আত্মপরিচয়ের জিজ্ঞাসাও হয়ে পড়ে অস্পষ্ট। বিশ্বায়নের ঝাপটায় বাধ্য হয়ে আমাদের পালটে নিতে হয়েছে খোলস। তাই একদিনের জন্য ঘটা করে আমরা বাঙালি সাজি, আর বাকি ৩৬৪ দিন সাজি এর উলটো সাজে। জাতিসত্তার প্রশ্নে এ প্রবণতা নিয়ে গর্ব করা যায় না, বরং তা একসময় আমাদের বুকে অন্তর্লীন যন্ত্রণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো চেষ্টা বা আগ্রহ আসলেই কি আমাদের আছে?

২.

পহেলা বৈশাখে নতুন চেহারায় জেগে ওঠে প্রকৃতি। সেখানে বিরাজ করে চাঞ্চল্য আর অস্থিরতার আমেজ। চারদিকে গাছগাছালির পাতায় সবুজ রং জমিয়ে বসে। এমন পরিবেশে নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বঙ্গাব্দের নতুন বছরের পথচলা। দিনটি পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছে গতানুগতিক মনে হলেও এ জনপদে বসবাসকারী মানুষের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা আবেগ-অনুভূতি-উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠা মাধুর্যমণ্ডিত একটি দিন।

বর্ষবরণ আমাদের একমাত্র উৎসব, যা বাঙালি পরিচয়কে গুরুত্ববহ করে তোলে সবচেয়ে বেশি। তাই দিনটি একই সঙ্গে পালিত হয় শহর ও গ্রামে, সমান মর্যাদায়। আয়োজন করা হয় বিশেষ ধরনের অনুষ্ঠান আর মেলা। শুধু সমতল ভূমির বাংলা ভাষীরই নয়, পহেলা বৈশাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীরও উৎসবের দিন। বৈসাবি উৎসব পাহাড়ি আদিবাসীদের অন্যতম প্রধান আনন্দোৎসবের দিন।

কবে থেকে, কোন সুপ্রভাতে প্রথম শুরু হয় পহেলা বৈশাখ উৎসব-এ জিজ্ঞাসা দেখা দিতেই পারে। এর উত্তর হলো, এ উৎসবের ইতিহাস বেশিদিন আগের নয়। চর্যাপদে তো বটেই, মধ্যযুগের কবিতায় কোথাও নেই পহেলা বৈশাখ উৎসবের কোনো উল্লেখ। নাগরিকতার ছোঁয়া পেতে একে করতে হয়েছে আরও বহুদিন অপেক্ষা।

বছরের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি-এ উৎসবের রেশ পরের দিন নতুন বছরের প্রথম দিন হিসাবে পহেলা বৈশাখে এসে নবরূপে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। দিনটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রচলন শুরু হয় ইংরেজ আমলে। বছরের শেষ মাস চৈত্রের শেষ দিন ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বকেয়া আদায় করার পর চালু করে নতুন খাতা আর নতুন বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উৎসবে পরিণত হয় জমিদার-ভূস্বামীদের পৃষ্ঠপোষকতায়। সেসময় সেখানে থাকত কবিয়ালদের গান, মেলা, নানা উৎসব আয়োজন।

ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখ পালনের প্রথম খবর পাওয়া যায় প্রখ্যাত সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর এক রচনায়। তিনি লিখেছেন, ‘সেদিনের পহেলা বৈশাখে মাহবুব আলী ইনস্টিটিউটের মঞ্চটি আমার চোখের সামনে এখনো জ্বলজ্বল করে ভাসছে। মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী।’ উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৫১ সালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ‘লেখক-শিল্পী মজলিস’ নামে একটি সংগঠন। অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য বিভিন্নজনের কাছ থেকে তোলা হয়েছিল চাঁদা।

আমরা জানি, ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ঢাকাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম বাঙলি মধ্যবিত্তের উদ্ভব ঘটে, সেখানে তাদের চিন্তাচেতনা ও ভাবনায় পহেলা বৈশাখ নিয়ে কোনো আগ্রহই ছিল না। প্রকৃত অর্থে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় সমাজের এ অংশের মধ্যে আত্মপরিচয় সম্পর্কে নতুন জিজ্ঞাসা। তারা পর্যায়ক্রমে শুরু করতে থাকেন সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞানের সন্ধান। ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে পরিত্যক্ত সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান পুনরুজ্জীবনের আকাঙ্ক্ষা।

মনোজগতের এই আত্মপরিচয়ের জিজ্ঞাসা তীব্র হয়ে ওঠার কারণ সাংস্কৃতিক পরিচয়কে স্পষ্ট করা, নিজ জাতিসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করা। এই চেতনা যখন ধীরে ধীরে চারদিক ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক সে সময়ই ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটি ঘোষণার ঘটনাটি বাঙালি জাতীয়বাদকে সামনে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করে। ধর্মীয় পরিচয়ের পাশাপাশি তখন এই সমতল ভূমির অগ্রসর মানুষের কাছে ভাষাগত প্রশ্নে ‘বাঙালি’ পরিচয়টিও হয়ে ওঠে পরিষ্কার। আরও স্পষ্ট করে বলি, সরকারি ছুটি ঘোষণার মধ্যে দিয়ে পহেলা বৈশাখ দিনটি জাতিধর্মনির্বিশেষে সৃষ্টি করে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকশিত হওয়ার সুযোগ।

১৯৬১ সালে তদানীন্তন সেনাশাসক আইয়ুব খানের অঙ্গুলিনির্দেশে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে না দেওয়া এবং ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি বেতারে রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ-এ দুটি ঘটনা মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায় কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি, বরং তারা ভেতরে ভেতরে তাদের স্বাধীন সাংস্কৃতিক পরিচয় খুঁজে বের করার ইচ্ছা প্রচণ্ডভাবে অনুভব করে। আত্মপরিচয়ের এই বাসনা আরও স্পষ্ট রূপ নেয় বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে। তখন পহেলা বৈশাখের উৎসবকে অর্থময় করার ক্ষেত্রে ছায়ানটও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের উদ্যোগেই ১৯৬৭ সালে রমনা বটমূলে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় সংগীতায়োজন এবং পরবর্তী সময়ে এই সংগীতায়োজনকে ঘিরে রমনা পার্কে বৈশাখী মেলার আয়োজন।

সর্বস্তরের বাঙালির শেকড় সন্ধানের এ চেষ্টা মোটেও ব্যর্থ হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শেষদিকে একে আরও মহৎ উচ্চতায় পৌঁছে দেয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। সবার মঙ্গল কামনাই ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য। সেখানে রাক্ষসকে স্বৈরশাসকের প্রতিরূপ হিসাবে দেখানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র-শিক্ষকদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই শোভাযাত্রার পথচলা শুরু ১৯৮৯ সালে। সত্যিকার অর্থে পহেলা বৈশাখ উৎসবে মঙ্গল শোভাযাত্রা যোগ করে নতুন মাত্রা। এখন আমরা জোর গলায় বলতে পারি, স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের সর্বশেষ অর্জন হলো পহেলা বৈশাখকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উৎসবের মর্যাদায় অভিষিক্ত করা।

৩.

পহেলা বৈশাখ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা নতুন বছরের পথচলা। ইতিহাসবিদরা মোগল সম্রাট আকবরের পুণ্যাহের ধারাবাহিকতার সঙ্গে নববর্ষের ঐতিহ্যের মিল খুঁজে পান। হ্যাঁ, সম্রাট আকবরের নির্দেশ অনুযায়ী আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজি ‘তারিখ-ই-ইলাহি’ চালু করেন ৯৬৩ হিজরিতে অর্থাৎ ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। বর্ষপঞ্জি সংস্কারের ক্ষেত্রে সম্রাট আকবর সত্যিই দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তার অব্দটি হলো সৌর অব্দ-আর গণনার পদ্ধতিটিও ছিল সৌরভিত্তিক। ঋতুর সঙ্গে সংগতি রেখে অব্দ আবর্তিত হয় এবং এর প্রচলন শুরু হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের দিন থেকে।

বঙ্গাব্দের শুরু নিয়ে কোনো কোনো পণ্ডিত অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে, রাজা শশাঙ্ক বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। এ মতের সমর্থকরা মনে করেন, ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের কোনো একসময়ে চালু হয়েছিল বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে উৎসবটি পালিত হয়। এ নিয়ে আরও একটি মত হলো, মধ্যযুগে হোসেনশাহীর আমলে প্রচলন হয় বঙ্গাব্দের। তিনি বাংলা ভাষা উন্নয়নে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন-এর অবশ্য ইতিহাসের ভিত্তি আছে।

কিন্তু বঙ্গাব্দ প্রচলনে তার সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাই উল্লিখিত ওই দুই মতই ইতিহাসের তথ্য-উপাত্ত ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের অভাবে হালে পানি পায়নি। ভারতের বিশিষ্ট জ্যোতিঃপদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহাও মনে করেন, মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকেই শুরু হয় বঙ্গাব্দ।

বাংলা বর্ষপুঞ্জির প্রথম সংস্কার হয় ১৯৫২ সালে ড. মেঘনাদ সাহার হাত দিয়ে। ১৯৫৭ সালে ভারত সরকার তার এ সংস্কারের সুপারিশ গ্রহণ করেন। ড. সাহার সেই সুপারিশকেই সামনে রেখে ১৯৬২-৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গাব্দ বর্ষপুঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদই প্রথম সরকারি নথিতে স্বাক্ষরসহ বঙ্গাব্দ চালুর নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই একই কার্যধারা চালু থাকে। এরপর অনেক পথঘাট পার হয়ে ১৯৮৭ সালে এসে জেনারেল এরশাদ সরকারি সব কাজকর্মে খ্রিষ্টীয় সাল-তারিখের পাশাপাশি বাংলা তারিখ লেখার নির্দেশ দেন এবং শহীদুল্লাহ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করে বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরির নির্দেশও জারি করেন। কিন্তু তখন লিপইয়ার নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। শহীদুল্লাহ কমিটির সেই লিপইয়ার সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে আবার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে গঠন করা হয় বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটি। এ কমিটি ১৪ এপ্রিলকে বঙ্গাব্দের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ বৈশাখ হিসাবে ঠিক করে। এতে অবশ্য বাংলা ও খ্রিষ্টীয় সালের তারিখ নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকেনি সত্য। কিন্তু তারপরও কি নিশ্চিত করে বলা যায় সমস্যা পুরো দূর হয়ে গেছে? বাংলাদেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আগরতলায় পহেলা বৈশাখ পালিত হয় ১৫ এপ্রিল।

পহেলা বৈশাখ পালন নিয়ে একদিন আগে-পিছের সমস্যাটি ঠিকই রয়ে গেছে বহির্বিশ্বে। সেখানেও বাংলাদেশের বাঙালি আর ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে পহেলা বৈশাখ পালন নিয়ে একদিন আগে-পিছের সমস্যা ও জটিলতা রয়ে গেছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। পহেলা বৈশাখ নিয়ে এ সংকট আসলেই কি দূর হবে?

তারপরও প্রশ্ন ঠিকই থেকে যায়-পহেলা বৈশাখ উৎসবের সর্বজনীন আবেদন রক্ষা করার প্রশ্নে আমরা সত্যি সত্যি কতটা আন্তরিক? এ প্রশ্ন তো অবশ্যই উঠবে। আশায় বসতি সাজিয়ে আমরা কি বলতে পারি, বাংলা সালের সঙ্গে আমাদের রয়েছে স্বকীয় সাংস্কৃতিক পরিচয়?

এই আশা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া পূরণ করা সহজ নয়। কারণ গ্রেগরি প্রবর্তিত বর্ষপঞ্জির আধিপত্য অপ্রতিরোধ্য-আমাদের প্রতিদিন তো বটেই, জাতীয় জীবনেও এ পঞ্জিকার অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। চোখে আঙুল দিয়ে এটা দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই বোধকরি। ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া ভাষার লড়াই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথ রক্তে রাঙিয়ে নতুন বাঁক নিয়ে শুরু করে পথচলা। বাংলা সাল অনুযায়ী দিনটি ছিল ৮ ফাল্গুন। আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ইতিহাসখ্যাত ৮ ফাল্গুন বাংলা তারিখটি। সেখানে আমরা এখন বলছি, আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি-আমাদের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, আমাদের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। বলুন, কোথায় নেই গ্রেগরি প্রবর্তিত বর্ষপঞ্জির অপ্রতিরোধ্য প্রভাব! সরকারি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে দিনগণনা শুরু হয় গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী।

এ একই অবস্থা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আগরতলা রাজ্যেও। তাই একরাশ খেদ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাঙালির আরও একটি নববর্ষ এলো সদ্য। পালে-পার্বণে বাঙালি নিজের ট্র্যাডিশন দয়া করে স্মরণ করে আজও। হালখাতা হয়, বর্ষবরণ হয়, রবীন্দ্রগানে বৈশাখের আগমন সূচিত হয়। বাঙালির হঠাৎ মনে পড়ে, সে বাঙালি। ঘটা করে স্মরণ করে। তারপর ভুলে যেতে সময় লাগে না।’ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এ কথাটি অনেক কষ্ট পেয়ে বলেছেন।

আরও পড়ুন: বাংলার আকাশে আজ ‘নতুন সূর্য’

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাঙালি বনে যাওয়া যায় না। জীবনযাত্রা ও মানসিকতার ভেতর দিয়ে জাতিসত্তার পরিচয় স্পষ্ট করতে হয়। কিন্তু আমরা কি তা করতে পেরেছি? নববর্ষ উৎসব পালনের পরের দিনই সবার চোখের সামনে আমরা জাতিসত্তার কথা ভুলে গিয়ে বিশ্বায়নের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিই। সেখানে নেই বাঙালির কোনো বৈশিষ্ট্য, নেই বঙ্গাব্দের উপস্থিতি। শুধু একদিনের অনুষ্ঠান-আয়োজনের মধ্যেই কি জাতিসত্তার পরিচয় বাঁচিয়ে রাখা যায়? জানি না, আত্মপরিচয়হীন এ অবস্থা থেকে আমরা কবে বেরিয়ে আসব!

আতাহার খান : কবি ও সাংবাদিক।

সাননিউজ/এমএসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কুমিল্লায় শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা

জেলা প্রতিনিধি: কুমিল্লা জেলার সদ...

শিরীন পারভীন দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুদকের পরিচালক...

টেম্পুচাপায় কলেজছাত্রী নিহত

জেলা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের কালুর...

ভারতের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা...

মুন্সীগঞ্জে দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা 

জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে চিপস...

শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সাধা...

সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু ২ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল থেকে দ...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি তাপপ্রবা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

গরমে ঠান্ডা পানি খেলে কী হয়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমের মধ্যে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি স্বস্তি য...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা