খেলা

আফ্রিকান ফুটবলারদের ইউরোপ জয়ের গল্প

মাহমুদ ফয়সাল: যদি বলা হয়, বিশ্বে ফুটবল মহারণের পুণ্যভূমি কোথায়? তবে যে কেউ বলবেন ইউরোপ। যেখানে বসে জমজমাট সব ফুটবল আসর। দলবদলের সময় ক্লাবগুলো কাড়িকাড়ি টাকা ছড়িয়ে দলে ভেড়ায় বড় ফুটবলারদের। সেই ইউরোপের সেরা লিগ ও টুর্নামেন্টগুলোতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে নজর কেড়ে নিচ্ছেন বহু আফ্রিকান কিংবা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফুটবলার। জেনে নেওয়া যাক তেমনই কয়েকটি ঘটনা-

১৯৯৮ সাল, প্রথমবারের মতো ফরাসিদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত জিনেদিন জিদানের অবিশ্বাস্য ফুটবল নৈপুণ্যে অবসান ঘটে ফরাসীদের বহু প্রতীক্ষার, রচিত হয় বিশ্বজয়ের নতুন ইতিহাস। সেবার ফুটবলের পরাশক্তি ব্রাজিলের দুর্গ ভেঙে, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত জিদানের জোড়া গোলে প্রথমবার বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরে ফ্রান্স। আর সেবারই ইতিহাসের প্রথমবারের মতো আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কোন ফুটবলাররে পায়ে ভর করেই বিশ্বকাপ জেতে ইউরোপের কোন দেশ।

২০ বছর পর ২০১৮ সালে আবার যখন রাশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স, সেই বিশ্বজয়ী দলের ৮ জন সদস্য আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। এবার জিদান-অরিদের উত্তরসূরী পগবা, এমবাপেরা উঁচিয়ে ধরেন বিশ্বকাপ শিরোপা। মাঝখানের সময়টা শুধুই ইউরোপের বুকে আফ্রিকানদের দাপিয়ে বেড়ানোর গল্প।

ফুটবলের উর্বর ভূমি বলা হয় আফ্রিকাকে। আফ্রিকা বরাবরই বিশ্বকে উপহার দিয়ে আসছে অসংখ্য ফুটবল গ্রেট। রজার মিলা, স্যামুয়েল ইতো, দিদিয়ের দ্রগবা, ইয়া ইয়া তোরেসহ অসংখ্য কিংবদন্তি আফ্রিকা থেকে এসে বিশ্ব ফুটবলে ছড়ি ঘুরিয়েছেন। গড়েছেন একের পর এক কীর্তি।

বর্তমান সময়েও মিশরের মোহাম্মদ সালাহ, সেনেগালের সাদিও মানে, আলজেরিয়ান রিয়াদ মাহরাজ, গিনির বংশোদ্ভূত পল পগবা এছাড়া কিলিয়ান এমবাপে, এনগোলো কন্তেসহ অনেক আফ্রিকান ফুটবলার আলো ছড়াচ্ছেন পাশ্চাত্যের রঙ্গিন দুনিয়ায়।

দুই পায়ের জাদুতে অনিন্দ্য সুন্দর পারফরম্যান্সে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন আফ্রিকান সৌরভ। ইউরোপের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের বাজারে এসব আফ্রিকানরা আলোচনায় থাকছেন কখনো ট্রান্সফার ফি’র রেকর্ড গড়ে। আবার কখনো বা নানা কীর্তিতে।

তেমনই আলোচিত একজন আফ্রিকান মিশরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মাদ সালাহ। খেলেন ইংল্যান্ডের ক্লাব লিভারপুলের হয়ে। ২০১৭ সালে ক্লাবে যোগ দিয়েই বদলে দেন ক্লাবের জরাজীর্ণ চেহারা। প্রায় ডুবতে বসা ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিকে তিন দশক পর জিতিয়েছেন লিগ শিরোপা, জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিসহ অনেকগুলো শিরোপা। একাধিকবার হয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

লিভারপুলের হয়ে খেলেন আরেক তারকা ফুটবলার সাদিও মানে। আফ্রিকান দেশ সেনেগাল থেকে উঠে আসা সাদিও মানে পরিণত হয়েছেন লিভারপুলের আক্রমণ ভাগের মূল অস্ত্রে। লিভারপুলের গত কয়েক মৌসুমের ঈর্ষণীয় সাফল্যের মূল কারিগর সালাহ-মানে জুটি। সমান তালে খেলে চলছেন দুজনে ক্লাবের হয়ে।

ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলেন আফ্রিকান আরেক ফুটবলার আলজেরিয়ার রিয়াদ মাহরাজ। ক্লাবটির হয়ে শেষ করেছে দুর্দান্ত একটি মৌসুম। জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। তিন বছর আগেও লেস্টার সিটির হয়ে লিগ শিরোপা জিতেছিলেন এই ফুটবলার। পিয়েরি এমরিকে, আফ্রিকান দেশ গ্যাবনের এই ফুটবলার খেলেন ইউরোপের ক্লাব আর্সেনালের হয়ে। গেল মৌসুমে কম যাননি তিনিও। সাদিও মানে ও মোহাম্মদ সালাহর সাথে সমান সংখ্যক গোল করে ভাগাভাগি করেছেন গোল্ডেন বুট।

আফ্রিকান দেশ গিনির বংশোদ্ভূত পল পগবা নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার। ক্লাব ফুটবলে খেলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। ২০১৬ সালে রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফিতে ফিরে আসেন পুরনো ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ফিরেই প্রথম মৌসুমে ক্লাবটিকে জিতিয়েছেন লিগ শিরোপা, ইউরোপা লিগ। এছাড়াও ফ্রান্সের হয়েছেন জিতেছেন গেল বিশ্বকাপ।

পগবার আরেক সতীর্থ এনগলো কন্তে, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের এই ফুটবলার খেলেন ইংলিশ ক্লাব চেলসির হয়ে। বর্তমান সময়ের সেরা মিডফিল্ডারদের অন্যতম তিনি। রাশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ে তার অবদানও কম ছিল না।। এনগেলো কন্তে ক্লাবের হয় জিতেছেন লিগ শিরোপা ও চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো বড় সব টুর্নামেন্ট।

ফ্রান্সের আরেক আফ্রিকান শেকড়ের সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপে। খেলেন ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজির হয়ে। গত বিশ্বকাপ থেকেই ফ্রান্সের আক্রমণ ভাগের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপেই এই তরুণ স্ট্রাইকার পেয়েছেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ফরাসি ক্লাব পিএসজির হয়ে তিন বার জিতেছেন লিগ ওয়ান শিরোপাসহ আরো অনেক ট্রফি।

এর বাইরে করিম বেনজেমা, নাবী কেইতা, এডওয়ার্ড মেন্ডি, রোমেলু লুকাকু, কার্ল একাম্বি, মুসা বযারো, বুকায়ো সাকা, মিশি বাচুয়াই, হাকিম যিয়েচিচের মতো একঝাঁক তরুণ আফ্রিকান, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ফুটবলার মাতিয়ে যাচ্ছেন ইউরোপের ফুটবল মাঠ। প্রতিনিধিত্ব করছেন কোটি কোটি দরিদ্র পীড়িত আফ্রিকান ফুটবল পাগল মানুষের।

ঔপনিবেশিক যুগে আফ্রিকার প্রচুর মানুষ অভিবাসী হয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। যাদের ঘামেই গড়ে উঠেছে ইউরোপের সভ্যতা। অন্যান্য সব সেক্টরের মতো ফুটবলেও তাই দাপট অভিবাসী আফ্রিকানদের পরবর্তী প্রজন্মের। মূলত ১৯৯৮ সালে জিদানের হাতে বিশ্বকাপ দেখেই অভিবাসী আফ্রিকান কিশোররা ফুটবলে আগ্রহী হয়ে ওঠে। যার ফলস্বরূপ ইউরোপের মাঠে আজ তাদেরই দাপট।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে অচল অবস্থা!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি নার্সি...

লক্ষ্মীপুরে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম চালু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে...

ভোলায় বঙ্গবন্ধু সেজেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা

ভোলা প্রতিনিধি: শ্রদ্ধা ও ভালোবাস...

অবৈধ ইটভাটায় হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

রংপুর ব্যুরো: রংপুর জেলাসহ বিভাগে...

মোস্তফা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

অবৈধ ইটভাটায় হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

রংপুর ব্যুরো: রংপুর জেলাসহ বিভাগে...

বাঁশ দিয়ে লেন ভাগ, তবু যানজটে দুর্ভোগ

রংপুর ব্যুরো: রংপুর মহানগরীতে নিয়...

রোজা রাখার উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক: রোজা রাখার উপরা...

ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে অচল অবস্থা!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি নার্সি...

মোস্তফা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা