সারাদেশ

টঙ্গীবাড়িতে ১৫ পরিবারের ৩৩ বসতভিটা বিলীন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়নের কাইচাইল গ্রামে গত এক মাসে খালের ভাঙ্গনে আধা কিলোমিটার এলাকায় ১৫ পরিবারের ৩৩টি বসত ভিটা বিলীন হয়ে গেছে।

এর মধ্যে গত ২দিনে ভাঙ্গনের তিব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০ পরিবারের বসত ভিটা বিলীন হয়। এনিয়ে উৎকন্ঠায় আছেও ওই গ্রামের আরও ৩০ টি পরিবার। এলাকাবাসীদের সরকারের কাছে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থার দাবী।

সরেজমিনে শনিবার গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাইচাইল গ্রামে ভাঙ্গন চলছে। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তালতলী-গৌরগঞ্জ খালে তিব্র স্রোত বইছে। আর স্রোতের মধ্যেই চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেড। স্রোত আর বাল্কহেডে উৎপন্ন ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসত ভিটা। ইতিমধ্যে ওই গ্রামের ১৫টি পরিবারের ৩৩টি বসত ভিটা ওই খালের মধ্যে বিলিন হয়ে গেছে। এতে ১৫টি পরিবারের কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তালতলা গৌরগঞ্জ খালটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গৌরগঞ্জ এলাকার পদ্মা নদী হতে পাশের টঙ্গীবাড়ি ও সিরাজদীখান উপজেলা হয়ে সিরাজদীখান উপজেলার তালতলা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে।

কয়েক বছর আগেও খালটি মরা খালের মতো থাকলেও অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে এ খাল হতে মাটি কাটায় এবং এই খাল দিয়ে অসংখ্য বাল্কহেড চলাচল করায় বিগত কয়েক বছর ধরে এ খালের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

গত বছর টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শিলিমপুর এলাকার বেশ কিছু বসত ভিটা এই খালে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর শিলিমপুরের পাশের গ্রাম কাইচাইলে এই ভাঙ্গন চলছে।

এলাকবাসীর অভিযোগ খাল হতে অবৈধভাবে বালু কর্তন আর অবাধে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারনে এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

ঐ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত এক মাসে কাইচাইল গ্রামের মনির হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, ইমরান খান, মোতালেব বেপারী, শাহ আলম, আলমগীর, জাহাঙ্গীর, হাসমত আলী বেপারী , খালেক সেখ, বারেক সেখ, আব্দুল মালেক সেখ, সানাউল্লাহ বেপারী, আহসানউল্লাহ বেপারী, জসিম বেপারীসহ অন্যান্যদের ৩৩ টি বসত ভিটা ওই খালে বিলীন হয়ে গেছে।

বাপ ও চাচাদের মিলে মাত্র ৪ শতাংশ বসত ভিটা ছিল গ্রামের দুই ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইমরান হোসেনের। দুই ভাইয়ের পরিবার ও মা তাসলিমা বেগমকে নিয়ে ৪ শতাংশের মধ্যেই বসবাস করতো তারা। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে খালের পানির তীব্র স্রোতে ভেঙ্গে গেছে দুই ভাইয়ের বসতভিটা। এখন পাশের এক বাড়িতে টিন ও কাঠ দিয়ে নির্মিত তাদের ঘর দুটি রাখলেও তোলার মত স্থান পাচ্ছেন না। এর মধ্যে ইমরানের অপরের বাড়িতে ঠাই মিললেও মা তাসলিমা বেগম ছেলে জাহাঙ্গীর তার স্ত্রী রুপা বেগম এর ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

প্রতিবেশী তোফাজ্জল হোসেন এর বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় চকি বিছিয়ে উন্মুক্ত আকাশের নিচে বাসবাস করছেন ওই পরিবারটি। চকি পেতে বসবাস করতে পারলেও চুলা জালানোর মতো স্থান আর খাবার সামগ্রী নেই ওই পরিবারের। তাই প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবারের উপর ভরসা করে, অনাহারে দিন কাটছে ওই পরিবারের। পান নি কোন সরকারি সহয়তা কোথায় যাবেন জানেন না তারা।

জাহাঙ্গীরের বৃদ্ধা মা তাসলিমা বেগম (৬৫) কান্নায় ভেঙ্গে পরে বলেন, আমাদের যায়গা নেই, বাসা নেই। আমরা এখন অনেক অসহায় হয়ে পরে আছি। কোথায় যাবো জানি না।

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, আমাদের ৪ শতাংশ বাড়ি ছিল ভাইঙ্গা গেছে গা। কোথায় হতে কোথায়ও যাওয়ার মতো জায়গা নাই। খাওন বলতে কিছু নাই। গাছ তলায় বসে থাকি। গাছের তলায়ই খাওয়া দাওয়া করি। পাশের এক বাড়ি হতে ভাত দিয়ে যায়। দিয়ে গেলে খাই, না দিয়ে গেলে, না খেয়ে থাকি।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ৭দিন যাবৎ আমাদের ঘর ভাইঙ্গা গেছে। বাড়ি ভাইঙা যাওয়ার পর পাশের বাড়ির এক ভাই বলতেছে আমাগো এখানে এখোন চকি বিছাইয়া আপতত থাক, দেখি কি করতে পারি। এখন আমাদের থাকার কোন যায়গা নাই । আমরা খুব অসহায় আছি রাতে খোলা আকাশের নিচে বাচ্চা লইয়া থাকি।

গ্রামের প্রয়াত হাসমত আলী বেপারীর স্ত্রী সালেহা বেগম (৭৫) ঘরের দরজায় বসে বিলাপ করছিলেন। পাশেই চলছে তার ছেলে আলমঙ্গীরের পাকা ভবন ভাঙ্গনের কাজ। এর আগে খালের ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে তার অপর তিন ছেলে জাহাঙ্গীর, মোতালেব ও শাহ আলমের বসত ভিটা। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, বিয়ের পর স্বামী আমারে এই বাড়িতে এনে তুলছে। আজ সেই বাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমার ছেলে নাতি নাতকুরদের নিয়ে কোথায় যাইবো ।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য নবী হোসেন বলেন, খালের ওই পারে সম্রাট কোল্ডস্টোরেজের মালিকেরা খালে ড্রেজার বসিয়ে এ পারের খালের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। এতে এপারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অসহায় মানুষের বাড়িঘরসহ যার, যা ছিল সব ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। এখানে এমন মানুষ আছে, যাদের আর এক শতাংশ জমিও নাই। ঘর উঠাইবো কোথায়, মানুষগুলোর যাওয়ার মতো জায়গা নাই। আমি সরকারে কাছে সাহয্যের প্রার্থনা করছি।

এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা ওই এলাকার চেয়ারম্যান এর কাছ হতে একটা লিষ্ট পেয়েছি। ভাঙ্গন চলমান রয়েছে। সরকারিভাবে নদী ভাঙ্গন কবলিতদের যে ধরনের সহায়তা পাওয়ার কথা তার সব ব্যবস্থাই আমরা করবো। একটি পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে তাকে অবহিত করলে তিনি বলেন আমি অবশ্যই তার স্লেটারে ব্যবস্থা করবো।

সান নিউজ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ছুটি শেষে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু

মো. রাশেদুজ্জামান রাশেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:...

খাগড়াছড়িতে ৪১ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

দীর্ঘতম আলপনায় বিশ্বরেকর্ড গড়ার উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: এশিয়াটিক এক্সপে...

খাগড়াছড়িতে নানা আয়োজনে নববর্ষ উদযাপন

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

শিবগঞ্জে তেলের গোডাউনে আগুন

জেলা প্রতিনিধি: বগুড়ার শিবগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি তেলে...

বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি : ঝালকাঠিতে বজ্রপাতে সিহাব জমাদ্দার (১৫) নামে...

মুন্সীগঞ্জে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৭

জেলা প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আ...

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ...

কেএনএফের আরও ৯ সদস্য গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : বান্দরবানের রুমায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে...

বজ্রপাতে প্রাণ গেল ২ জনের 

জেলা প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচরে পৃথক বজ্রপাতে ২ জনের মৃত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা