ছবি: সংগৃহীত
মতামত

‘হাওয়া’ সিনেমার শালিক দর্শন ও জনমানস

এস এম মাসুম বিল্লাহ: লোকভাষা এবং আইনের ভাষার মেজাজ ও মর্জি আলাদা। আইনে ‘বন্য’ মানে বুনো বা হিংস্র নয়। বন্যপ্রাণী মানে হলো যে সব প্রাণী বা জীব প্রজাতি মানুষের যত্ন ছাড়াই নিজের জীবন চক্র চালিয়ে নিতে পারে। আইনের ভাষা দুর্বোধ্য হয়। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এর সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে: ধারা ২ (২৫): ‘বন্যপ্রাণী’ অর্থ বিভিন্ন প্রকার ও জাতের প্রাণী বা তাহাদের জীবনচক্র বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়সমূহ যাহাদের উৎস বন্য হিসাবে বিবেচিত হইয়া থাকে।

আরও পড়ুন: গায়ে পড়ে আক্রমণ করব না

বাক্যটি জটিল এবং অস্পষ্ট এবং কিছুটা ছন্দপতনেরও বটে। বিবেচনা করবে কে? এখানে লেখা উচিত ছিল: ‘বন্যপ্রাণী হলো বিভিন্ন প্রকার ও জাতের সেই প্রাণীসমূহ যেগুলো তাদের জীবনচক্রের কোনো না কোনো পর্যায়ে বন বা প্রকৃতিতে বংশবৃদ্ধি করে থাকে।’

এভাবে লিখলে মানুষের বুঝতে সুবিধা হতো। আইনকে আমরা আইনের শিকল মুক্ত করতে পারিনি। ড্রাফটিং পলিটিক্স নামে একটা জিনিস আমাদের আইন বানানি সংস্কৃতিতে (law-making culture) দীর্ঘদিন ধরেই আছে। বন্যপ্রাণী হতে হলে প্রাণীকে যে বনে বাস করতেই হবে তা নয়। পোষাপ্রাণী ভিন্ন অন্য সকল প্রাণী বন্যপ্রাণী। ২০১২ সালের আইনে সংযুক্ত একটি তফসিল আছে। সেখানে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে যত প্রাণী আছে তার একটি তালিকা দেওয়া আছে। তালিকায় বাঘ, হাতি, সাপ, বানর, হরিণ, তিমি, ডলফিন, কুমির এবং বনে (প্রকৃতিতে) বাস করা/ বেড়ে ওঠা অন্য সকল প্রাণী, পাখি ও এমনকি উদ্ভিদও স্থান পেয়েছে।

আরও পড়ুন: কমেছে ডলারের দাম!

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার মানসে এই প্রাণীকুলের সুরক্ষা দিতে ২০১২ সালে আইনটি প্রণীত হয়। এই আইন করাটা ছিল আমাদের সংবিধানের অমোঘ প্রত্যাশা। কেননা সংবিধানের ১৮-এ অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান সুরক্ষা ও প্রজন্মান্তরের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। প্রাণীকুলকে রক্ষা করতে হয় মানুষের জন্যই। প্রাণীকুলের কল্পিত আইনসভায় আমরা সভ্যমাত্র।

২০১২-এর আইনের তালিকায় অন্যান্য অনেক প্রাণীর মধ্যে পাখিও স্থান পেয়েছে। মোট ৫৭৮ রকম পাখি মানুষের হাত থেকে বাঁচতে চায়। এর মধ্যে শালিক রয়েছে ১২ রকমের। যেমন: তেল শালিক, কাঠ শালিক, গাঙ শালিক, পাকড়া শালিক, ঝুঁটি শালিক, চিত্রা শালিক, ভাত বা ধান শালিক ইত্যাদি। মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রে যে শালিকটিকে খাঁচায় বন্দি করে, ফ্রাই করে খেয়ে ফেলার অভিযোগ করা হচ্ছে তার নাম ‘ভাত শালিক’। এখন ভাত শালিক যেহেতু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তালিকায় আছে, তাই এর নিরাপত্তার প্রশ্নটিও এই আইনের আওতায় আসে। অনেকে অবশ্য বলছেন, সিনামায় তুচ্ছ শালিক ব্যবহারের জন্য কি মামলা দেওয়া ঠিক হলো?

শালিকের জীবন বলে তো কথা নয়। সে জীবন তুচ্ছও নয়। কথাটা হলো চোখের সামনে আইন না মানার প্রবণতা। তবে আমি মনে করি, এই ক্ষেত্রে মামলা না হলেও হতো। ছবিতে প্রদর্শনের জন্যে পাখির ব্যবহার এই আইনের কোথাও শাস্তিযোগ্য বলা হয়নি। তাছাড়া এই মামলা করার পেছনে একটা ‘দ্যাখনদারি’ (show off) আছে। বন বিভাগ যে অতিশয় করিৎকর্মা দেখাতে হবে না? আমার আব্বা বলতেন- ‘কিডা কয় মওলা আলি ল্যাখাপড়া জানে না, সারা গায়ে কালি!’ তবে ‘হাওয়া’ সাড়া ফেলেছে বলেই যে আইনের জবাবদিহিতা থেকে; সেটি মুক্ত থাকবে- সেটাও কাম্য নয়। বাঙালি হুজুগও তো আছে!

আরও পড়ুন: ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বিজ্ঞ ঢাকা মহানগর প্রধান হেকিম আদালতে। গণমাধ্যমে পড়েছি এতে ২০১২ সালের আইনের ৩৮(১), ৪০ এবং ৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথমে জেনে নিই এসব ধারায় কী বলা আছে:

৩৮ (১): বেআইনিভাবে পাখি হত্যা করলে শাস্তি ১ বছর পর্যন্ত জেল বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
৩৮ (২): পাখি বা পাখির ট্রফি (সংরক্ষণযোগ্য ধ্বংসাবশেষ) বা এর মাংস সংগ্রহ করলে/ দখলে রাখলে/ ক্রয়-বিক্রয় করলে/ পরিবহন করলে ৬ মাস পর্যন্ত জেল বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
৪০: বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কেউ যদি পাখি (বা আইনের তালিকায় থাকা অন্য যে কোনো বন্যপ্রাণী) ‘লালন-পালন (বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যকিছু) করতে চায়, তবে লাইসেন্স নিতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য যত্নে রাখতে হবে। লাইসেন্স না নিলে বা তথ্য-কাগজপত্র দেখাতে না পারলে ৬ মাস পর্যন্ত জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। অর্থাৎ শাস্তি ৬ মাস পর্যন্ত, মানে ১ দিনও হতে পারে।
৪৬: কোনো ‘কোম্পানি’ যদি এই আইনের অপরাধগুলো করে তবে কোম্পানির যে সকল ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা আছে তারা দায়ী হবে।

এখন দেখা যাক, ‘হাওয়া’ ছবিতে ব্যবহৃত শালিক পাখির ক্ষেত্রে এই ধারাগুলি লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা।

আরও পড়ুন: ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ

৩৮ (১)-এর ক্ষেত্রে: পত্রিকার খবরে প্রাপ্ত দুই পক্ষের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, শুটিংয়ে একটা শালিক পাখি সত্যিকার অর্থেই খাঁচাবন্দি ছিল, অনেক দিনই ছিল। তবে শালিকটিকে সত্যিই জবেহ করা হয়েছে কিনা তা একটি ঘটনাগত প্রশ্ন। সিনেমার পরিচালক সুমন বলছেন, শালিকটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জাহজে পাখিটির ফিরে আসার দৃশ্য ফিকশন ছিল। আর যে মাংস খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা ছিল আসলে মুরগির। পরিচালক ছবির শুরুতে একটা সতর্কীতে (disclaimer) বলে দিয়েছেন যে, এই ছবিতে কোনো প্রাণীর ক্ষতি করা হয়নি (খাওয়ার দৃশ্যেও সতর্কীটা থাকা ভালো ছিল)। যেহেতু পাখিটিকে হত্যা করার দৃশ্য ছবিতে দেখানো হয়নি, এবং এই সতর্কীর পরিপ্রেক্ষিতে ধরে নেই যে, পাখিটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে মামলায় ৩৮ নম্বর ধারার অভিযোগ টেকার সম্ভাবনা খুবই কম।

৩৮(২) এর ক্ষেত্রে: যেহেতু মুরগির মাংস ব্যবহৃত হয়েছে, তাই এই অভিযোগও টিকছে না। তবে পাখিটি বাহ্যত ‘দখলে’ (আটক) রাখা হয়েছে।
আইনবিজ্ঞানে একজনের কাছে একটা জিনিস থাকাটাই ‘দখল’ নয়। দখলে বস্তুর উপর শারীরিক নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার মানসিক ইচ্ছে থাকতে হয়। যেহেতু এখানে ‘হাওয়া’-র কুশীলবদের পাখিটির কোনো ক্ষতি না করে ছেড়ে দেবার ইচ্ছে প্রতীয়মান, তাই দখল-এর যে আইনগত উপাদান তার উপস্থিতি নেই। কত সময় ধরে আবদ্ধ রাখা হয়েছে সেটা কোনো অনুঘটক নয়।

আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৬৬

৪০ নম্বর ধারার অভিযোগ এ ক্ষেত্রে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। বন্যপ্রাণী বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালনের জন্য লাইসেন্স নিতে হবে- এই ব্যাপারটি এখানে প্রযোজ্য নয়। আর ধারা ৪৬-এর ক্ষেত্রে, প্রশ্ন উঠবে যে, ছবির পরিচালক বা কুশীলবরা কোনো কোম্পানির লোক কিনা বা তাদের হয়ে কাজ করছেন কিনা। সম্ভবত না। যারা শুটিং-এ কাজ করেন তারা প্রত্যেকেই স্বাধীন, শুধু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের চুক্তি থাকে কাজ বা অভিনয় করার।

তবে কিছুটা অনিশ্চিত ব্যাপারটি। আর যদি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করতে হয়, সেক্ষেত্রে দেখতে হবে, সেটি কোম্পানির সংজ্ঞায় আসে কিনা, এবং তাদের কারো প্রত্যক্ষ সংশ্লেষ শালিকটি আটক রাখা বা মারার সাথে আছে কিনা। এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে নেই। আর প্রথম অভিযোগগুলো প্রমাণিত না হলে, ৪৬-এর প্রশ্ন অবান্তর হয়ে যাবে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশ, পাখি খাঁচায় রেখে হত্যা করার দৃশ্য দেখালে লাখো দর্শকের মনে হতে পারে এভাবে পাখিকে (বা অন্য বন্যপ্রাণীকে) মারা যায়। এটা একটা অনুমান। মানুষ কী ভাববে, এটা দেখার দায় বন পরিদর্শকদের (অপরাধ ইউনিট) নয়। তাছাড়া, মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে এই অভিযোগে মামলা করা যাবে এমন কথা ২০১২ সালের আইনে কোথাও বলা নেই। আর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিজ থেকে আইন বানাতে পারে না। আইনের বাইরে গিয়ে আইন প্রয়োগ করা যায় না। এটাই সায়েন্স। সমাজের মানুষকে আইন জানা, পরিচর্যা করার উপযুক্ত হয়ে উঠতে হয়।

আরও পড়ুন: প্রাধান্য পাবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

আরেকটি ব্যাপার। সিনেমাতে পাখি বন্দি বা খাওয়ানো দেখানোটাই যদি অন্যায় হয়, তবে ভিন্ন যুক্তিও দেওয়া যাবে। ছবিতে আসলে দেখানো হয়েছে নৌকায় সব খাবার যখন শেষ হয়ে গেছে, আর একজন মানুষ শুধু বেঁচে আছেন, সেক্ষেত্রে কমন ল ডকট্রিন (jus necessitatis) অনুযায়ী পাখি হত্যা আইনসম্মত হবে। মানুষ পর্যন্ত হত্যা এ ক্ষেত্রে আদালত গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠিত মামলায়। বস্তুত এটা যুক্তির বিষয় নয়। শিল্প বা সিনেমা বোদ্ধা হবার বিষয়। সুতরাং, ‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে আইনের যে ধারাগুলোতে অভিযোগ আনা হয়েছে বা হবে (এখনো চার্জ গঠন হয়নি), তার মেধা অনেক হালকা। এবং অভিযোগ না টেকার সম্ভাবনা বেশি।

তাহলে হওয়া টিমের কি কোনো ভুল নেই? হ্যাঁ, আছে। ২০১২ সালের আইনের ৯ ধারায় বলা আছে যে, খাঁচায় বা আবদ্ধ অবস্থায় রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হলে, বন্যপ্রাণীকে ‘উপযুক্ত পরিবেশে’ অবমুক্ত করতে হবে। শালিকটিকে হাওয়া টিম কোথায় অবমুক্ত করেছেন তা নিশ্চিত নয়। তবে গভীর সমুদ্রে শালিকটিকে অবমুক্ত করলে সেটি ‘উপযুক্ত পরিবেশ’ হবে কিনা তা তর্কসাপেক্ষ বিষয়।

আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে কমেছে মৃত্যু

‘হাওয়া’ সিনেমায় একটা সংলাপ আছে এরকম: ‘পাখিটি যদি ফিরে না আসে (ছাড়ার পর) তাহলে ধরে নিতে হবে তীর কাছে, আর যদি ফিরে আসে (জাহাজে) তাহলে বুঝতে হবে তীর অনেক দূরে।’ খুব রূপক একটা বাক্য। যেহেতু তাত্ত্বিকভাবে পাখিটি ফিরে এসেছিল তাই ধরে নিচ্ছি সেটি অনুকূল পরিবেশ ছিল না। এ ক্ষেত্রে, অনুপযুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করার জন্যে যে দায় তা হাওয়া টিমের উপর বর্তানো যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জাহাজে ফিরে আসার পর ঝড়ের মধ্যে যে পখিটি দর্শক দেখে তা আর প্রকৃত শালিক ছিল না। কম্পিউটারের মারপ্যাঁচ ছিল।

২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবির যে কথা উঠেছে, তার সারবত্তা কম। যে ধারাগুলোয় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সেখানে থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে শাস্তি বড়জোর এক বছর কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা। সুতরাং, ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ কাল্পনিক দাবি। যদি মামলাটি টর্ট আইনে (বিধিবদ্ধ আইনের বাইরের সাধারণ প্রতিষ্ঠিত ক্ষতিপূরণ আইন) হতো তাহলে অনির্ধারিত ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাদী এমন একটা দাবি করতে পারেন। তারপর আদালত সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যুক্তিসঙ্গত একটা ক্ষতিপূরণ ধরতে পারেন।

আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিলো বাংলাদেশ

কিন্তু ২০১২ সালের আইনের অধীনে মামলায় ‘আইনে অনুমোদিত অর্থদণ্ড’ (ধারা ৪৪) ছাড়া অন্য শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণের আদেশ দেবার ক্ষমতা বিজ্ঞ আদালতের নেই। যেহেতু এখানে ২০১২ সালের আইনের আওতায় মামলাটি করা হয়েছে, তাই ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের দাবি ধোপে টিকবে না। এবং ভুল মামলা করার জন্য উল্টো বাদী/ বন অধিদপ্তরের (বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট) শাস্তি হতে পারে (ধারা ৪৩)। তবে, দুই পক্ষ যদি আপসরফা করতে চায়, সেক্ষেত্রে আদালত দুই পক্ষের সম্মতিতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ধার্য করতে পারেন। সেটি নিশ্চয়ই ২০ কোটি নয়।

আর একটা অসুখকর আলোচনা আসে আমাদের সামনে। চারিদিকে মানুষ মারা যাচ্ছে দেদার, অন্য প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখছি আমরা, তাহলে পাখি নিয়ে কেন মাতামাতি?

কথাটি ঠিক হলো না। মানুষ মারা যাচ্ছে বিধায় পাখি (বা বন্যপ্রাণী) হত্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া যাবে না, তা ঠিক নয়। তুলনা করে এর বিচার করা যাবে না। মানুষের জীবনের জন্য এক আইন, প্রাণীর জীবনের জন্য আলাদা আইন। এবং প্রাণীকে (জীববৈচিত্র্য) বাঁচাতে হয়, মানুষের বাঁচার জন্যেই। ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রে শালিকের ব্যবহারের মামলায় মানুষের দু'টি অধিকার জড়িত: এক. জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের অধিকার এবং দুই. শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার অধিকার। দু'টো অধিকারের মধ্যে সুন্দর সাযুজ্য ও মিলমিশ ঘটানোই রাষ্ট্র ও এর নাগরিকের দায়িত্ব। শিল্প-সাহিত্যে প্রাণীর উপস্থাপন আইন মেনেই করতে হবে। সব দেশেই তাই হয়। বন্যপ্রাণী ব্যবহারের কোনো দৃশ্য থাকলে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেই করা উচিত এবং যথাযথভাবে সতর্কী সংযুক্ত করা উচিত। এই অবহিতি আবার ‘অনুমতি’ গোছের কিছু হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

আরও পড়ুন: চা পানেই বাড়বে আয়ু!

২০১২ সালের আইনে ‘পারমিট’ নামে একটা জিনিস আছে। পারমিটটা (ধারা ১০) হলো শিক্ষামূলক, চিড়িয়াখানায় ব্যবহার, আদিবাসীদের চিরায়ত বিদ্যার অনুশীলন বা বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে বন্যপ্রাণীর দেহের অংশ, মাংস, ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ/ দখল/ পরিবহন করলে সরকার থেকে পারমিট নিতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, স্বয়ং পাখি বহনের ক্ষেত্রে আইনের ধারাটিতে কিছু বলা নেই। তাই আইনের বর্তমানরূপে পারমিটের এই আইনি ধারা ‘হাওয়া’ ছবির ক্ষেত্রে খাটছে না। এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালাও নেই।

সিনেমা নাটকে প্রাণীর প্রতিমূর্তি ব্যবহারে অনুমতির সমস্যা দূর করার জন্য মামলা কোনো সমাধান নয়। অনুমতির বাঁধ তৈরিও কাম্য নয়। প্রথমে ২০১২ সালের আইনের অস্পষ্টতা দূর করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ছবি নির্মাতাদের জন্য বন অধিপ্তরের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনুমতির নামে শিল্প-সংস্কৃতির মুখ চেপে ধরা যাবে না। শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার ধারাটিও আমাদের জারি রাখতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য এই মামলাটা বাধা না হয়ে, শিক্ষণীয় হোক।

আরও পড়ুন: শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

পরিশেষে বলবো, নাগরিক হিসেবে আমাদের আরও পরিবেশ সংবেদী হতে হবে। মামলা হওয়াটা হুজুগ হলেও এবং না টেকার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও, জীববৈচিত্র্য উপেক্ষণীয় নয়। হাস্যকরও নয়।

লেখক: শিক্ষক, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ছুটির দিনে মুখর সোহরাওয়ার্দী

নুসরাত জাহান ঐশী: আজ সপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর প্রাণকেন্দ...

বিটরুটের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিটরুট হচ্ছে এ...

ভারত ছাড়লেন সালমান খান

বিনোদন ডেস্ক : বলিউডের ভাইজান খ্যাত সুপারস্টার সালমান খান। স...

শিব নারায়ণ দাস আর বেঁচে নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জাতী...

ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারিভাবে মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম...

নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৩৪ হাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অব...

তাপপ্রবাহ থাকবে আরও ৩ দিন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

শওকত আলী’র জন্ম

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অত...

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের এক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা