শিল্প ও সাহিত্য
জাপানের গল্প-২৬

কাজের স্বীকৃতি পেলো মিতুল

পি আর প্ল্যাসিড: একদিন সিলেট থেকে লেখক সাংবাদিকদের একটি সংগঠন তাকে টেলিফোনে জানালো পরবর্তীতে যখন দেশে যাবে তখন যেন তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তাকে নিয়ে সিলেটে একটি অনুষ্ঠান করতে আগ্রহী তারা। মিতুল বিষয়টি প্রথম না বুঝলেও প্রায়ই যেহেতু দেশে তার যাওয়া আসা করা হয় তাই সে দেশে যাবার পর সেই সংগঠনের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে দেশে যাবার কথা জানায়।

সংগঠনের কর্মকর্তা মিতুলের সুবিধা মতো সময়ের কথা জেনে তাকে সিলেটে যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। মিতুল এর আগে কখনো সিলেট যায়নি। তাই তার খুব ইচ্ছে সিলেটে গিয়ে সেখানকার চা বাগান ঘুরে দেখার। বিষয়টি সংগঠনের প্রধান নাজমুল ইসলাম মকবুলকে বললে, তিনি সকাল সকাল সিলেট পৌঁছার পর তাকে নিয়ে সিলেট শহর এবং আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে দেন।

এদিকে মকবুল অনুষ্ঠানের সব কিছু গোছানোর জন্য নিজে আগেই চলে যান অনুষ্ঠান স্থলে। আর মিতুল সিলেট পৌঁছার পর সেখানে নিজের মতো করে এদিক ওদিক বেড়িয়ে সময় কাটায়। একসময় সংগঠনের প্রধান কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম মকবুলের সাথে যোগাযোগ করে মিতুল বলল, তার সিলেটের চা বাগান ঘুরে দেখা শেষ হয়েছে।

এখন সে তাদের সাথে দেখা করতে চায়, কোথায় কিভাবে যেতে হবে বললে পর সে নিজেই চলে যাবে অনুষ্ঠান স্থলে। বলার পর মিতুলের অবস্থান জেনে মকবুল নিজেই চলে যান মিতুলের অবস্থানে দেখা করতে। গিয়ে তাকে নিয়ে এক সাথে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। সেখানে তারা বসে খাবার খেতে খেতে সিলেটের অনেকগুলো স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা মিতুলের সামনে দিয়ে বললেন, আজকের অনুষ্ঠানের সংবাদ সিলেটের প্রায় অধিকাংশ মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে এক সময় মকবুল মিতুলের কাছে বিদায় নিয়ে আগে চলে যান অনুষ্ঠান স্থলে। এরপর তাদের সাথে সংগঠনের একজন সদস্যকে রেখে যান সময় মতো মিতুলকে নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে হাজির হবার জন্য। সেখানে দুপুরের খাবার শেষে কফি খেয়ে আস্তে ধীরে সময় কাটিয়ে রওনা দেয় মিতুল অনুষ্ঠান স্থলের উদ্দেশে।

যতো সময় গড়ায় ততোই যেন মিতুলের ভিতর কাঁপুনি উঠতে থাকে। জীবনের প্রথম সে একদম অপরিচিত এক এলাকা থেকে আলাদা সমাজের লোকদের কাছ থেকে তার লেখালেখির আর সাংবাদিকতার জন্য সম্মাননা পেতে যাচ্ছে, বিষয়টি ভাবতেই একসাইটেড হয় মিতুল।

এক সময় অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে হাজির হয় মিতুল। সেখানে যাবার পর গিয়ে দেখে লোকজনে অনুষ্ঠান স্থল ভরা। যেন তাকেই দেখার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছেন সেখানে। মিতুল অন্যদের বয়সের সাথে নিজের বয়স, চেহারা আর মেধার মনে মনে তুলনা করে দেখে, সবার থেকেই যেন বয়সে সে ছোট। শুধু তাই নয়, সব কিছুতেই মিতুল অনেক পিছিয়ে আছে। তাই নিজেকে লজ্জিত মনে করে সে।

এরপর সকলে এসে মিতুলের সাথে পরিচিত হয়ে কুশল বিনিময় করেন। কেউ কেউ বললেন, আমাদের সিলেটে আপনাকে স্বাগতম। বললে সে অনেকটা লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা খোঁজে। নিজের কাছে নিজের এই আয়োজন দেখে তামাশা মনে হয়। সে ভাবে, যেটার যোগ্য সে নয় তা নেয়াটাও যেন তাকে সঠিক মানায় না। তারপরেও তাকে ডেকে নিয়ে সবার সামনে ডায়াসে বসানো হয়।

মিতুলের ডান আর বাম দিকে সবাই বয়স্ক জন। মিতুল তাদের দেখে কিছুটা ঘাবড়ালেও সে সাহস সঞ্চয় করে পাশে বসা এক ভদ্র লোকের সাথে কথা বলতে শুরু করে। সেই ভদ্র লোক মিতুলের মতোই একজন প্রবাসী। থাকেন লন্ডন। দেশে এসেছেন বেড়াতে। মিতুলকে সম্মাননা দেওয়া হবে শুনে নিজেই আগ্রহ নিয়ে এসেছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য।

মিতুলকে তিনি বললেন, ফেসবুকে তিনি মিতুলের সাথে যুক্ত আছেন। ফেসবুকে পোস্ট করা তার সব লেখাই তিনি নিয়মিত ফলো করেন। এ কথা বলাতে মিতুল কিছুটা হালকা হয়। এতে কথা চালিয়ে যায় তারা অনুষ্ঠান শুরু করা পর্যন্ত সময়।

শুরু হয় আলোচনা সভা। সভাপতি নিজেই মিতুল সম্পর্কে সকলকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়ে মঞ্চে এসে বসলেন। সভা চলছে। নির্ধারিত বক্তা সকলেই মিতুলকে নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের কেউ কেউ মিতুল সম্পর্কে আগেই কথা বলার জন্য অল্প কিছু ধারণা নিয়েছেন। কেউ না জেনেই কথা বললেন। সবার শেষে মিতুলকে ডাকা হলো কিছু বলার জন্য।

মিতুল শুরুতেই এতো সুন্দর অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য নাজমুল ইসলাম মকবুলকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এরপর নাজমুল হোসেন মকবুলের সাথে তার পরিচয় এবং সম্পর্ক বলল। এরপর এটাও বলেছে জাপান থেকে প্রকাশিত জাপানের প্রথম অনলাইন বাংলা পত্রিকা বিবেকবার্তার কথা বলেন। কিন্তু নাজমুল ইসলাম মকবুলের মতো এত সুন্দর এবং উদার সে নিজেও নয়, তাই মকবুল তাকে এতো বড় সম্মাননা দিতে যাচ্ছেন এতে নিজেকে লজ্জায় মাথা নত হবার মতো মনে করে।

এটাও বলল, সে নিজেকে ছোট মনে করছে। মকবুলের কাছে তার উদারতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে যেন। তবে সব কিছুর উর্ধ্বে মিতুলের লেখালেখির জীবনে ইতিহাস রচনা করেছেন মকবুল। মিতুল এখন থেকে যতো বড় হবেন মকবুলের এই নামটিও জড়িয়ে থাকবে। সব শেষে মিতুল আবার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের আসনে ফিরে আসলে সকলেই তার বক্তব্যর জন্য করতালি দিয়ে ধন্যবাদ জানায়।

এরপর মিতুলের হাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সুন্দর একটি ক্রেস্ট তুলে দেন অনুজ এবং অগ্রজ লেখক সাংবাদিক এবং কলামিস্টগণ। মিতুল তার এই কাজের স্বীকৃৃতি হাতে পেয়ে আবেগে তখন আপ্লুত হয়। সে তার ক্রেস্ট হাতে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে কিছু সময়। চোখ থেকে গাল বেয়ে অশ্রু ঝরল।

সেদিন সে তার কাজের ব্যস্ততার কারণে সিলেটে আর রাত থাকেনি। চলে আসে রাতের বাসেই ঢাকা। রাত কাটে তার বাসে। রাতের বাসে বসে মিতুল এই ক্রেস্টের আনন্দ উল্লাসের অনুভূতি রোমন্থন করে। মিতুল ভাবে, তার পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হবে না। তাই সে যা-ই করতে পারে, সেটাই করবে মন দিয়ে। সেটাই একদিন তাকে স্বীকৃতি এনে দিবে তার লেখক জীবনে। ভাবতে ভাবতে একসময় বাসেই ঘুমিয়ে পড়ে মিতুল।

পরের দিন সকালে যখন মিতুলের ঘুম ভাঙ্গে তখন তার বাস এসে পৌঁছায় ঢাকায়। দেশে সে যে বাসায় থাকে সেই বাসায় গিয়ে সকালের নাস্তা করে সবাইকে তার এই ক্রেস্ট দেখায়। কেউ তার এই ক্রেস্টের মূল্য দেয় না। তাদের কাছে এটা কেবলই একটা ট্রফি মাত্র। যা কিনা দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। বিষয়টি বোঝার পর মিতুল একটা কথাই মনে মনে ভাবে, তা হলো, তাকে তার কাজ করে যেতে হবে। কে তার কাজের মূল্য দিলো আর কে তার সম্মাণনার মূল্যায়ন করলো এতে তার কোনো কিছু থেমে থাকবে না। তাদের কাছে মিতুল কেবলই তাদের লোক। সে আর এর বাইরে কি করতে পারে?

দেশ থেকে জাপান ফিরে আসে মিতুল। এসে তার স্ত্রীকে সেই ট্রফি দেখায়। মিতুলের স্ত্রী সেই ট্রফি হাতে নিয়ে বলল, তোমার কাজ তুমি মন দিয়ে করে যাও, দেখবে আরো অনেক ট্রফি তুমি পাবে জীবনে। এমন কি এটার চেয়েও বড় সম্মাননা পাবে, এটা তোমার কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কেবলই সময়ের ব্যাপার।

মিতুলের জাপানি স্ত্রী তার এই সম্মাননার ওজন না বুঝলেও সে শুধু জানে তার কাজের স্বীকৃতি সে পেয়েছে। তার কাছে এটাই বড় বিষয়। এরপর থেকে মিতুলকে সবসময় তার এই ক্রিয়েটিভিটি কাজ করতে কোনো ধরনের বাধা দেয় না। মিতুলের কাজে সহযোগিতা করতে না পারলেও বাধা দেয় না। তার এই বাধা না দেয়াটাও যেন তার জন্য বড় পাওয়া। এটাই যেন তার আগামী দিনে বড় কোনো স্বীকৃতি পাবার পথকে সুগম করলো সেই আনন্দেই কাজ করে মিতুল অনবরত।

এরপর যত বারই দেশে গিয়েছে সে, ততবারই কোথাও না কোথাও সে কোনো না কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তার প্রবাসে বসে লেখালেখি এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধন স্বরূপ কাজ করতে থাকে প্রতিনিয়ত।

(চলবে)

লেখক: জাপান প্রবাসী সাংবাদিক

সান নিউজ/এমকেএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঢাবিতে ‘আগুনমুখা’র নেতৃত্বে ফাহাদ-সামদানী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাকিবিল্লাহ ফাহাদকে সভাপতি ও মু. তানযীম সা...

বড়াইগ্রামে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের উদ্বোধন

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রামে বোরো ধান, চাল ও গম সংগ্...

খাগড়াছড়িতে চোলাই মদসহ নারী আটক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে...

হরিপুরে একদিনে ২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: এসএসসি পরীক্...

ভালুকায় তিন রাস্তার উদ্ধোধন

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকায় ৩টি নবনি...

গাইবান্ধায় ফেন্সিডিলসহ আটক ২

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার প...

বিরল রোগে ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

নজরুল ইসলাম, ইবি: বিরল ভাসকুলাইটি...

বোয়ালমারীতে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

কনডেম সেলে না রাখার রায় স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদে...

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির লিফলেট বিতরণ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আসন্ন ৬ষ্ঠ উ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা