মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: বর্জ্য থেকে কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের রশি। এসব রশি রফতানি হচ্ছে বিদেশেও।
আরও পড়ুন: আজ টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাবাড়ি ও মুক্তারপুর এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা গেছে, বর্জ্য থেকে কুড়িয়ে আনা ময়লা প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা হচ্ছে কৃষিজমিতে ব্যবহার করার প্লাস্টিকের রশি।
এসব ময়লা প্লাস্টিক মুন্সীগঞ্জ সহ গাজীপুর এবং বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ফেলে দেওয়া ময়লা কিনে এনে তারা এসব রশি তৈরি করেন।
প্রতিষ্ঠানের কাজ করা শ্রমিকরা এসব ময়লা পরিষ্কার করে মেশিনে গুড়ো করে এবং অপর একটি মেশিনের মাধ্যমে চিকন সূতা তৈরি করেন। এসব সুতা কলের মাধ্যমে তৈরি করে প্লাস্টিকের রশি। এ সমস্ত রশি কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এসব রশি বিভিন্ন জেলা সহ দেশের বাহিরে ও রফতানি করে থাকেন। রশির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এগুলো ভারতে রফতানি করে থাকেন।
আরও পড়ুন: রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
মুক্তারপুর এলাকার একটি চাপটি তৈরির ফ্যাক্টরি মেশিন অপারেটর ওমর ফারুক বলেন, মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনে তিনি চাকরি করেন। এতে ভালো ভাবেই তার সংসার চলেছে।
রামেরগাঁও এলাকার সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সোহেল মাতবর বলেন, নয় বছর আগে সাউথ কোরিয়া থেকে এসে তিনি বর্জ্য থেকে চাটপটি বানানোর ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
প্রথমদিকে লাভ বেশি ছিলো। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে উৎপাদন কমে গেছে। জ্বালানী তেলের দাম বেশি হওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে লাভের পরিমাণ কমে গেছে।
আরও পড়ুন: এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত
মুক্তারপুর এলাকার সুতা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান খাদিজা আলী আকবর এন্টারপ্রাইজের মালিক হালিম হোসেন বলেন, ফেলানো বর্জ্য থেকে উৎপাদিত সুতা মুন্সীগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়।
স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং চীনে ও রফতানি করা হয়। দু’মাস আগেও প্রতি কেজি সুতা বিক্রি করে ৩০-৩৫ টাকা লাভ হত। বিদ্যুৎ স্বল্পতায় উৎপাদন বাঁধা গ্রস্থ হচ্ছে। জ্বালানী তেলের মূল্যের প্রভাব পরেছে পরিবহন খাতে। এতে লাভের পরিমাণ কমেগেছে।
শেফালী এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, পরিবেশ বিনষ্টকারী বর্জ্য থেকে সুতা বানানোর ব্যবসাটি লাভজনক ও পরিবেশ বান্ধব। ১০ বছর আগে মাত্র ৩-৪ লাখ টাকার মেশিন ও মালামাল নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। সে সময় মাত্র ৫ জন শ্রমিক তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
আরও পড়ুন: দাম না কমালে আমদানি করা হবে
বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ১৮ জন শ্রমিক আছে। ব্যবসায়ে ৫০ লাখ টাকার মূলধন রয়েছে তার। এই উদ্যোক্তা বলেন, সব খরচ বাদে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার।
দুর্ঘাবাড়ি এলাকার ইবাদ ফাইবারের সত্বাধীকারী মো. রুবেল বলেন, বর্জ্যে থেকে তৈরি চাপটি থেকে সুতা। এ ছাড়াও চাপটি থেকে প্লাস্টিকের বোল,বালতি,জগ এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করা যায়। এই ব্যবসাটির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিকটাকভাবে করতে পারলে লাভের পরিমাণ বেশি হয়।
পঞ্চসার এলাকার প্লাস্টিকের চাপটি ব্যবসায়ী শ্যামল বলেন, ব্যবসাটি ভবিষ্যৎ ভালো ছিল। মূলধন অভাবে ব্যবসায় এখন টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে গেছে। গত দুমাসে ৮-১০ টি ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি সহজ শর্তে আমাদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হয়, সে ক্ষেত্রে এ ব্যবসা চালিয়ে রাখা যাবে।
আরও পড়ুন: ডিমের বাজার চড়া
মুন্সীগঞ্জ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, যে প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো পরিবেশ দূষণ করতো সেগুলো থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক পণ্য ও সুতা হচ্ছে। উৎপাদিত সুতা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে।
শুনেছি পাশ্ববর্তী কয়েকটি দেশেও রফতানি করা হচ্ছে। বিষয়টি খুব ইতিবাচক।
শিল্পটি আমাদের আওতায় নয়। তার পরও প্লাস্টিকের চাপটি তৈরির কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের কাছে ঋণ চাইবে আমরা তাদেরকে ঋণ সরবরাহ করব।
সান নিউজ/এইচএন