বরগুনা গণহত্যা দিবস ২৯ ও ৩০ মে
সারাদেশ

২৯ ও ৩০ মে বরগুনা গণহত্যা দিবস

মোঃ সানাউল্লাহ, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি : ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দু’দিনে সংগঠিত হয়েছিলো বরগুনার ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত কালো ঘটনা। মানুষের জন্য নিরাপদ স্থান বলে বিবেচিত বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জন স্বাধীনতাকামী নিরপরাধ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাক হানাদার বাহিনীর মেজর নাদের পারভেজের নেতৃত্বে স্থানীয় শান্তি বাহিনীর প্রধান এমএলএ আ. আজিজ মাস্টারের সহযোগিতায় এ নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়।

আরও পড়ুন : দেশে পৌঁছেছে গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ২৭ মে মেজর নাদের পারভেজের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনী বরগুনায় প্রবেশ করে। তৎকালীন গণপূর্ত ডাকবাংলোয় অবস্থান নেয় বর্বর এ বাহিনীর সদস্যরা। ওইদিনই তারা বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এবং মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে বৈঠক করে একটি নিখুঁত গণহত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের সহায়তা করে দেশীয় রাজাকার এবং আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা মুক্তিকামী পরিবারে হানা দিয়ে দিয়ে পুরুষ-মহিলাদের হাত পেছন মোড়া করে বেঁধে নিয়ে আসে ক্যাম্পে। সেখান থেকে যুবতী আর মহিলাদের পাঠানো হয় ডাক বাংলোয় আর পুরুষদের পাঠানো হয় জেলখানায়। পৈশাচিক নির্যাতন শেষে মেয়েদের পরের দিন ছেড়ে দেয়া হয়। জানানো হয় পুরুষদের দু’দিন পরে ছাড়া হবে। কিন্তু তাঁদের আর দেখা পায়নি পরিবারের সদস্যরা।

আরও পড়ুন : ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ট্রেন চলাচল শুরু

২৯ ও ৩০ মে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম জঘন্য এক ঘটনা ঘটে বরগুনার জেলখানায়। কারা অভ্যন্তরে ২৯ মে সকালে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয় ৪২ জন মুক্তিকামী জনতাকে। পরের দিন সকালে একইভাবে আরও ৩৪ জনকে হত্যা করা হয়। এই শহীদদের লাশও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। জেলখানার পশ্চিম পাশে গণকবরে মাটি চাপা দেয়া হয় তাদের। গুলি খেয়েও যারা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও কোদাল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অনেক নারকীয় ঘটনা ঘটেছে তবে জেলখানার অভ্যন্তরে গণহত্যার ঘটনা বিরল।

বরগুনা-১ আসনের ৫ বারের জননন্দিত সাংসদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বাবা ধৈর্য্যধর দেবনাথ ছিলেন সেই মহান শহীদদের ভেতরে অন্যতম প্রধান। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো ৩০ মে।

আরও পড়ুন : বাটলার ঝড়ে কোহলিদের বিদায়

সেদিন জেলাখানার হত্যাকান্ড থেকে ভাগ্যগুণে রক্ষা পেয়েছিলেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলখানা থেকে অনেক লোককে ছেড়ে দেয়া হলেও তখনকার তুখোড় ছাত্রনেতা শম্ভু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে এবং বরগুনা শহরে তাদের বাড়িটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালিত হওয়ায় তাঁর বাবাকে ছাড়া হয় নি।

এ কারণে সেসময়ে পটুয়াখালী জেলার সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, ৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের মেজর নাদের পারভেজ প্রকাশ্য জনসভায় তখনকার প্রখ্যাত ছাত্রনেতা শম্ভুসহ ১২ জন ছাত্রনেতা এবং মুক্তিযোদ্ধার মাথার মূল্য এক সের স্বর্ণ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েকবারের চেষ্টাতেও ছাত্রনেতা শম্ভুকে ধরতে না পেরে তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।

আরও পড়ুন : ভার্মি কম্পোস্টে মোজাম্মেলের মুখে ফুটেছে হাসি

পাক বাহিনীর মেজর নাদের পারভেজ এবং ক্যাপ্টেন সাখাওয়াতের পক্ষ থেকে শর্ত দেয়া হয়েছিলো, ‘শম্ভুকে আমাদের হাতে তুলে দিন অথবা তাঁর খোঁজ দিন, আমরা আপনাকে ছেড়ে দেবো।’ একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের পিতা হয়ে সেই শর্ত মেনে নিতে রাজি হন নি তিনি। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় তিনি সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তখন এক দিকে ছিলো দেশ আর নিজের সন্তান অন্য দিকে মৃত্যু। সেই সংকটময় মূহুর্তে দেশ আর নিজের সন্তানকে নিঃশঙ্ক চিত্তে উপরে তুলে ধরে তিনি মেনে নিয়েছিলেন মৃত্যুর নিষ্ঠুরতম নিয়তিকে। অমানুষিক নির্যাতন শেষে হায়েনারা দুটো গুলি করেছিলো তাঁকে। প্রথম গুলিতে মৃত্যু না হওয়ায় দ্বিতীয় গুলিটি করে নিশ্চিত করা হয়েছিলো মৃত্যু।

এ প্রসঙ্গে বরগুনা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ একাত্তর বরগুনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন মনোয়ার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বরগুনা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বরগুনার বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এ কারণে ধরে নেওয়া সব বয়স্ক মানুষকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সংসদ সদস্যের বাবাকে ছাড়া হয় নি। তিনি তাঁর সন্তানের খোঁজ পাক হানাদার বাহিনীকে দেন নি।

আরও পড়ুন : বিশ্বের ২২ দেশে মাঙ্কিপক্স রোগী

বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ১৯৭১ সালের ২৯ ও ৩০ মে বরগুনার ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিলো। মুক্তিকামী সাধারণ জনগণকে ধরে নিয়ে এনে তাঁদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়, গুলির পরেও যাঁরা মারা যায়নি তাঁদেরকে কোদাল ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছিলো। সেদিনের সে মহান শহীদদের ভেতরে আমার বাবাও ছিলেন।

তিনি আমাকে বাঁচাতে এবং দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে নির্ভীক চিত্তে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। এটা আমার জন্য যেমন অত্যন্ত গর্বের এবং তেমনি কষ্টের। সেদিন আমার বাবাসহ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তিনি আরও বলেন, বরগুনা বধ্যভূমির সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্য ইতিমধ্যেই আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ভবিষ্যতেও আমি যথাযথ পদক্ষেপ নেবো।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা