এহসানুল হক (ঈশ্বরগঞ্জ) প্রতিনিধি : সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের পা দুটি হারিয়েছিলেন কৃষক উজ্জ্বল। ২২ বছর আগে তিনি পেশায় ছিলেন বাসের একজন হেল্পার। হেল্পারি করেই চলতো জীবন। পেটের দায়ে প্রতিদিন বাসে হেল্পারি করতে যেতেন উজ্জ্বল।
আরও পড়ুন : বৈপ্লবিক সাফল্য দেখিয়েছে সরকার
সময়টা ছিল ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। ফেব্রুয়ারী মাসের ৩ তারিখের সকাল। প্রতিদিনের মতোই ঘুম থেকে ওঠে বাসে গেলেন তিনি। সে যে বাসে হেল্পারি করতো সে বাসটি ময়মনসিংহের ভালুকা সংলগ্ন আসতেই হঠাৎ একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে উজ্জ্বল গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার দুটি পা কেটে ফেলে দিতে হয়েছিল। তখন থেকেই জীবন সংগ্রামে দুই পা ছাড়াই পথ চলা শুরু হয়েছে তার।
পা দুটো হারিয়ে শুরু হয় তার অন্য জীবন। অভাব, দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছিল তার। চোখে মুখে ছিল চিন্তার ভাজ। কিভাবে চালাবেন সংসার? কীভাবে মানুষ করবেন সন্তানদের? এমন সময় উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখছার খান তাকে পরামর্শ দেয় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির।
আরও পড়ুন : গ্রামে ফোরজি পায় না, ফাইভ-জি দরকার নেই
কিন্তু উজ্জ্বল চিন্তায় ছিলেন পা ছাড়া তিনি কীভাবে এ কাজ করবেন। সাধারণত কেঁচো সার রিংয়ে চাষ করা হয়। আর রিংয়ের উপর দিয়ে তার চলাফেরা ও কাজ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। পরে আলী আখছার তাকে হাউসে কেঁচো সার চাষ ও হাউসের মাঝ বরাবর একটি রাস্তা করার পরামর্শ দেয়। যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করে সহজেই কেঁচো সার চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন তিনি।
তখন থেকেই হয়ে যান বাসের হেল্পার থেকে কেঁচো চাষি। দুই পা হারিয়েও কেঁচো সার চাষ করে দিনবদল করেছেন হামিদুল হক উজ্জ্বল (৪৫) নামের এ কৃষক। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের চর পুম্বাইল গ্রামে। সংসারে রয়েছে তার দুই পুত্র সন্তান।
সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উজ্জ্বল তার বাড়ির আঙিনায় আড়াই শতাংশ জায়গার উপর শেড তৈরি করে কেঁচো সার চাষ শুরু করেন। তার কেঁচো সারের খামারে ১০ টি হাউজ রয়েছে। খামারটি তৈরি ও উৎপাদন বাবদ মোট খরচ হয় ৬০ - ৭০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে তিনি ১০ টি হাউস থেকে প্রায় দেড় -দুই লক্ষ টাকার কেঁচো ও সার বিক্রি করেছেন।
আরও পড়ুন : আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত
বড় হাউস হওয়ায় তিন মাস পর পর প্রতি হাউস থেকে ৫ মণ করে ৫০ মণ কেঁচো সার উত্তোলন করে বিক্রি করতে পারেন বলে জানান উজ্জ্বল। প্রতি মণ ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। এখন শুধু কেঁচো সার উৎপাদনই নয়, তার রয়েছে কম্বাইন হারবেস্টার, হালচাষের ট্রাক্টরও। যার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তার সংসারে আরও স্বচ্ছলতা এসেছে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, ‘জৈব সারকে মাটির প্রাণ বলা হয়। আদর্শ মাটিতে শতকরা ৫ ভাগ জৈব সার থাকা উচিত। কৃষক হামিদুল হক উজ্জ্বলের জৈব (কেঁচো সার) উৎপাদনের বিষয়টি প্রশংসার দাবিদার। শুনেছি তিনি এক্সিডেন্টে তার দুটি পা হারিয়েছেন। তারপরও সে যা করে দেখিয়েছে তা অন্য কৃষকদের উৎসাহিত করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন ও মাটিতে এ সার ব্যবহারে উৎসাহিত করছি।’
সান নিউজ/এইচএন