মতামত
বাজেট বিতর্ক: বিপক্ষে ও পক্ষে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯ লাখ টাকা

ড. এম এ মোমেন

বিপক্ষে

১৯২২ সালের বাংলা সরকারের বাজেট আলোচনা চলছে। ২৩ মার্চের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নবসৃষ্ট এবং ৮ মাস ২৩ দিন বয়সী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাজেটে শিক্ষা খাতে পৃথকভাবে ৯ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবের বিপক্ষেই আলোচনা বেশি, যুক্তিও বেশি।

সে সময় বাংলার গভর্নর জন লুমলে ডুনডাস, তিনি আর্ল অব রোনাল্ডশে। গভর্নরের কাউন্সিলের চারজন সদস্য : স্যার হেনরি হুইলার (নিয়োগ, রাজনৈতিক, পুলিশ, চার্চ ও ইউরোপিয়ান শিক্ষা); স্যার বিজয় চান্দ মাহতাব (ভূমি রাজস্ব, ভূমি অধিগ্রহণ বন, সেচ, তফসিলবহির্ভূত এলাকা); স্যার আবদ-উর-রহিম (বিচার, কারাগার, বহির্গমন, অভিবাসন, সীমানা নির্ধারণ); জন হার্বার্ট কার (অর্থ, পৃথক রাজস্ব, বাণিজ্য ও সংরক্ষিত শিল্প, নৌ)।

মন্ত্রী ছিলেন তিনজন : স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি (স্থানীয় স্বশাসিত সরকার ও জনস্বাস্থ্য); প্রভাস চন্দ্র মিত্র (শিক্ষা); নওয়াব সাইয়িদ নবাব আলী চৌধুরী (কৃষি ও গণপূর্ত)। তখন বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট (কার্যত স্পিকার) ছিলেন নওয়াব স্যার সৈয়দ শামস-উল-হুদা এবং ডেপুটি প্রেসিডেন্ট সুরেন্দ্রনাথ রায়। আর কাউন্সিলের সেক্রেটারি ছিলেন আইসিএস কর্মকর্তা সি টিনডাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব যথেষ্ট সমালোচিত হলো। বিপক্ষের এবং পক্ষের কয়েকজন লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্যের আলোচনা ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো। উল্লেখ্য, তখন কাউন্সিলের ভাষা ছিল একমাত্র ইংরেজি। উপস্থাপিত বক্তব্য অনূদিত হয়েছে।

ডাক্তার যতীন্দ্রনাথ মৈত্র

[ডাক্তার যতীন্দ্রনাথ মৈত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব ছাঁটাই করে ৪,০০,০০০ কমানোর প্রস্তাব দেন।]

শুরুতেই আমি স্পষ্ট করে জানাতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সামান্য শত্রুতাও নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঢাকা বিভাগের মানুষ। আমি ক্ষীণকণ্ঠে প্রস্তাবিত ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ কমিয়ে আনতে চাই।

আমি হয়তো ভুল বলে থাকতে পারি কিন্তু আমার মনে হয়েছে বাংলা সরকারের আর্থিক টানাপড়েন দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবিবেচকের মতো খরচ বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এতগুলো কলেজের শিক্ষাব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গত জুলাই মাসে এবং বিগত অর্থবছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯ লাখ টাকার সংস্থান করা হয়েছিল। ৫ মাইল ব্যাসার্ধের একটি এলাকার ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো হচ্ছে; যদিও ১৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে ভর্তি হয়েছে ৭২৪ জন। আমাদের আবার ৯ লাখ টাকার জোগান দিতে বলা হয়েছে।

আর প্রায় সব বেসরকারি সদস্যের আলমা ম্যাটার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একজন অবৈতনিক ভাইস চ্যান্সেলরের একক নিষ্ঠায় অতুলনীয় মর্যাদায় পরিচালিত হচ্ছে। আর পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধের এলাকার শিক্ষার্থীর জন্য দেশের সর্বোচ্চ বেতন ৪০০০ টাকা, প্রাসাদোপম বাড়ি, বহুসংখ্যক ভৃত্য, প্রায়শ কলকাতায় আসা-যাওয়ার জন্য দুটো ফার্স্ট ক্লাস টিকিট, কখনো কাউন্সিল সভায় যোগ দিতে কিংবা কাউন্সিল সদস্যদের পার্টি আর উৎসবে যোগ দিতে ব্যয়একজন বিনে বেতনের ভাইস চ্যান্সেলরের কি তা চলত না? আমার পূর্ববঙ্গের দেশপ্রেমিক সদস্যরা কী বলবেন, এই পদ অলংকৃত করার মতো যোগ্য মানুষ কি তাদের মধ্যে ছিলেন না? তাদের জন্মভূমি কি সম্পূর্ণ বিরান প্রান্তর হয়ে গেছে যে সেখানে ভালো ও যোগ্য মানুষ নেই? গত বছরও এ নিয়ে তিক্ত বিতর্ক হয়েছে, শেষ পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের সদস্যদের মন রক্ষা করার জন্য অনেকেই তাদের ছাঁটাই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

আমার সদস্য বন্ধুরা যদি অযৌক্তিক কথা না বলেন তাহলে জিজ্ঞেস করব তাদের পুত্র, আত্মীয় ও দেশবাসীর কত অংশ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আর সে অনুপাতে কত অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে? ঢাকা শহর বাদ দিয়ে আমি পূর্ববঙ্গের অন্যান্য জেলা ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের হিন্দু ও মুসলমান সদস্যদের কাছে একইভাবে জানতে চাই এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কতটা কাজে লাগবে? যদি বিশ্ববিদ্যালয়টি কেবল বাংলার একটি শহরের জন্য হয়ে থাকে তাহলে সে পুরনো প্রবাদ ‘কাট ইয়োর কোট অ্যাকর্ডিং টু ইয়োর ক্লথ’ ‘আয় বুঝে ব্যয় করো’ মেনে চলাই কি জ্ঞানীর কাজ নয়? এই কাউন্সিলের সদস্যরা যারা জনগণের অর্থের পাহারাদার হয়তো তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ১১০ জন অধ্যাপক রিডার, শিক্ষক আর ৭২৪ জন ছাত্র নিয়েই সন্তুষ্ট।

[ডাক্তার যতীন্দ্রনাথ মৈত্র আশা করেন যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ আসবে, সদস্যরা তার প্রতি আনুপাতিক হারে ন্যায়-বিচার করবেন। বাংলার শতকরা ৯০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে; তারা এবং গ্র্যাজুয়েটরা জোর দিয়েই তাদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন।]

রায় যোগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ বাহাদুর

[রায় যোগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ বাহাদুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ ছেঁটে ৩ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব দেন।]

আমি ঢাকা জেলার মানুষ, স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির (মন্ত্রী) পূর্বপুরুষরাও ঢাকার মানুষ, ফলে ঢাকার স্বার্থের প্রতি আমাদের আগ্রহ রয়েছে। আমি ঢাকারই একজন গ্র্যাজুয়েট, কাজেই এক অর্থে আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বলা যায়।

কাজেই আমি যা-ই বলব তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার পক্ষপাতদুষ্টতা বলে বিবেচনা করা উচিত হবে না। আমি সব সদস্যকে নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে বলব : যেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১ লাখ ৪১ হাজার টাকার গ্রান্ট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভারত সরকারের আবর্তক অনুদান। সরকার কখনো মনে করেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে।

বাড়তি ৪ লাখ টাকা অযৌক্তিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কী? এর দুটো কলেজ : জগন্নাথ আর ঢাকা কলেজ। আমি যথার্থ জ্ঞান ও নিরপেক্ষ বিচারে বলতে চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আর শিক্ষকের মান কলকাতার সবচেয়ে বাজে বেসরকারি কলেজটির চেয়ে কোনোভাবেই উন্নত কিছু নয়। প্রেসিডেন্সি কলেজ, স্কটিশ চার্চ কলেজ কিংবা সেইন্ট জেভিয়ার্স কলেজের চেয়ে অনেক নিম্নমানের।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি আর ফারসি ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০০ আর মোট সংখ্যা ৩০ হাজার। আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজ মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা জানতেন না যে প্রাচীন এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ দেশে লেখাপড়া, শিক্ষার ব্যয় সামান্য। ঢাকা কলেজের পুরনো আমলের দ্বিতীয় কাতারের অধ্যাপকদের দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের পদগুলো পূরণ করা হয়েছে।

স্যার আশুতোষ ঠিকই অভিযোগ করেছেন অত্যন্ত উচ্চবেতনে তার কিছু স্নাতকোত্তরকেও টানা হয়েছে (তাতে টাকার মচ্ছব হতে পারে, শিক্ষার উন্নয়ন নয়)। দৌলতপুরের দ্বিতীয় কাতারের আবাসিক কলেজগুলোর মান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কার্যত একই রকম। একমাত্র ইসলামি স্টাডিজ বিভাগ কলেজগুলোর ৫০ থেকে ১০০ ছাত্র টানতে পেরেছে।

মুসলমানদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সুশিক্ষিত আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী, ঢাকার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রবণতার নিন্দা করেছেন। আমার মুসলমান বন্ধুরা মনে করেন বঙ্গভঙ্গ রদ করার ক্ষতিপূরণ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়তারা ভেবে দেখতে পারেন এতে তাদের কী লাভ হলো।

তার চেয়ে ৫০০ উপযুক্ত মুসলমান ছেলেকে যদি মাসে ২০ টাকা করে পড়াশোনার বৃত্তি দেওয়া হতো তাতে পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজ পশ্চাৎপদতা আর ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি পেত। (তিনি মনে করিয়ে দিলেন ভারত রাষ্ট্র গঠনে এটাই বড় বাধা এবং মুসলমানদের কুসংস্কারের কথা উল্লেখ করেই বললেন যে, এটা তিনি এড়াতে চাচ্ছেন)।

যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে দু-একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী বা দার্শনিক নিয়ে আসতে পারত তাহলে সব দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে জ্ঞান অর্জনের জন্য ছুটে আসতসে ক্ষেত্রে এই ব্যয় যুক্তিযুক্ত বলে মনে করা যেত। ঢাকা বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এটা জানে বলেই মনে হয় না যে পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অধ্যাপকদের মধ্যে কজন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বের সমাবেশ ঘটিয়ে থাকেন। অন্যায় স্বজনপ্রীতি ও বন্ধুপ্রীতি ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালো ফলাফল লাভ করা থেকে বঞ্চিত করবে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে যথার্থই শিক্ষার আসন মনে করা যায় না, এটা শিক্ষার্থীদের লোভনীয় চাকরিপ্রাপ্তি এবং শিক্ষকদের ডিগ্রি পদোন্নতি ও অর্থাগমের আসনে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৫ লাখ টাকা আবর্তক অনুদানের বেশি কিছু পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। তবু আমাদের অর্থনৈতিক সংকটের এই বছরে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য আরও ১ লাখ টাকা দিতে সম্মতি দেব এবং বাকি ৩ লাখ টাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার প্রস্তাব করব।

[যোগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ বাহাদুর তার বক্তব্যের শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অকার্যকর সিন্ডিকেটের নিন্দা করলেন এবং আভাসে ইঙ্গিতে এটাই বললেন, এক ব্যক্তি (আশুতোষ মুখার্জি) শাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পুত্র, তার জামাতা এবং তার বংশধররা তাদের জায়গা করে নিয়েছে, তবুও যেহেতু তা অনেকের ‘আলমা ম্যাটার’ সুতরাং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালো না বেসে উপায় নেই!]

অজয় চন্দ্র দত্ত

[অজয় চন্দ্র দত্ত ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব ছেঁটে ২ লাখ টাকা কমানোর কথা বললেন।]

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে একটি কথাও বলব না। এত দিন বাংলায় মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল; বাংলার জনসংখ্যা ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার প্রায় সমান বলে আমরা জানি, সেখানে ১৩টি প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের মাত্র একটি। কাজেই ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আমি সমর্থন করি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা রয়েছে।

তবে যেহেতু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এখন থেকে অন্তত দুই লাখ টাকা সাশ্রয় করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহার করা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি, আমি এই কাউন্সিলের সদস্যদের জানাতে পারি যদি সেখানে আশু আর্থিক সহায়তা প্রদান করা না হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আমাকে বলা হয়েছে ঢাকার টাকা কাটা হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভ হবে না। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়।

[অজয় চন্দ্র দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা করার অনেক যুক্তি ও উপায় দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৯ লাখকে ৭ লাখে নামিয়ে আনার জোর দাবি জানালেন।]

বাবু সুরেন্দ্রনাথ মল্লিক

[বাবু সুরেন্দ্রনাথ মল্লিক ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব থেকে ২ লাখ টাকা ছেঁটে ফেলার নতুন প্রস্তাব দিলেন।]

যত না টাকা কর্তনের জন্য তার চেয়ে বেশি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমি এ প্রস্তাব এনেছি। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থনে এই হাউজে আমিই ছিলাম প্রথম বক্তা। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়-চমৎকার ধারণা। আমাদের সময় তা পাইনি।

তবে চার্লস কিংবা টাউনির মতো শিক্ষকদের কাছ থেকে তাদের শ্রেষ্ঠটাই নিয়েছি। হিন্দু ও মুসলমান একসঙ্গে পড়াশোনা করবে, একসঙ্গে বেড়ে উঠবেভারতের সংহতির জন্য এটাই দরকার। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপচয়ের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ৎভাইস চ্যান্সেলর মাসে কার্যত পাচ্ছেন ৫২০০ টাকা। সব পদেই বেতনের আধিক্য। বাংলা সরকার ভারত সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দফায় দফায় ৬০ লাখ টাকা প্রদান করবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ও কলকাতার মতো একই ভুল করছে! কেবল কলা আর কলা, এর বেশি কিছু নয়। ভোকেশনাল কিছু নয়। কেবল কলা দিয়ে আজ হোক দুদিন পরে হোক বিশ্ববিদ্যালয় ডুবতে বাধ্য। (কাজেই তার মতে অর্থহীন ডিগ্রির জন্য, কেবল ডিগ্রিধারী হওয়ার জন্য অর্থের এমন অপচয় অবশ্যই আপত্তিকর এবং তা অনুমোদন পেতে পারে না।)

রাধা চরণ পাল

[তিনি বললেন, প্রস্তাবিত ৯ লাখ থেকে ১ লাখ ছেঁটে ফেলা হোক। মনে কোনো বিদ্বেষ বা ঈর্ষা নিয়ে তিনি এই প্রস্তাব করেননি। পূর্ববাংলার বন্ধুরা তাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছেন এবং পেয়েছেন। এত দিন কি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববাংলার প্রয়োজন মেটায়নি?]

এটা স্বীকার করবেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ নেওয়া পূর্ববাংলার মানুষই তো পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ের দিকে তাকালে আমার চোখে পড়ে পর্বতসম অপব্যয়। কৃষি হোক, প্রযুক্তি হোক, শিল্প হোকএই টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের বিষয়ে খরচ করতে পারত। বিএ, এমএ পাসের জন্য তো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছেইবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য সৃষ্টি হতে পারত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তাহলে এই বাস্তবজ্ঞানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ছেলেও ঢাকার আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসনের জন্য ছুটত। (যেহেতু তা হয়নি, সেজন্য প্রতীকী ১ লাখ টাকা কর্তনের প্রস্তাব তিনি দিয়েছেন। এই অ্যাপিসোডটিতে যা লিখিত ও অনূদিত হয়েছে তা ঐতিহাসিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত দলিল পার্লামেন্টারি প্রসিডিংস থেকে নেওয়া হয়েছে। কলকাতার হিন্দুদের মধ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেনএমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে হিন্দুরা অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও ঢাকার হিন্দু অধিবাসীরা ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে আদৌ ভালো চোখে দেখতেন না।’

এ বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রমেশচন্দ্র মজুমদারের রচনা : ‘প্রথম থেকে তাদের (হিন্দুদের) মনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খুব বিদ্বেষভাব ছিল। তার একটি কারণ যে হিন্দুরা কোনো দিনই ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পছন্দ করেননি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকাই তাদের ইচ্ছা ছিল। সুতরাং গভর্নমেন্ট যখন প্রস্তাব করল যে মুসলমানদের সুবিধার জন্য ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, তখন মুসলমানরা যে পরিমাণ খুশি হলেন হিন্দুরা সেই পরিমাণে অসন্তুষ্ট হলেন। তাদের অনেকেরই বিশ্বাস হলো যে, এও আরেকভাবে বাংলাদেশকে দুখ- করা হলো। -সংক্ষেপিত

লেখক সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামনিস্ট

[email protected]

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দুপুরের মধ্যে ১০ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ দেশের ১০টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্ট...

ভোলায় উপকূলজুড়ে কোস্টগার্ড মোতায়েন  

ভোলা প্রতিনিধি: আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা...

সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু কাল 

নিনা আফরিন, পটুয়াখালী: আগামীকাল...

নজর কাড়লেন কিয়ারা

বিনোদন ডেস্ক: কান চলচ্চিত্র উৎসব...

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধান...

রাইসির মৃত্যুতে আমরা জড়িত নই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ...

নোয়াখালীতে মদসহ ২ যুবক গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি: নোয়াখালীতে ৯৬ বোতল বিদেশি মদসহ ২ যুবককে গ্র...

ট্রেনের ধাক্কায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু 

জেলা প্রতিনিধি: নাটোরে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মো...

কাল ইভিএমে ২৪ উপজেলায় ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল উপজেলা পরিষদের ২য় ধাপের সাধারণ নি...

বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ 

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজার মনিটরিংয়ে জ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা