প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (ছবি: সংগৃহীত)
মতামত

ইমরান খান শ্যাম না কুল রাখবেন?

ইমাম উল হক: পাকিস্তানের ১৩তম প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ১৯৯৪ সালে কোয়েটার কমান্ড ও স্টাফ কলেজের গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ করে বক্তব্যকালে প্রশ্নোত্তর সেশনে ক্ষমতার 'ম্যানিপুলেশন' নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন- আপনি জানেন না কখন পরবর্তী সুযোগ পাবেন। সুতরাং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা কোনো ভালো বিষয় নয়। বিশ্বের যে কোনো প্রধানমন্ত্রীর সংকট এটাই। যে সংকটের মুখোমুখি বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

অনেকে ইমরানের অভিজ্ঞতা কম এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা কিংবা অসহনীয় মুদ্রাস্ম্ফীতির কথা বলছেন। অনেকে আবার ক্ষমতাসীন সরকারকে হুমকি দিয়ে অপরিচিত একটি উৎস থেকে চিঠি দেওয়ার কথা বলছেন। আবার ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের চিঠির প্রসঙ্গও আসছে। রাশিয়াবিরোধী বিবৃতি দিতে তারা যে চিঠি দিয়েছে, তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল, অগণতান্ত্রিক, মানবতাবিরোধী এবং সব রকম কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটি দ্বিতীয়বারের ঘটনা; শক্তিশালী পক্ষগুলো পাকিস্তানের ওপর তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চায়। রাজনৈতিক মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের চিঠির বিষয়টি সব দেশপ্রেমিক পাকিস্তানিকে ক্ষুব্ধ করেছে।

ইমরান খান তার রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের জন্য অনেক কিছু ব্যবহার করেছেন। গত ২৭ মার্চ রাতে জলসার নামে ইসলামাবাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে পিটিআই শক্তি প্রদর্শনে বিশাল এক জনসভার আয়োজন করেছে। ওই জলসায় যাওয়া তার এক রাজনৈতিক চাল। ওই জলসায় যেভাবে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তের মানুষ এবং জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা অংশ নেন, তা ছিল অভূতপূর্ব। যদিও আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এসব জনগোষ্ঠীর অনেকেই সাধারণত ভোট দেয় না। একই সঙ্গে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। ফ্লোর ক্রসিং বা নিজ দলের বিপক্ষে গিয়ে অর্থ ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভোট দেওয়া ইত্যাদি কোনো সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়। এটি বরং দুর্গন্ধ ছড়ায়। পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একজন দৃশ্যত দুর্নীতিবাজ নয় এমন ব্যক্তি, যার ইসলামী ভাবধারা আছে, জাতীয়তাবাদী বেশভূষা আছে এবং ক্ষমতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদেরই জয়জয়কার।

দ্বিতীয়ত, ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে নামাতে বিরোধী পক্ষ একজোট। একে একে সহযোগীরা তাকে ছেড়ে গিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও পুনর্নির্বাচন দাবিতে গড়ে ওঠা বিরোধী জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। সর্বশেষ ইমরান খানের দল পাকিস্তান পিটিআই জোটভুক্ত মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) পিডিএমের অন্যতম দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে যোগ দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও পাল্টে গেছে। বুধবার তাদের আনুষ্ঠানিক এ পদক্ষেপে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পথে পিটিআই জোট। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের ৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে জিততে কমপক্ষে ১৭২ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। তবে এখানেও অর্থের খেলা অস্বীকার করা যায় না। মানুষ হিসেবে সর্বোপরি জাতি হিসেবে আমরা যদি সম্মান বজায় রাখতে চাই; এই অর্থসিদ্ধির রাজনীতি বন্ধ করতেই হবে।

তৃতীয়ত, ভোটাররা আজ ব্যক্তি ইমরান খান ও দল হিসেবে পিটিআইকে আলাদা করছে। পিটিআই সুশাসন নিশ্চিত করতে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। যদিও ব্যক্তি ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কাজে লাগানোর দক্ষতা সম্ভাবনা তৈরি করছে।

চতুর্থত, পিটিআই ইমরান প্যাকেজ গ্রহণ করেছে শেষ সুযোগ হিসেবে। যিনি ছিলেন দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী রাজনৈতিক অভিজাতদের বিপরীতে একমাত্র বিকল্প। পরিকল্পনা পরিবর্তন করে পুনরায় চেষ্টা করার কৌশলও ইমরানের জন্য সহায়ক ছিল। যা হোক, এখন ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটে কী হয়, সেটাই দেখার বিষয়। হয় তিনি বেঁচে যাবেন অথবা আগের সবার মতোই তিনি রাজনৈতিক শহীদ হতে যাচ্ছেন। তবে, এবারকার ঘটনা আমাদের রাজনৈতিক ভিত যেভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে, আগে তেমনটি দেখা যায়নি। এবার অর্থের খেলা দেখা গেছে, বিশেষত বিদেশি অর্থ। এবার বৈদেশিক শক্তির প্রকাশ স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে।

এবারের অনাস্থা ভোটের ফল যা-ই হোক, এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা রয়েছে। প্রথম বিষয়, যদি ইমরান খান টিকে যান, তার উচিত হবে সুশাসনে নজর দেওয়া। দ্বিতীয় বিষয়, শিল্পের রাজনীতির প্রচলন। রোম এক দিনে তৈরি হয়নি। 'রিয়াসাতে মদিনা'ও তথৈবচ। দেশপ্রেমিক ও একনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আপস করা খারাপ বিষয় নয়। তৃতীয় বিষয়, ধরে ধরে প্রতিটি সমালোচনার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে যেমন শক্তি খরচ হয় তেমনি সীমিত সময়েরও অপচয় হয়।

অধিকন্তু সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে অনেক সময় ফোকাসও সরে যায়। চতুর্থ বিষয়, যতটা সম্ভব গণচুক্তির মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল থেকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

পঞ্চমত, পাকিস্তানপন্থি অন্য দলগুলোর জন্য সঠিক অবস্থা অনুধাবন এবং 'পাল্‌স' বোঝাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ কখনোই ভুল দিকে থাকতে পারে না। ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থের ওপর জাতীয় স্বার্থই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। বলা বাহুল্য, অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়ে অর্থনীতির ওপর। জাতি বিভাজিত হলে উপকৃত হয় শত্রুরাই। নীতিবহির্ভূত আপস সাধারণত অদৃশ্য শক্তির পথ প্রশস্ত করে।
ষষ্ঠত, দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নাগরিকদের ভোগান্তির কারণ হয় এবং সর্বশেষ অনুগ্রহ ও সম্মানের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তাছাড়া ভালো উত্তরাধিকার রাখারও প্রচেষ্টা থাকা দরকার।

এই নাটকের মধ্যেই আমরা দেখেছি, পাকিস্তানের ৭৫তম দিবস ২৩ মার্চ উদযাপিত হয়েছে। ওই দিন ওআইসির প্রতিনিধি দল থাকলেও সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। যেহেতু ওইদিন ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকেন কিনা, সে সংশয় ছিল।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে পিকআপ-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

উপসংহারে অনেকে বলতে পারেন, চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং ওআইসির হাত ধরেই পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি ও স্থিতিশীলতা আসতে পারে। আমরা কি নিজেদের এ সংকীর্ণতার মধ্যেই রাখব?

ইমাম উল হক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল; পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক।

সাননিউজ/এমএসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফেনসিডিলসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈ...

আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এল...

কেশবপুরে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত 

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুর প্রতিনিধ:

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মোঃ মনির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার :...

মুন্সীগঞ্জে বিএনপির ইফতার মাহফিল

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে বাংলাদেশ জাতীয়তাবা...

আমরা লগি-বৈঠার রাজনীতি করি না

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড....

আবারও নেতৃত্বে বাবর!

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন বিশ্বকাপের আগে ফের বাবর আজমকে অধিনায়ক...

সরকার মানুষের পাশে আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার সবসময় মানুষের পাশে আছে। মানুষের জীব...

রাজধানীতে এসবির রিপোর্টার নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় তোফাজ্জল হোসেন...

দ. আফ্রিকায় বাংলাদেশিকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে এ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা