বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত রিজেন্ট বোর্ডের সভা বাতিল করে চলে যেতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষক–কর্মকর্তারা।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার মেয়াদকালের শেষ সময়ে এসে ১০২ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা আহ্বান করেছিলেন।
বোর্ড সভা শুরুর পর পরই সদস্যরা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আপত্তি তোলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্য সভা স্থগিতের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হন আপগ্রেডেশনের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
সভা স্থগিতের কথা জানাজানি হওয়ায় বোর্ড সদস্যরা উপাচার্যকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা ২ টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন উপাচার্য।
রিজেন্ট বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা শুরু হয়।
শুরুতেই বোর্ডের সদস্যরা নিয়োগে আপত্তি তোলেন। একই সঙ্গে উপাচার্যের ভাতিজিকে চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন।
সদস্যরা নিয়োগ স্থগিত রেখে অন্য এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানান। এতে উপাচার্য ক্ষিপ্ত হন। নিয়োগ না হলে রিজেন্ট বোর্ড স্থগিতের ঘোষণা দেন। মাত্র ৩০ মিনিট আলোচনার পরই রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরা সভাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরা সভাস্থল ত্যাগ করার পরই খবরটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় আপগ্রেডেশনের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তারা এসে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চান। তিনি কথা বলতে রাজি না হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপাচার্যকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ও পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকু সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘রিজেন্ট বোর্ড সভা শুরুর পূর্বেই বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ নিয়ে আপত্তিকর সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
আমরা বোর্ডে উপস্থিত হয়ে সেগুলোই উত্থাপন করেছি। বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই নিয়োগ স্থগিতের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু উপাচার্য তাতে রাজি না হয়ে সভা স্থগিত করেছেন।’
প্রসঙ্গত, আগামী ৬ মার্চ দায়িত্বকালের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে উপাচার্য এম রোস্তম আলীর। তিনি এর আগে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।
রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভায় ৬১টি আলোচ্য সূচির মধ্যে ৪২টি ছিল নিয়োগের অনুমোদনসংক্রান্ত। এসব নিয়োগের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন কুমিল্লা সদরের কৃষ্ণনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম।
তালিকায় নিজের নাম না দেখে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে উপাচার্যের পথরোধ করেন। তিনি চাকরির জন্য উপাচার্যকে ঘুষ দিয়েছেন দাবি করে সেই টাকা ফেরত চান।
এমনকি এ–সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর নিয়োগটি বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুন: মিজান-বাছিরের মামলার রায় ২৩ ফেব্রুয়ারি
প্রসঙ্গত, স্বজনপ্রীতি করে উপাচার্য এম রোস্তম আলী তাঁর ভাতিজি কানিজ ফাতেমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে চাকরি দিয়েছেন। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সান নিউজ/ এইচএন