সারাদেশ

আখাউড়া বন্দরে আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে মাছ রফতানি 

নিজস্ব প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরটিকে শতভাগ রপ্তানিমুখি স্থলবন্দর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, ভারত থেকে প্রসাধনীসহ অন্যান্য উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি না থাকায়, ব্যবসায়িরা পণ্য আমদানি করেন না। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে কয়েক কোটি টাকার পণ্য যায় ভারতে।

তবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েপড়া করোনাভাইরাসের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। অদৃশ্য করোনার থাবায় বন্দরে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।

তবে মহামারির ধকল কাটিয়ে আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ স্থলবন্দরটি। এখন স্বাভাবিক সময়ের মতোই পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সিংহভাগই হলো মাছ। প্রতিদিন গড়ে ১০০ টন মাছ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। যার মূল্য আড়াই লাখ মার্কিন ডলার।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস রপ্তানিকারক সমিতির দেয়া তথ্যমতে, চিংড়ি ও ইলিশ ব্যতীত সব প্রজাতির মাছই রপ্তানির অনুমতি আছে। প্রতি কেজি মাছের গড় মূল্য ২.৫ মার্কিন ডলার। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক মাছ যাচ্ছে ভারতে।

রপ্তানির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও ভৈরব, চাঁদপুর ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ সংগ্রহ করেন ব্যবসায়িরা।

রপ্তানিকৃত মাছের তালিকায় রয়েছে; পাঙ্গাস, ‍রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, কার্ফু ও পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসবের ৫০ শতাংশ যায় ত্রিপুরার বাজারে আর বাকি ৫০শতাংশ যায় শিলচরে। সব মাছই বরফায়িত। কারণ, দুই দেশের বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে ভারতীয় ব্যবসায়িরা বাজার ধরতে পারেন না। এর ফলে তাজা মাছ রপ্তানি করা যায় না।

ত্রিপুরা ও শিলচরের বাজারে এখন পাঙ্গাস মাছের চাহিদাই বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা। প্রতিদিন রপ্তানি হওয়া ১০০ টন মাছের মধ্যে ৩০ টনই পাঙ্গাস। আর এখন শীতকাল হওয়ায় মাছের চাহিদাও বেশি। তবে গতবছর শীতকালে প্রতিদিন গড়ে ৫০ টন মাছ রপ্তানি হয়েছে বলে জানান তারা। মূলতঃ মাছের ওপর ভর করেই চাঙা হয়ে উঠেছে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি শুরু করেন ভারতীয় ব্যবসায়িরা। আমদানি করা এসব পণ্য সরবরাহ করা হয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে। এরপর ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আখাউড়া স্থলবন্দর।

বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার রড, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টিক, মাছ, তুলা, ভোজ্য তেল ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য রপ্তানি হতে থাকে ভারতে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি না করায় সরকার আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে কোনো রাজস্ব না পেলেও রপ্তানি বাণিজ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে।

তবে করোনাভাইরাসের কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য অর্ধেকে গিয়ে ঠেকে। স্বাভাবিক সময়ে গড়ে ২ থেকে ৩ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হতো। কিন্তু, করোনাভাইরসের কারণে সেটি ১ লাখ মার্কিন ডলারে নেমে আসে।

ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে প্রথম দফায় গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় ৭ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত পণ্য আমদানি বন্ধ রাখেন ভারতীয় ব্যবসায়িরা। পরবর্তীতে ভারতজুড়ে চলা লকডাউনের কারণে বাধ্য হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ, সিমেন্ট, তুলা ও খাদ্যসামগ্রীসহ হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য আমদানি শুরু করেন ভারতীয় ব্যবসায়িরা। সবমিলিয়ে মহামারিতে আখাউড়া স্থলবন্দরের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ লাখ মার্কিন ডলার।

ধীরে ধীরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির পরিমাণও বাড়তে থাকে। এখন প্রতিদিন গড়ে ৩ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। এর মধ্যে মাছই যাচ্ছে দুই থেকে আড়াই মার্কিন লাখ ডলারের। আর সিমেন্ট, কয়লা ও তূলা ও খাদ্যসামগ্রীসহ অন্যান্য পণ্য যাচ্ছে ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের। বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যের এ চাঙাভাব গত দুই-আড়াই মাস ধরে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সুয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাজীব উদ্দিন ভূইয়া বলেন, 'স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যের অবস্থা আগের চেয়ে এখন ভালো। প্রতিদিন আশানুরূপ হারে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে সিংহভাগই মাছ। প্রতিদিনই মাছের চাহিদা বাড়ছে। বাকি পণ্যগুলো যাচ্ছে অল্প পরিমাণে।'

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'মহামারির কারণে স্থলবন্দরে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এখনকার পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো। সব পণ্য না নিলেও, প্রচুর পরিমাণে মাছ নিচ্ছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা ভালো হলে বন্দরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে বলে আশা করছি।'

আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া বলেন, 'শীতকাল হওয়ায় এখন মাছের চাহিদা বেশি। গত বছরের শীতকালের তুলনায় এবার মাছ রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ। মাছই এখন ব্যবসায়ীদের আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে এই চাহিদা শীতকালের পর কিছুটা কমবে। এছাড়া গরমকালে আমাদের এখানেও বেশি মাছ পাওয়া যায়না।

সান নিউজ/এনআই/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা একমাস দাবদ...

মিল্টন সমাদ্দার রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৃত্যুর জাল সনদ তৈরির অভিযোগে প্রতারণা ও জ...

আমিরাতে প্রবল বৃষ্টিপাত, সতর্কতা জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রবল বৃষ্টিপা...

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

ভরিতে ১৮৭৮ টাকা কমলো স্বর্ণের দাম 

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা অষ্টমবারের...

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ভাই-বোনের

জেলা প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জের সদরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই ভ...

তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগের ওপর দিয়ে যে তাপপ্র...

বৃষ্টিতে বন্ধ খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার প্রথম টি-টোয়...

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় নিহত ১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বকশিবাজারে বাসের ধাক্কায় আনোয়ার...

বাস-ট্রাক সংঘর্ষে আহত ৮

জেলা প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর পাংশায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ৮ যাত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা