আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অর্থনৈতিক সাফল্যের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত তরুণ জনবল নিশ্চিত করতে এক সন্তান নীতি থেকে সরে তিন সন্তান গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার পথে হাঁটছে চীন। আশির দশকে চালু হওয়া এক সন্তান নীতির ফলে ৪০ কোটি অতিরিক্ত সন্তান জন্মগ্রহণ ঠেকায় চীন। এমন দাবি দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তার আগে থেকেই দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা ছিল নিম্নমুখী।
বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চীনে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রতিজন মায়ের সন্তান সংখ্যা ছয় থেকে কমে তিনে নেমে আসে। দেশটিতে এক সন্তান নীতি চালু করার পর এ সংখ্যা আরো কমতে থাকে।
২০২০ সালে, চীনে ষাটোর্ধ্ব নাগরিক ছিল মোট জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। একইভাবে, ২০২০ সালে চীনে কর্মক্ষম নাগরিকের সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। দশ বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল ৭০ শতাংশের কিছু বেশি।
মাঝে দুই সন্তান নীতি প্রণয়ন করা হলেও তা এই ধারাকে তেমন একটা প্রভাবিত করতে পারেনি। পাশাপাশি, চীনা সমাজে নারীরা সন্তানবিমুখ হতে শুরু করেন। সব মিলিয়ে, চীনে বর্তমানে সন্তান জন্মের হার কমছে।
এই সমস্যা শুধু চীনের একার নয়। জাপান বা জার্মানির মতো দেশেও রয়েছে এই পরিস্থিতি, যেখানে ক্রমেই কমে আসছে কর্মক্ষম জনবল। কিন্তু সেই দেশগুলির জন্য তা এত বড় সমস্যা নয়।
জাপান বা জার্মানির অর্থনীতি মূলত প্রযুক্তি, বিদেশি লগ্নি ও কারখানায় অর্থায়নের পরিচালিত হয়ে থাকে। কিন্তু চীনের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে শ্রমনির্ভর পণ্য প্রস্তুতকারী শিল্প ও কৃষির উপর। যার ফলে দেশটিতে কর্মক্ষম জনগণের প্রাধান্য তুলনামূলক বেশি।
বদলাচ্ছে চীন?
শুক্রবার চীনের স্ট্যান্ডিং কমিটি অফ দ্যা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস জানায় যে সন্তান ধারণ বিষয়ে যে সমস্ত কড়াকড়ি আগে চালু ছিল, তা তারা তুলে নিচ্ছে। পাশাপাশি, জরিমানা আর থাকছে না, দেওয়া হচ্ছে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ।
এছাড়াও, শিক্ষা, গৃহায়ণ, কর ও নিয়োগ বিষয়ক নীতিতে বদল আনার প্রস্তাব আলোচিত হচ্ছে, যা 'পরিবারের ওপর চাপ কমাবে' বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এই বদলের সাথে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসছে দেশটিতে সন্তানসম্ভবা নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেওয়া ও সহকর্মীদের তাদের প্রতি আচরণের বিষয়টি। চীনের কর্মক্ষম জনসংখ্যায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব উচ্চহারে থাকলেও কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক স্তরে উচ্চ নেতৃত্বের পদে নারীদের অভাব লক্ষণীয়।
পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র এইসব উচ্চ মর্যাদার পদে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী রয়েছেন। পাশাপাশি, আসছে কয়েক দশকে যে সকল তরুণ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার মধ্যেও ১১ শতাংশ নারী।
সান নিউজ/এমএম