শিল্প ও সাহিত্য

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

হাসনাত শাহীন: করোনাভাইরাস অতিমারীর প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বের অনেক কিছুই বদলে গেছে। ঘটছে-অনেক চিরন্তনী নিয়মের ব্যতিক্রমও। প্রাণেরমেলা ‘বইমেলা’র আয়োজনেও এবার প্রথমবারের মতো ব্যতিক্রম হচ্ছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে এবারের একুশের চেতনার সঙ্গে জড়িত যে আয়োজন ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়; সেই ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ এবার হচ্ছে বাঙালির মুক্তিচেতানার জাগ্রত ‘মার্চ’ মাসে। তবুও নানান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বইমেলা তো হচ্ছে!-বইপ্রেমীদের জন্য এটাই প্রশান্তির।

সেই প্রশান্তির পালে যোগ হয়েছে নতুন হাওয়া। কেননা, গত ৮ মার্চ স্টল-প্যাভিলিয়নের স্থান বরাদ্দের লটারি হওয়ার পর দিন থেকে শুরু হয়েছে স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণের প্রস্তুতি। আর সেই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে বদলে গেছে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চেনারূপ। সবুজের বুক চিড়ে এখন তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার স্টল-প্যাভিলিয়ন।

এবারের এই করোনাকালের অমর একুশের বইমেলার নীতিমালা অনুযায়ী মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ১৬ মার্চের মধ্যে স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করার জন্য প্রকাশকদের সময় বেঁধে দিয়েছে। আর সেজন্যই এখন সকাল থেকে রাত অব্দি চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। যার কারণে স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণের যন্ত্র হাতুড়ি-বাটালের টুংটাং শব্দে এখন মুখরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ ঘুরে দেখা যায়, এর পূর্বদিকের অংশে আরও অনেকখানি জায়গাজুড়ে স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। কাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ক্রমেই দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে একেকটি স্টল।

তবে স্টল-প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ হোক বা বাকি থাকুক ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৮ মার্চ এলেই শুরু হবে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তারিখের সংখ্যা বিবেচনায় আর মাত্র দুইদিন বাকি। দুইদিন শেষ হলেই শুরু হবে এবারের বহু জল্পনা-কল্পনা শেষের প্রাণের বইমেলা। সব কিছু ঠিক থাকলে ১৮ মার্চ বিকেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘হে স্বাধীনতা’ প্রতিপাদ্যে বইমেলার ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরের মেলার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘হে স্বাধীনতা’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বইমেলা। করোনার সংক্রমণ রোধে ভিড় এড়াতে এবার বইমেলা প্রাঙ্গণের পরিসর প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।

গত বছর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে যেখানে বইমেলা হয়েছিল সাড়ে সাত লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে। এবার প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। যা, গতবারের থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি।

এছাড়া এবারের বইমেলার প্রবেশের জন্য এবং বাহিরের জন্য আগের সব মেলার চেয়ে বেশি জায়গা রাখা হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) অংশে নতুন একটি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে। এবং গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে এবং টিএসসি পাশ্ববর্তী উদ্যানের ভেতরে আরও দুটি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে। যার ফলে মেলায় আগতরা সহজে মেলায় প্রবেশ করতে ও বাহির হতে পারবে। এর পাশাপাশি থাকছে প্রতিবছরের মতো বইমেলা উপলক্ষে নানান বিষয়ে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন।

বাংলা একাডেমির একটি সূত্র জানায়, বরাবরের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে থাকছে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টল ও প্যাভিলিয়ন ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্টল। এবারের মেলায় ৫৭০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। যার মধ্যে ৩৩টি প্রকাশনা সংস্থা প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে। সবগুলো প্যাভিলিয়নই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক প্রান্তে নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে, এর বাইরে মেলার দুই প্রাঙ্গণেই বাংলা একাডেমির একটি করে প্যাভিলিয়ন থাকছে।

এ বছর সর্বমোট ৫২২টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে ৮১৭টি ইউনিট ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ ইউনিটের স্টল থাকছে ২৫৪টি, ২ ইউনিটের ৯২টি, ৩ ইউনিটের ৪৪টি ও ৪ ইউনিটের ২২টি। আর শিশুকর্ণারে ৬১টি প্রকাশনা সংস্থার মাঝে ৭২ ইউনিট ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ ইউনিটের স্টল থাকছে ৩৯টি, ২ ইউনিটের ১৫টি এবং ৩ ইউনিটের ৭টি।

নিরাপত্তার স্বার্থে বইমেলার ভেতরে ও বাইরে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ও এর চারপাশের এলাকা সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষন করা হবে। ইভটিজিং ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা প্রতিরোধে থাকবে পুলিশের ফুট ও মোটরসাইকেল পেট্রলিং। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা প্রদানে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, ফায়ার টেন্ডার ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা।

এবারও বইমেলার আশপাশ হকারমুক্ত করা হবে ডিএমপির পক্ষ থেকে। সে সঙ্গে যেকোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য মেলায় প্রবেশ ও বাহিরের জন্য থাকবে আলাদা গেইট। প্রত্যেক দর্শনার্থীকে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা তল্লাশীর মাধ্যমে মেলায় প্রবেশ করতে হবে।

গত কয়েকবারের মতো এবারও মেলার সার্বিক ডিজাইন করেছেন নির্মাতা-স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। তিনি এবারের থিম ও মেলার ডিজাইন নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীনতা আমাদের, এ দেশের মানুষের। সেই সর্বজনীন অনুভূতিই এবারের থিম। এটা যেহেতু চিন্তার মেলা, মননের মেলা- সেহেতু স্বাধীনতা স্তম্ভটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও পাঁচটি দশককে পাঁচটি আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হবে মেলায়। মানুষ যেন সেখানে এসে নিজেই স্বাধীনতাকে উপলব্ধি করে নেয়।

তিনি আরও বলেন, এবার বাস্তবতা অন্যরকম। মেলা এবার ফেব্রুয়ারি নয়, মার্চে হচ্ছে। গরম থাকবে, ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। আছে করোনার ভয়। এই বিয়গুলোর সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তাই এবার অলংকরণের চেয়ে ডিজাইনে মনোযোগ দিয়েছি। কারণ এবার ব্যবস্থাপনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কাঠামো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টি হলে মানুষ যেন ছাউনি পায়। ব্যবস্থাপনাগুলো কীভাবে হবে সেটা চিন্তা করে ডিজাইন করা হয়েছে। মানুষ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘুরতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) অংশ দিয়ে মেলায় প্রবেশ করা যাবে। রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও।

এদিকে, মেলার প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গেলো কয়েক দিনে দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়াতে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে, এই উদ্বিগ্নতার মাঝেই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ‘অমর একুশে বইমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও বলেন, এবার আয়তনের দিক থেকে বিশাল পরিসরে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে থাকছে মেলার বিস্তৃতি। যা, গতবারের থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পার্শ্ববর্তী ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের গেট থেকে একটি নতুন প্রবেশ পথ থাকছে। সে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন এলাকা সংলগ্ন জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি।

করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নজরদারি করবে ভ্রাম্যমান টিম। মেলার প্রতিটি প্রবেশ পথে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। পাশাপাশি ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচতে চারটি আশ্রয় কেন্দ্রও থাকছে।

মেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।

সান নিউজ/এইচএস/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর গণসংযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

সান নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ম্যালেরি...

টঙ্গীবাড়ি ভাতিজারা পিটিয়ে মারলো চাচাকে

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

গরমে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে যা খাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমকাল এলেই ব্র...

মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে

জেলা প্রতিনিধি: বিয়ে না দেওয়ায় চা...

পঞ্চগড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে আলমি আক্...

চারতলা থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল : টাঙ্গাই...

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইনের কাজে...

ভারতীয় ৩ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা