বাণিজ্য

আম মিলছে বছরজুড়ে

নিজস্ব প্রতিনিধি, বগুড়া : এক গাছে মুকুল, আরেক গাছে গুটি আর পাকা আম। বিষয়টি শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এখন সত্যি। বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার তিন বন্ধুর আমবাগানে গেলে এমন দৃশ্য সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। মামুন, সোহেল ও শহিদুল তিন তরুণের ছেলেবেলা থেকেই কৃষির প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ।

তাই পড়ালেখা শেষে গড়ে তোলেন মিশ্র ফলের বাগান। নাম দিয়েছেন ফুল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড। বারোমাসি আম চাষে বেশ সফলতাও পেয়েছেন তারা। এরই মধ্যে বাগানের উৎপাদিত রকমারি ফল বাজারজাত শুরু হয়েছে। তিন বন্ধুর বারোমাসি এই ফলের বাগান ছাড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নাচোল, রহনপুর; নওগাঁর সাপাহার, পোরশাসহ বিভিন্ন স্থানে এখন বারোমাসি আমের দেখা মিলছে।

প্রতিবছরে ৩ বার ফল দেওয়া বারি-১১ এবং থাইল্যান্ডের কাটিমন জাতের আম চাষে ঝুঁকছেন অনেকেই। বগুড়ার শেরপুরের খামারকান্দি ইউনিয়নের মাগুড়াতাইর গ্রামে প্রায় ৪০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই মিশ্র ফলের বাগান। এর মধ্যে ১৮ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে বারোমাসি আম। সেখানে রয়েছে ৯ হাজার আমের গাছ। একই গাছের এক ডালে ধরেছে মুকুল, পাশাপাশি অন্য ডালে একই সঙ্গে ঝুলছে কাঁচা-পাকা আম।

উদ্যোক্তারা জানান, ২০০৫ সালে ছোট পরিসরে নিজেদের পাঁচ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয় বাগানটি। পরে আরও ৩৫ বিঘা জমি ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে বাগানের পরিসর বাড়ানো হয়। তাদের বাগানে প্রায় ১৫ হাজার রকমারি ফলের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বারোমাসি আম কাটিমন ও বারি-১১, মাল্টা, পেয়ারা ও বরই রয়েছে।

বাগানের ফল খুবই সুস্বাদু ও গুণগত মানেও সেরা। অন্যান্য ফলের উৎপাদন ভালো হলেও বর্তমানে বারোমাসি আম বিক্রিতে ব্যস্ত উদ্যোক্তারা। অ সময় পাওয়া এই ফলের চাহিদাও বাজারে অনেক বেশি। তারা জানান, আগে পাকা আম পাইকারি ৩০০ টাকা কেজিমূল্যে বিক্রি করলেও এখন ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

এরই মধ্যে ২ লাখ টাকার আমও বিক্রি করেছেন। আরও ১ লাখ টাকার আম বাগানে রয়েছে। এই সাফল্য দেখে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই জাতের আম চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তাই অনেকেই বারোমাসি আমের চারা কিনতে আসছেন। যেভাবে সাড়া দেখা যাচ্ছে তাতে এ বছর ১০ লাখ টাকার ওপর এই ফলের চারা বিক্রি হতে পারে।

আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই মিশ্র ফলের বাগান থেকে ১ কোটি টাকার আম, বরই ও পেয়ারা বিক্রি করতে পারবেন বলেও আশা তাদের। উদ্যোক্তা মামুনুর রশিদ ও সোহেল রেজা জানান, তারা কৃষক পরিবারের সন্তান। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে ছুটে যেতেন ক্ষেতে। এর আগেও বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ করে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

এমনকি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশসেরা কৃষক হিসেবে নির্বাচিত করে মামুনকে থাইল্যান্ডে ফুড প্রডাকশন ও ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। তিনি সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরেন। এরই মধ্যে সোহেল রেজা বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) থেকে বারোমাসি আম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। আরেক উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় গেলেও ২০০১ সালে দেশে ফেরেন।

সে সময় স্কুল জীবনের বন্ধু মামুন ও সোহেলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফল বাগানের স্বপ্ন বোনেন। তিন বন্ধু বগুড়ার মহাস্থান, হর্টিকালচার সেন্টারসহ স্থানীয় মহিপুর এলাকার বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে নিজেদের পাঁচ বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তোলেন। এরপর আরও জমি লিজ নিয়ে সেখানে লাগান বারোমাসি আম, পেয়ারা, মাল্টা ও বরই চারা। সময়ের ব্যবধানে বাগানটিতে লাগানো হয় রকমারি ফলের আরো ১৫ হাজার গাছ।

উদ্যোক্তা মামুনুর রশিদ জানান, সারা বছর আম পাওয়া যাবে তা কখনো কেউ ভাবতেও পারেনি। বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে হলেও এটাই বাস্তব হয়েছে। বছরে তিনবার এসব গাছে মুকুল ধরে। সেই সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে একই গাছের বড় বড় আমগুলো খাওয়ার উপযোগী হয়। আমগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে ব্যাগে ঝুলিয়ে গাছেই রাখা হয়। সেটা গাছে পাকার পর বিক্রি করা হয়।

শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, এ উপজেলায় মিশ্র ফলের বাগান বাড়ছে। আমরা পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি। মাগুড়াতাইর গ্রামে গড়ে ওঠা ফুল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের মিশ্র ফলের বাগানের উদ্যোক্তাদেরও সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিন বন্ধুর এই মিশ্র ফলের বাগানটি সবার জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।

বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আব্দুর রহিম জানান, বারোমাসি আম চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শিক্ষিত এই তিন তরুণ উদ্যোক্তা। বারোমাসি আমের বাগান করে তারা বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন। সেই সঙ্গে সবার আদর্শ হয়েছেন। তিনি আশা করেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে বারোমাসি আম চাষ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উত্তরায় প্রাইভেটকারে অপহরণ; ভিডিও ভাইরালের পর গ্রেপ্তার ২

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় অপহরণে ব্যবহৃত একটি প্রাইভে...

আমাকে চেয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বানাতে: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সরকারের সময় তিনবার...

ভালুকায় সৌন্দর্য বাড়াতে ইউএনও’র ‘নিজ খরচে’ সবুজ বিপ্লব

ভালুকা উপজেলার পরিবেশ সংরক্ষণ ও নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নি...

কালীগঞ্জে ফিল্মিস্টাইলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জে...

সড়কহীন ৩৪ কোটি টাকার সেতু

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা