ভোলা প্রতিনিধি : ভোলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, বর্ণাঢ্য র্যালিসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।
আরও পড়ুন : বগি লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল বন্ধ
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করেন।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা হাতে বাংলাদেশের পতাকা বহন করে বিজয়ী উদযাপন করেন। র্যালিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়। এর আগে দিনের শুরুতে ওয়াপদা কলোনির বধ্যভূমির শহীদ স্মৃতিস্তবে পুষ্পর্ঘ্য অর্পন করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
পরে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জেলা পরিষদ।
অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী।
আরও পড়ুন : সন্ত্রাস, নাশকতা, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনসভা
এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, জেলা পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আরিফুর রহমান, ভোলা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো: মোশারেফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তামিম আল ইয়ামিন, ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডর মো: দোস্ত মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছাদ্দুজ্জামান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডর মো: শফিকুল ইসলাম, ভোলা প্রেসক্লাব সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. হাবিবুর রহমান, প্রবীন সাংবাদিক আবু তাহের, ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাবে যুগ্ম-সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নকীব প্রমুখ।
এসময় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে মুক্তিযোদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিল।
আরও পড়ুন : প্রতিপক্ষের হামলায় ৯ আ’লীগ কর্মী আহত
দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তি সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর ভোলাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত করা হয়। সেই দিনকে স্মরণ করে রাখার জন্য ভোলা মুক্ত দিবস পালন করা হয়।
এসময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এই স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। এটি আমাদের রক্তের বিনিময়ে কিনতে হয়েছে। আমরা যেন সেই স্বাধীনতাকে মূল্য দিতে পারি। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করতে পারি। আজকে নতুন প্রজন্মের কাছে এটি আমাদের আহবান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু বলেন, ভোলা মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস গর্বিত ইতিহাস। এই জেলা মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে কোন আধুনিক অস্ত্র পায়নি। তাদের মেধা খাটিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে নিজেদের মনোবলের উপরে এই জেলা পাক হানাদার বাহিনী মুক্তি করতে পেরেছি।
এসময় তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি হানাদাররা যখন ভোলা থেকে চলে গেলো তখন ভোলাতে উঠলাম তখন ভোলার মানুষের কি যে উল্লাস, ফুর্তি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। সেদিন যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তারা বুঝতে পেরেছে মনে হয় যেন মাথা থেকে একলক্ষ টনের একটি বোমা মাথা থেকে ফেলেছি।
আরও পড়ুন : কৃষিতে ভূমিকা রাখছেন গ্রামীণ নারীরা
তাই সেদিনের সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। সরকার যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। একটা সময় দেশে মুক্তিযোদ্ধারা থাকবে না। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে দেশ স্বাধীন হওয়ার ইতিহাস। এমনটাই প্রত্যাশাই রাখেন বক্তারা।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার মুক্ত হয় ভোলা। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সারাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের ৫ দিন আগে ভোলা মুক্ত করেন।
এই দিন ভোরে পাকিস্তানি সেনারা একটি লঞ্চে করে গোপনে ভোরে পালিয়ে যায়। পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর ১০ ডিসেম্বর সকালে কালেক্টরেট ভবনের সামনে পতাকা উড়িয়ে ভোলাকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধারা। এভাবে ভোলা হানাদার মুক্ত হয়।
সান নিউজ/এইচএন