জাতীয়

দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জনগণ ও দেশের অর্থনীতিকে করোনাভাইরাস মহামারি সৃষ্ট সংকট থেকে বাঁচাতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকালে তার ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং ব্যক্তি বিশেষের অনুদান গ্রহণকালে প্রদত্ত ভাষণে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ভাষণ দেন। তার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস পিএমও'তে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরিমধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছি। এটা শুধু আজকের জন্য নয়, আমাদের এখনকার যে সমস্যা সেটা সমাধান করা এবং আগামী ৩ অর্থবছর পর্যন্ত যে পরিকল্পনা সেটা বাস্তবায়ন করা। যাতে এই করোনাভাইরাসের সময়টা পার করে আপনারা আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু আবার চালাতে পারেন। যেটা সব শ্রেণির মানুষ পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এবং সেই সুযোগটা সৃষ্টির জন্যই আমরা ৩ বছর মেয়াদি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছি। আশাকরি এই অবস্থার আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ, আমাদের দিনমজুর শ্রেণি কামার-কুমার, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-প্রত্যেকের কথাই আমরা চিন্তা করেছি। প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছি, সব শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যও যাতে চালু থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এই প্রণোদনার খাতে ব্যয় করবো বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আজকের যে অর্থনৈতিক মন্দা সেটা বিশ্বব্যাপীই দেখা দেবে। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেজন্য বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করার জন্যই আমরা খাদ্য উৎপাদনে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষা করতে হবে। এজন্যই বাইরের লোকের সঙ্গে না মেশা, জনসমাগম, যেখানে-সেখানে না যাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যকেও সুরক্ষিত করতে হবে। সেই দায়িত্ব সবাইকে পালন করতে হবে। যদিও খেটে খাওয়া দিন-মজুর শ্রেণির এবং ছোট ব্যবসায়ীদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য সময়টা খুব দুঃসময়, সেটা আমি বুঝতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং তার দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমরা আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলাম। যার সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছিল।

এই করোনাভাইরাস আসার পরই অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা কিছুটা শ্লথ হয়ে গিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সমগ্র বিশ্বই বলতে গেলে স্থবির হয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ বিতরণ কাজে যে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমি জানি ত্রাণ সরবরাহের কাজে যোগ দেয়া এমন কিছু লোক রয়েছে যাদের এটাই যেন প্রফেশন হয়ে যায় এবং ত্রাণ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে রকম যেন না হয় বরং ত্রাণ যাতে সবার কাছে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থাই আমরা নিতে যাচ্ছি এবং নেব।

শেখ হাসিনা বলেন, এই রিলিফ দিতে কোনো সমস্যা হলেই সঙ্গে সঙ্গেই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বেশি জায়গায় নয়, দেশে সাড়ে ৪ হাজারের মতো ইউনিয়ন হলেও পাঁচ-সাতটি জায়গায় এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, রিলিফ দুর্নীতির সঙ্গে যে জড়িত আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি ও নেব। কারণ গরিবদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্যের কেউ অপব্যবহার করবে এটা আমরা কখনোই বরদাশত করবো না। সে আমার দলেই হোক বা অন্য দলেরই হোক, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এই দুঃসময়ে জনগণের পাশে না থেকে কেবল সমালোচনার স্বার্থে সমালোচনাকারী রাজনৈতিক দল এবং কতিপয় সুধী সমাজের ব্যক্তি বিশেষের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য হলো আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অনেকে অনেক কথা বলে বেড়াচ্ছেন। অথচ তারা কিন্তু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না। সমালোচনাতেই ব্যস্ত।

হাজার হাজার স্থানে তার সরকারের ত্রাণ বিতরণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেখা গেল পাঁচ-সাতটি জায়গার যে সমস্যা তা নিয়েই তারা চিৎকার করে যাচ্ছেন। কেউ কিন্তু একটা মানুষকেও একটি পয়সা দিয়ে সাহায্য করছেন না বা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কিন্তু তাদের কথাটা বিক্রি করেই যাচ্ছেন।

সরকার প্রধান বলেন, এ ধরনের লোক থাকবেই, সব সমাজেই থাকে। তারা কথা বিক্রি করে যাবে, এটাই তাদের ব্যবসা। এটাই তারা করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলবো বেশি কথা না বলে কয়েকটা মানুষকে সাহায্য করেন। এই দুঃখের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।

‘এত কথা না বলে মানুষকে কতটুকু দিলেন সেই হিসেবটা দেন মানুষের কাছে, যোগ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং সেটা কার্যকর করে যাচ্ছি। চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকেও আমরা নির্দেশ দিয়েছি। তারাও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সরকারিভাবে দেয়া হচ্ছে, পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যে যতটুকু পারছেন সাহায্য করে যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তার সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি গরিব, দুঃখী মেহনতি জনগণের দৈনিক অন্ন সংস্থানে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষকে যেমন খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি তেমনি ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র মাধ্যমে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। এজন্য যারা তালিকার বাইরে রয়েছে তাদের জন্য আমরা কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ যেন সহায়তা পায় সেটা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রত্যেকের ঘরে এই ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রাতের বেলাতেও বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছি যাতে খাবারের জন্য সবাই এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা ভিড় করতে না পারে। যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে না পারে।

তিনি এ সময় সমাজের বিত্তবানরা যারা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন তারা যেন সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ করেন। যাতে লোক সমাগম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেকটি এলাকায় কমিটি করে দিয়েছি, স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করলে সবাই পাবেন।

তিনি বলেন, আজকের যে দুঃসময় সেটা একদিন কেটে যাবে এবং বাংলাদেশ আবারো এগিয়ে যাবে এবং এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।

শেখ হাসিনা ত্রাণ সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা যে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তা মানুষের কল্যাণের কাজে লাগবে। সেজন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আপনারা আপনাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সীমিত ভাবে, সুরক্ষিত থেকে কাজ করে যান। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি যেন স্থবির না হয়ে যায় এবং গতিশীলতা বজায় থাকে, সেভাবেই আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এদিন অনুদান প্রদান করেন জিল্লুল হাকিম এমপি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করেন।

এছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কাশেম ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশন, ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) ঢাকা ক্লাব, বিএসআরএম গ্রুপ, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, উত্তরা গ্রুপ, টেক্সকোটেক, হামদর্দ ফাউন্ডেশন, গান বাংলা, শাওমি টেকনোলজি বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্পাহানী টি লিমিটেড, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন, ওলিয়া গ্যাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি), ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইইডি), চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স এবং বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ছুটির দিনে মুখর সোহরাওয়ার্দী

নুসরাত জাহান ঐশী: আজ সপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর প্রাণকেন্দ...

ভারত ছাড়লেন সালমান খান

বিনোদন ডেস্ক : বলিউডের ভাইজান খ্যাত সুপারস্টার সালমান খান। স...

বিটরুটের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিটরুট হচ্ছে এ...

শিব নারায়ণ দাস আর বেঁচে নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জাতী...

ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারিভাবে মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম...

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ও অনিশ্চয়তা আরও...

দুই ঘণ্টা গ্যাস বন্ধ থাকবে 

জেলা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে...

সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে পরবর্তী হামলা করা হবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানি পররাষ্ট্...

নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৩৪ হাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অব...

তাপপ্রবাহ থাকবে আরও ৩ দিন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা