বিনোদন ডেস্ক: চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে জায়েদ-নিপুণের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক উজ্জ্বল বলেছেন, ‘সিনিয়র শিল্পীরা বৈঠকে বসে জায়েদ খান এবং নিপুণকে এক বছর করে শিল্পী সমিতির দায়িত্ব দিলেই হয়। এই পদের মধ্যে কী আছে আমি বুঝি না, যার কারণে একেবারে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে চলে যেতে হবে।’
সম্প্রতি শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক উজ্জ্বল। জনপ্রিয় চিত্রনায়ক উজ্জ্বলের আসল নাম আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ১৯৪৬ সালের ২৮ এপ্রিল পাবনার শাহজাদপুরের জন্তিহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত উজ্জ্বল নিয়মিত নাটক করতেন ঢাকা টেলিভিশনে। নাটকের অভিনয় দেখে প্রযোজকেরা তাকে চলচ্চিত্রে নেয়ার আগ্রহ দেখান।
এরপর ১৯৭০ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘বিনিময়’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। প্রথম চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। এরপর ১৯৭২ সালে তিনি ইউসুফ জহির পরিচালিত হাস্যরসাত্মক-নাট্যধর্মী ‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবিতে বুলবুল আহমেদ ও ববিতার সঙ্গে অভিনয় করেন। একই বছর সুভাষ দত্ত পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ ছবিতে অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গে উজ্জ্বল বলেন, ‘কী এমন লুকিয়ে আছে এই পদের মধ্যে যে যুদ্ধ করে তা দখল করতে হবে! আমি এবার ভোট দিতে যাইনি। মনে হচ্ছে ভোট না দিয়ে ভালোই করেছি। কারণ এই নির্বাচন নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই বেশি হচ্ছে সবখানে। আমি চলচ্চিত্রের একজন মানুষ। আমার লজ্জা করছে এসব কাণ্ড-কারখানা দেখে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সময়েও শিল্পী সমিতি ছিল। নির্বাচন আমিও করেছি। তখন নির্বাচন হতো উত্সবের মতো। এখন কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি ছাড়া কিছুই দেখি না। আমি অতি দ্রুত সিনিয়র অভিনেতা, প্রযোজক এবং পরিচালকদের এক হয়ে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: জায়েদ-নিপুণের কেউ চেয়ারে বসবে না
এর আগে বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
একইসঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আদালত। আদেশে বলা হয়, আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে জায়েদ-নিপুণ কেউ সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: ফের বিয়ে করলেন সারিকা
এর আগে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে জায়েদ খান তার বিরুদ্ধে নেওয়া নির্বাচনের আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন। এ দিনই শুনানি শেষে হাইকোর্ট জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে তাকে সপদে বহাল থেকে কাজ চালিয়ে চাওয়ার আদেশ দেন। একই সঙ্গে চিত্রনায়িকা নিপুণের পদ স্থগিত করেন।
এছাড়া জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের আপিল বোর্ডকে সেই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
আরও পড়ুন: ইয়াং স্টার চ্যাম্পিয়ন ইপা
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে গত শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে চিত্রনায়িকা নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল শিল্পী সমিতির নির্বাচনের জন্য গঠিত আপিল বোর্ড। পরের দিন রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণসহ নতুন কমিটির ১০ জন শপথও নেন।
এর আগে শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অফিসে আপিল বোর্ডের জরুরি বৈঠক শেষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ হারান অভিনেতা জায়েদ খান। এইসাথে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্পী সমিতির ৩৮ বছরে প্রথম নারী সাধারণ সম্পাদক হলেন নিপুণ।
আরও পড়ুন: হিরো আলমের গোমর ফাঁস
এর আগে সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী জায়েদ খানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ আক্তার। তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি না মানার অভিযোগ এনেছেন ইসি পদে নির্বাচিত চুন্নুর বিরুদ্ধেও। অভিযোগ আমলে নিয়ে শিল্পী সমিতির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও সচিব বরাবর দিক নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতর আপিল বোর্ডকে নির্দেশ দেন।
এর আগে ২৮ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিএফডিসিতে শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক (২০২২-২৪) মেয়াদের নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন ভোট পেয়েছেন ১৯১টি। অপরদিকে তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পেয়েছেন ১৪৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান পেয়েছেন ১৭৬ ভোট। তার বিপরীতে নিপুণ পেয়েছেন ১৬৩ ভোট।
আরও পড়ুন: নাসির-তামিমার বিচার শুরু
এছাড়া সহ-সভাপতি- ডিপজল (২১৯) ও রুবেল (১৯১), সহ-সাধারণ সম্পাদক- সাইমন সাদিক (২১২), সাংগঠনিক সম্পাদক- শাহানূর (১৮৪), আন্তর্জাতিক সম্পাদক- জয় চৌধুরী (২০৫), দফতর ও প্রচার সম্পাদক- আরমান (২৩২), সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক- ইমন (২০৩), কোষাধ্যক্ষ- আজাদ খান (১৯৩), কার্যকরী পরিষদ পদে রোজিনা (১৮৫), মৌসুমী (২২৫), কেয়া (২১২), জেসমিন (২০৮), অঞ্জনা (২২৫), অমিত হাসান (২২৭), চুন্নু (২২০), আলিরাজ (২০৩), সুচরিতা (২০১), ফেরদৌস (২৪০) ও অরুণা বিশ্বাস (১৯২)। নির্বাচনে কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন পীরজাদা হারুন। এবার সমিতির ভোটার সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন। ভোট দিয়েছেন ৩৬৫ জন। বাতিল ১০ ভোট। ৩৫৫টি ভোট বৈধ।
সান নিউজ/এমকেএইচ