ছবি: সংগৃহীত
ফিচার

ব্রহ্মপুত্র নদ যেন মরা কঙ্কাল!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: বর্ষায় উত্তরের পথ-প্রান্তর লন্ডভন্ড করে ছুটে চলে আপন শক্তিতে বলিয়ান ব্রহ্মপুত্র নদ। তবে সেই নদই শুষ্ক মৌসুমে এসে হয়েছে মরা কঙ্কাল। এতে অসংখ্য বালুচরে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ-বাণিজ্য। একইসঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নির্ভর ৭০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে।

আরও পড়ুন: ৪র্থ দফায় শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ

ব্রহ্মপুত্রের এ রূপ কোনোভাবেই বর্ষার সঙ্গে মেলে না। এখন বেশ শান্ত-সুবোধ হলেও ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের আঘাতে গরিব কৃষকের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয় প্রতি বর্ষায়। শুধু এ মৌসুমে নয়, কয়েকবছর ধরে বর্ষাতেও কমছে পানির পরিমাণ। ২০২২ সালে বর্ষায় সর্বোচ্চ প্রবাহ ছিল ১ লক্ষ ২৫৩৫ ঘনমিটার।

পরের বছর সেপ্টেম্বরে তা নেমে আসে ৪৩ হাজার ২৬৬ ঘনমিটারে। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহের পরিমাণ থাকছে মাত্র ৩ হাজার কিউসেকের কাছাকাছি। এখন এ নদের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে ধু-ধু বালুচরে ঢাকা, যেন মরু প্রান্তর। এতে অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকায় টান পড়েছে।

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, এখনকার চেয়ে আগে ব্রহ্মপুত্র নদে দ্বিগুণ মাছ ছিল। এখন মাছ কম, আর আগের নদীও নাই। সব শুকিয়ে গেছে। নদী এখন বালুচর। আর মাছ কমে যাওয়ায় আমাদের কাজও কমে গেছে।

আরও পড়ুন: এবার রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আগুন

এছাড়া তলায় ভরাট হওয়ার প্রভাব পড়ছে দুকূলে। বছর বছর বর্ষায় তীর ভেঙ্গে বাড়ছে প্রস্থ। দেশে প্রবেশের পর কুড়িগ্রাম অংশে এর প্রস্থ এখন ৮-২০ কিলোমিটার।

গাইবান্ধা অংশে ১২-১৭ কিলোমিটার যমুনা নাম ধারণ করে বগুড়ায় প্রবেশের পর ১২-১৫ কিলোমিটার। আর সিরাজগঞ্জে প্রস্থ ঠেকেছে ১২-১৩ কিলোমিটারে। উজান থেকে বহন করে আনা বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন টন পলির একটা বড় অংশ বৃহত্তম এ নদের তলদেশে জমছে।

ফলে ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে জেগে উঠছে এমন অসংখ্য চর-দ্বীপচর। শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকট, আর এসব চরের জেলেদের মতো মাঝিদেরও গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন: ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন কাল

বালাসি ঘাট নৌ-মালিক সমিতির সভাপতি লিটন মিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। গত একমাসে তো আরও বেশি কমেছে। আগে নদীপথে মালামাল আসতো, এখন কম আসছে। আর ট্রাকের মালামাল এ ঘাটে প্রবেশ করে না। এখানকার শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে।

নৌকা মাঝি লালু মিয়া বলেন, আমাদের আয় নেই. এখন যাত্রীও কমে গেছে। তারপরও এভাবেই চলতে হচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতির নির্মাণ পর্বে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের এ হাল কেন?

অভিযোগ রয়েছে, কখনো ঘোষণা দিয়ে আবার কখনো ঘোষণা ছাড়াই যে যার মতো বাঁধের মালা পরিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে উজানের দেশ চীন ও ভারত।

আরও পড়ুন: কাল রাজধানীতে সমাবেশ করবে আ’লীগ

নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা মনজুর আলম মিঠু বলেন, নদীর যে করুণ দশা দেখা যাচ্ছে, এর পেছনে তো কারণ রয়েছে। উজান থেকে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে, যে কারণে নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।

প্রবাহের দিক থেকে গঙ্গা ও তিস্তাসহ বাকি ৫৩টি নদীর চেয়েও ব্রহ্মপুত্রের ভাগ বেশি। সারা বছরের গড় হিসেবে, সীমান্তের বাইরে থেকে যে প্রবাহ বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তার ৬৫ শতাংশ একাই বহন করে ব্রহ্মপুত্র। শুকনো মৌসুমেও দেশের নদী ব্যবস্থায় ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কম-বেশি ৭৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

অন্যদিকে কৃষিপ্রধান উত্তরবঙ্গে প্রতি বছর সেচ কাজে যে মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হয়, তার একটা বড় অংশ বর্ষায় পুনর্ভরণ ঘটায় ব্রহ্মপুত্র।

আরও পড়ুন: সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নিহত বেড়ে ১৬

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ইয়ারলুং সাংপো তথা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বাস করে চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ আর বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষের বাস।

অন্যদিকে ভূখন্ডের দিক থেকে চীনের মোট আয়তনের ৩ শতাংশ, ভারতের মোট আয়তনের ৬ শতাংশ আর বাংলাদেশের মোট আয়তনের ২৭ শতাংশ জুড়ে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অবস্থান।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চরগুলো পর্যায়ক্রমে যদি অপসারণ করা না হয় তাহলে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রতিনিয়ত ড্রেজিং করতে হবে।

আরও পড়ুন: নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত

নদী গবেষক প্রফেসর ড. মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, যমুনা নদীর দুই পাড় বেঁধে দিয়ে যদি পরিকল্পিতভাবে খনন করা যায় তাহলে আমাদের জিডিপি প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, আমাদের নদীগুলো যদি সুন্দরভাবে উদ্ধার করতে পারি তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। কম খরচে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

লক্ষ্মীপুরে চলছে ৫ ইউনিয়নে ভোট

সোলাইমান ইসলাম নিশান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি...

রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

মুন্সীগঞ্জে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সিগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ভূমি অফি...

শহীদ শেখ জামাল’র জন্ম

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অত...

হিটস্ট্রোকে একদিনেই ৬ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রা...

আইনি সেবায় মানবিকতাকেও স্থান দেয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনি সেবা প্রদানকালে পুঁথিগত আইন প্রয়োগের...

ভূঞাপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় 

খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল: প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট। নেই...

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: থাইল্যান্ড সফর শেষে আগামীকাল ব্যাংকক থেকে...

ডিপিএস এসটিএস স্কুলে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা